Posts

Showing posts from 2020

ধ্বস

অনেক দেখেছি আর  দেখে যাচ্ছি— আমরাও তো হাতে পায়ে বাঁধা রক্ত ঝরতে ঝরতে কণ্ঠে মরে গেছে স্বর তোমার আজকে, কাল আমার বিপদ কী করব? কী করছি— করেই বা কী লাভ? জমক ফুরিয়ে গেলে ধ্বসে যায় পুরোনো সংবাদ লিখব না লিখব না করে  লিখে ফেলছি তা'ও কী লিখব! রাষ্ট্র তুমি কাদের বাঁচাও

সই

এসেছে বলেই আমি যেতে পারছি না গুপ্ত যত পথ সবই খোলা শুধু একটা মুখ মন বলা আড়ম্বর হবে তাকেই সাজাব বলে নিজের'ই নিজের কাছে দেনা কে আপন, কে না— আস্তে আস্তে ভেসে উঠছে সব না ছোঁয়া বাস্তব হেস্তনেস্ত হোক এইবার দেখি কে শুধুই আমার; কে সবার কাছ থেকে কেড়ে নিচ্ছে মন কে'ই বা জেনে ফেলছে না বলা বারণ ওই যে, ওই যে, ওই— দু-হাতে সমুদ্র ধরে কাছে আসছে জন্মান্তর সই

অভিশাপ

ছুঁয়েছিলে, ছুঁয়েছিলে দূর থেকে হোক তবু কোনো নীরব মিছিলে— বিধাতার সব রং— সব'ই যেন এখন ধূসর এক একটা অভিশাপ দূর থেকে ভেঙে যায় ঘর৷ কার গলা— কোন স্বর— মনে নেই এখন কিছুই মুঠো মুঠো দীর্ঘশ্বাস জড়ো হলে পাশ ফিরে শুই

ফেরা

ছুটে ছুটে কত পথ, খানা-খন্দ, বিষাদযন্ত্রণা কোথায় যে হারিয়ে গিয়েছ... যত কিছু স্তব, স্তুতি তোমার'ই তো সব নিঠুর বাস্তব তোমাকে ফিরিয়ে নিল—  অকস্মাৎ, অগ্নির পরশে কোথাও জলধী কাঁদে বারিষের অপেক্ষায় বসে৷ হে বিশ্বাস ফিরে এসো ফিরে এসো— ফিরে এসো— দাড়িয়ে যেওনা মাঝ পথে তুমি ছাড়া নগন্যই এ জীবন, জীবনের ব্রতে৷ আরো একটু কাছে এসো, ছুঁয়ে দেখো... স্বভাবের আমিও তো দোষি— সবটুকু দেব বলে  সমস্তই হারাতে এসেছি

গণ্ডি

আগুনের ভয় আর বিশ্বাসের কোপে ছুটে যাচ্ছি, মরে যাচ্ছি, বিনাশের মতো বিতৃষ্ণার লাশ ঘুরছে হাসির মোড়কে তুমি সেই ভরসা যা হয়নি বিরত যত শিক্ষা যন্ত্রণার ভারে পূর্ণ হতে ঠেলে দেয় আমাদের পরীক্ষার তীরে তোমার'ই আদর্শ যাকে পারিনি হারাতে চূর্ণ হয়ে আজও আমি পা ধুচ্ছি হীরের হে ঈশ্বর, আরও আরও শক্ত করো আরও এত শক্ত, এত শক্ত... না ভাঙি আঘাতে বোধ নিজে গণ্ডি ভাঙছে, ভেঙেছে বিকার'ও জীবনে দাদুর পায়ে প্রণাম জানাতে

ঢেউ

সমস্ত ভিজিয়ে দাও                 ঠোঁটে ঠোঁটে ছিঁড়ে দাও জামা... সে সব আদুরে বকা আজও কোনো স্মৃতিঘরে জমা৷ এত কাছাকাছি আসা—  যেন কোনো             অান্তরিক প্রকৃতির ঢেউ তোমার মতন করে এত কাছে আসেওনি কেউ আমার মতন করে এত ভাল বাসেও না কেউ...

খোঁজ

কেটে যাচ্ছি, হেটে যাচ্ছি দৌড়ে যাচ্ছি জালের অন্দরে হাঁপানি জড়িয়ে এলে কতদিন যুদ্ধ চলতে পারে? আমাদের যুদ্ধক্ষেত্র পথ আর ঘর অস্ত্রকে ঢুকিয়ে রাখি বাণীর ভিতর যাত্রাটুকু পাওয়া, আর শত্রু বলতে শোক অভ্যাসের ঘরে থাকে জীবনের চরিত্র বাহক এই'ই ভাবছি, ছিঁড়ে যাচ্ছি, জুড়ে যাচ্ছি শক্ত করছি খোঁজ— নিজের'ই ভেতরে এক পিতাকেই জন্ম দিচ্ছি রোজ৷

তূণ

ক্ষমা করো, ক্ষমা করো আমাকে হে কৌতুহলী মন গোপন দুয়ার থেকে তুলে আনে বিরহ কথন যে যার বাঁকের মত যায় নদীর ভিতরে নদী জল দিয়ে বালিকে লুকায় কতখানি অপরাধ জমা রাখে সাধাসিধে তূণ অবসাদ ঘিরে এলে সতের'ই জুন স্মৃতির ভেতর থেকে টেনে আনে পুরোনো আগুন৷

ফাঁদ

কিছু কি হারিয়ে গেছে? হেসে ফেলছে মূক ব্যথার নিষেক স্থিতি কেউ তো শুনুক আমাদের পাশাপাশি ঘর পাশাপাশি অচেনা শহর অভিভূত দৃষ্টির আড়ালে গূঢ় অন্তর্দহন ক্ষতচিহ্নে ক্রমাগত ভাবনার ঘায়ে ঘায়ে খাদ বিষাদের মৌনজালে মর্মবিদারণ মত্যুও এমনই এক নিবৃত্তির ফাঁদ জীবন ফস্কে যাওয়া শ্যাওলার মতো অবসাদ৷

চোখ

বেঁচে আছ  বেঁচে আছি মশার ডিমের মতো চোখ ঘুমের আড়াল থেকে মানুষের মৃত্যু দেখা হোক৷ প্রাকৃত দুর্যোগ যেন আনকোরা প্রেমিকার গ্রীবা সামান্য লেহন করে যথেচ্ছ সম্ভোগ বেঁচে আছ  বেঁচে আছি? মশার ডিমের মতো চোখ

সোনালী সোরেন

কতটা চুলোয় গেছি— চুল থেকে নেমে যায় চোখ পাশাপাশি বসে ছিল হৃদয়ের বিরহ ভক্ষক৷ সাক্ষাতের সাক্ষী থাকে বারিষি দুপুর মনের সন্তুরে জমা শ্রোতাহীন শূন্যতার ঝড় পাশে বসে নেমে যায় নিঃশ্বাসের স্তর মাটি ও পাতার গন্ধে পত্রঝরা গাছ চোখের মণিতে প্রিয় ঋতুমতি নদীর বাতাস খোলসে গুটিয়ে রাখি বিহঙ্গের অলেখ্য কবিতা গূঢ় অনুভব, আত্মপ্রতারণা, মৃদু শব্দব্যয় সে দিনের উহ্যগান জীবনের সীমিত অধ্যায়৷ অমলতাসের তলে আমাদের স্বপ্ন লেনদেন বিমূঢ় অরন্যটিকে ডানা দিয়েছিল ছেড়ে আসা সোনালী সোরেন৷

মরীচিকাবন

বর্ধমান লোকালের কাঠখোট্টা বেদী লিওনার্দো ভিঞ্চি এক অদৃশ্য আবহে সময়কে ক্যানভাস ভেবে এঁকে যাচ্ছে অজস্র দর্শন আমাদের দেখা— ঠিক কোনো এক পিশাচ প্রহরে  দংশনের সূত্রপাত কল্পনাশহরে উদগ্র, ভ্রমণ করে গোপন স্তম্ভন শ্যামলী ঠোঁটের তেজে খেয়েছিল মরীচিকাবন৷ স্তিমিত আগুন থেকে ফুলকিটুকু চিনে নিয়েছিলে ভাষার সাঙাত, যার দূরাভাষে ঘাত প্রতিঘাত— কিঞ্চিত মূহুর্তটির জন্ম দিল আমাদের সংযত দহন সেই শেষ, শেষ ট্রেন দরজায় অন্তিম সাক্ষাৎ জীবনের খানা খন্দে এখনও স্থবির হয়ে বসে আছে ইরা দেবনাথ৷

বিচ্ছেদ

কিছু পূর্বাভাস ছিল, আর ছিল কিঞ্চিত বিরোধ প্রতিটি ধ্বংসের নিচে জমা থাকে নিরাকার ক্ষোভ ত্যাগী মোম নীরবে বিদ্রোহি কে কার উমান দিয়ে তুলে নেবে বিজয়ী মুসকান প্রতিটি ওজরে ঢাকা ফাটলের ধ্বণি বুনেটি শিথিল, পাখি থেকে যায় অবয়ব ওড়ে— ঝড় ওঠে, ধাক্কা দেয় ঠোঁটগুলি কাঁপে তবু কোনো শব্দ নেই বিচ্ছেদ সংলাপে

বিপথ

নিবিড় শিল্পের মতো জ্যোৎস্না ঝরা স্রোত সে আমায় সঙ্গ দিয়েছিল বিমুগ্ধ শ্রোতার ধ্যানে মধুমতী নদীর সঙ্গীতে ভাসমান হৃদয় চমকালো ইন্দ্রিয় বেকুব হলে স্বপ্ন দেখে বিকল বেতার বহুকাল অন্ধকার গ্যালফিমিয়া বীথিকার নুয়ে পড়া পথে ডাকে উলঙ্গ বেদিনী শাড়ির ভেতর কত বিস্ময়ের ঢঙ গোপন গন্ধের ডানা শুঁকে নিতে নিতে ক্ষণিক বিরামে— লম্পট পথের যোগ সাথে আনে বিরহ প্রবল সহজীবনের কোনো পথ নেই জানি প্রৌঢ়ের শিবিরে স্মৃতিরা এমনই মায়াজল— স্পর্শ পেলে নড়ে ওঠে হৃদবৃক্ষখানি৷

মরশুমি ( ডায়রি )

আমাদের দেখা হয় গীটারের স্ট্রিং-এ বারিষি মরশুমে ওঠা-নামা চোখ চোখ থেকে পায়ে বিরহ থিতিয়ে আসে নতুনের গায়ে নিজেরই ভেতর নিজে পেরিয়েছি পথ মনের ভেতর ছায়াছবি যে দেশে হৃদয় মেলে— সঙ্গ দিলে রবীন্দ্রানুরাগী ক্ষয়ের ভেতর ক্ষয় ফোনালাপে বিছানা স্খলন কোথাকার তিল! ভেবে ভিজে ভিজে উদ্বেল যৌবন সন্দেহের তারে ঝোলা দৃষ্টিকোণ ঠিকানা বিহীন দূরত্ব সাপের মতো গোটায় আস্তিন তবু তো সম্ভোগ করি স্বপ্নাবিষ্ট ঘরে প্রেম বিবেচক হয় অন্তরালে, বিচ্ছেদের পরে৷

মোনালিসা সাহা

জুড়তে গেলে উড়ে যায় ঠোঁট থেকে কথা সহসা নীরবতার ডানা ঘেঁষে খসে পড়ে তারা অন্তরীণ ব্যাগ্র দ্বারে বাতাসি প্রহরা আমাকে অধীন করে নিয়েছিল তার তিন ফুট দূরত্ব সীমার পানকৌড়ি নেমে গেল জলে হায়! সে জল যদি হতে পারতাম রাতের তারার মতো ভেজা চুলে আলোর বোতাম হঠাৎ কেমন ঘোরে ফেলে দিল একরোখা দোঁহা— কালিন্দীর জল ঠেলে উঠে আসা মোনালিসা সাহা৷

ফুঁ

জন্মেছি যে জলে তার কী রং'ই বা ছিল দিনান্তে রঙিন হয় ধূলো— পথে পথে মৃদু কথা, ঠাট্টা ও বিদ্রুপ; বাতাস দূরত্ব দিলো, নির্বোধের সঙ্গে এলো 'ধূপ' পোশাকে উৎসব ফোটে,  সিড়িতে জড়িয়ে আছে ফাঁদ আকাশ বোঝেনা কোন গ্রন্থে ঢাকা কতটা গরাদ৷ ধোঁয়াকূণ্ডে বোধ ওড়ে সংঘের চুরুটে ফুঁ— দিয়ে দেখেছি ঔঁ এর মাথায় ঈদ চাদ হয়ে ওঠে৷

ঝড়

কয়েদি বুক ঘেরা স্বপ্ন হননের আত্মঘাতী ঝড়ে পদার্পণ নিঃস্ব, বিধি হারা বিরহ সমাদরে বারিষ জমা ঘরে সংবরণ কে দিক হারিয়েছে, উড়াল পুল ধরে মেঘের স্মৃতি কথা দিচ্ছে ডাক ওরা তো পরিযায়ী ঘুরতে উড়ে আসে আকাশে প্রেম হীন মনস্তাপ এমন মঞ্চ কি কোথাও ধরা দেবে সমূহ শ্রোতা যার বিশ্বময়? গত উপন্যাস সমাপ্তির শেষে বিরহ চোখ ছাড়ে, স্বপ্ন নয়৷ যা কিছু পুষে রাখা দরদী গৃহকোণে পোষ্য নয় শুধু, আমার ধন ধ্বংস শেষ হলে জগৎ খুঁজে ফেরে এমন চুলচেরা বিশ্লেষণ শেষের নীরবতা বিরহী বাধ্যতা যে যার মনে গাঁথে ব্যথার গান ব্যথাও পরিযায়ী, পদ্ম খুঁজে পেলে হৃদয় শুরু করে নিত্য স্নান এত যে ঝোড়ো হাওয়া পেরিয়ে ফিরে আসা এ কি জীবন নয়? ও মাই লর্ড তবুও চোখ ঝরে শব-স্বয়ম্বরে দীর্ণ ঘরে এলে তোমার ঝড়৷

শলাকা

কে তুমি গহ্বর থেকে ডেকে ডেকে ফিরে গিয়েছিলে পাথরে আছাড়ে বুঝি নষ্ট হল ফুল! রং কে বসন্ত ভেবে চুম্বনের আগে বিধির সড়ক ভুলে নিপাট যৌবন  লণ্ডভণ্ড মেঘ আর অন্ধকার ফেনা তোমার স্মৃতির ভার এতটাই বেশি সরাব সরাব করে সরাতে পারছি না৷

বোধক্রম

ভুল করে বেরিয়ে এসেছি, এই পথ কার ঘরে ঢোকে? নিজেরই দর্পনচিত্রে দুর্বোধ্য গহন হেটে যাওয়া কল্পিত বাগান জড়ভূমি, ইতিহাস দ্বাররুদ্ধ তাই— অচেনা সাগরে এলে লহরীকে সঙ্গী করে হাওয়া স্থায়ী নয়, স্থায়ী নয় এ শরীর, কলহ ও পীড়া দোষারোপ সীমিত আক্ষেপ দংশনকে ফেড়ে ওঠো বোধ তোমাকেই পথ ভেবে চেয়ে আছে শীর্ণ বিবাগীরা৷

ভ্রম

সেভাবে দেখিনি কোনো শরতের পাখি মিলিত চোখের অনুভবে বিভাবরী চাঁদ, অনুকম্পাহীন এক পাহাড়ি সংসার এই আছে, এই নেই— মেঘসিক্ত রাস্তা থেকে নিঃশব্দে চিৎকার অথবা পেলিং রাতে অনুরক্তে আলিঙ্গনরত হাটাপথে ক্লেশ বিস্মরণ— এ জীবন স্বপ্নবৎ হলে এত কিছু স্বপ্ন দেখে লোক?

রেললাইন

জলকে বলি আমার ঘোড়া দৌড় লাগালাম কিডনি ছাড়া মনস্তত্ব এমনই এক লকডাউন চোখ ফিরিয়ে দেখছি না আর ভবিষ্যতে কী অন্ধকার এখন আমার হৃদয় মানে মালান-বৌ বিষয় যখন বাঁচতে দেখা ভুলুই গাঁয়ের ছোট্ট শিখা পায়ের তলায় পিচ গলে যায় তার নামে লাঠির ভয়ে রাস্তা ছাড়া হাজার হাজার বাস্তুহারা বৃষ্টি চোখে জড়িয়ে ধরে রেললাইন অখাদ্য আর জলের ঢেকুর দারিদ্রতার শৃঙ্খলাপুর আড়াল করে নামিয়ে যাচ্ছে এরোপ্লেন মেঘের কাছে আর্জি জানাই সঙ্গে ভেজার ধৃষ্টতা চাই এমন সময় শঙ্খ ঘোষই বিরাম দেন৷ ঘরের পাশে পুকুরখানা হাসের পেছন বেড়াল ছানা ভরসা আমার সরকারি গম, রেশন ডাল ভাগ্য মাফিক আসছে হাতে বেশিরভাগই স্টোরখানাতে মহমারীর যুদ্ধ জানে পেটের ঢাল ঝাপ পড়েছে কারখানাতে বাচ্চাছেলে বাগিয়ে হাতে ভারত মাতার রোদের নিচে সোনার দিন জীবন মানে লুকিয়ে রাখা অপূর্ণতা, রক্তেমাখা.. মহামারীর ছাপ শুকানো রেললাইন

পরিচয়

এতখানি ঝড় আছে তোমার আঁচলে! সব মেঘ সরে যায় ক্ষণে কোলের অধিক কোনো মনোরম পর্যটন নেই তেমন বজ্রও নেই যে দুধের সমানে দাঁড়াবে এত যে উঠলাম বেড়ে— বুদবুদের কণা... তুমি না থাকলে বিশ্ব নিজেকেই চিনতে পারে না৷

ফেলে আসা রং

১) আরও কত কাছাকাছি  আরও কত চোখের গভীরে আবীর না হাতের নরম কে— বেশি বসন্ত মাখালো দু-গাল ছোঁয়ার পরে শহরের দৃষ্টি ফিরে এলো ২) ওপরে কৃষ্ণচূড়া তার নিচে রাধার আবীর অধর ছোঁয়ার পরে নাম জিজ্ঞেস করলাম এখন তা মনে নেই আর সব শব্দ স্থায়ী নয় সময় পেরোলে ঝাপসা হওয়া অবয়ব এতদিন পরে— স্মৃতিচারনের পথে ফেরার সময়   অনাবিল শান্তি নিয়ে এলে ৩) তখন কতই হবে— বছর পনেরো কথা বলা মানে প্রেম, ছোঁয়ায় সম্মতি লাল আবীরের কাছে ফেলে আসা প্রাণ কিশোরের প্রথম প্রণতি পনের বছর পর তাই মনে হয়— সেদিন সে হাত দুটি আমার'ই তো ছিল রং দিয়ে ছোঁয়ার সময়৷ ৪) দোল তুমি দূরে থাকো আজ ফুলের দেরাজ থেকে উড়ে যাওয়া রঙিন পাখাটি ভুলে গেছে সংস্রবের দিন পৃষ্ঠা থেকে মুছে যাওয়া শব্দের সংসারে বেমানান মিলনশিঙ্গার দূরের আলোয় নৌকো দড়ি ছেঁড়ে নোঙর বাঁধার৷ ৫) এই আসে- এই ওড়ে- দূর থেকে রঙের হাওয়ায় আমাদের পরিখার বাষ্পায়ন স্পষ্ট দেখতে পাই৷ চোখে চোখে বদলের স্বাদ ঋতুর মতই তার স্বভাব পাল্টায় যেভাবে আবীর দোল-এ ফি-বছর গাল বদলে যায়৷

প্রকৃতি

অব্যক্ত মেঘের ফরাশে ধুলো জমা গাঢ় অভিমান থম মারা অসাড় প্রতিমা কাছে ঘেঁষা বারণ তখন,  অথচ না এলেও ঝড়ের বন্যশঙ্কা ঘাপটি মেরে থাকে৷ কাছাকাছি এলে পড়ে বাজ আর উড়ে যায় ধুলো৷ কারা যেন পুরুষ প্রকৃতি! ছেলেখেলা করে মোলায়েম রাস্তা ধরে দৌড়ে যায় মেঘ থেকে মেঘের চাদরে... অভিমান বিশ্বাসের, অবিশ্বাস দিক ভুল করে৷ অনাস্থা যাদের ধন, কোনোদিন শুধিয়ে এসেছ কত পাথরের বোঝা দিন রাত গুঁড়ো হচ্ছে সে পথের বুকে... তোমার সরলরেখা চিরকাল সোজা রাখবে বলে; ঝুঁকে দুর্গম পাথার ধরে থাকলে যেতে চাই, যাও বললে ফিরি বারবার৷

মন্দা

শ্রদ্ধার দ্বারে পিছলে পড়েছি ক্রমে আয়নার চোখে এক পিঠ ভাবি সত্য সত্য খুলেছে হৃদয়ের প্রয়োজনে ওপারে বাগান সুন্দরে সম্পৃক্ত সহস্র রাত তিরিশে হারানো বন্যা এক মেঘ কথা হারিয়ে ফেলেছি শূন্যে সম্পর্কের নীরবতা মানে সন্যাস অগোছালো দেখে ভেবেছি ওখানে মন নেই কাশ্মীর ফেলে ছুটে ছুটে গেছি কান্দার মেকি গৃহকোণে স্বার্থের খানাখন্দ মৃত সৌরভ, মরুভূমি ব্যাপি ধান্দা প্রেমহীনতায় কপটের বাহুবন্ধ নতুনের হাতে স্বপ্নের প্রাণসঞ্চার অতীতের পাখি বিরহের বুকে শিশ দেয় ভালবাসা শ্রেণি সত্যের মতো মন্দা প্রেমই সত্য, সফলতা যত মিথ্যে

প্রসঙ্গ রবীন্দ্রনাথ

যখনি হোঁচট খাই, পাতা ধরে উঠি বারবার কস্মিনকালের এক পুরোনো ইঞ্জিন, তার বিশুদ্ধ ধোঁয়ায়...  নিভেছে আগুন,  মৃতপ্রায় পথে পথে জন্ম দেয় নতুন হাওয়ার৷ তোমাকে পড়ব বলে পাতলা হয়ে আসে অন্ধকার৷ সভ্যতা পেরিয়ে এল প্রকৃতির শব৷ নিশ্ছিদ্র নীরব বহু পাহাড়ের মনে  গুঁড়ো গুঁড়ো শব্দের বরফ হৃদয়ের অগ্নিনির্বাপক৷ প্রকৃতির প্রেম যেন প্রেমের প্রকৃতি... লেখনীর স্তরে স্তরে অসীমের স্তুতি গানের বিন্যাস ইহজীবনের জাতিয় সড়ক তোমায় পেরোতে গেলে ভেঙে যায় বিশ্বের শপথ৷

জিন্দেগিকিতাব

এমন দুর্দিন কেন ভূতপূর্বকাল হতে হঠাৎ এসেছে? আয়না হাতে দাঁড়িয়ে রয়েছে বর্তমান৷ আফ্রিকান ডেসার্টের মৃত্যুদূত যেন এতদিন গোপন রেখেছে মৃতপ্রায় অনুভব ও তার বিস্তার৷ বহু পাথরের স্তুপ জমা থাকে পর্দার আড়ালে, কেউ তাকে নগ্ন করেনা... পাথুরে যৌবনও এত সিক্ত হওয়ার বাসনা পুষে রাখে! অন্ধকারে না হারালে বোঝাই যেত না৷ আকাঙ্খার ঝড় আজ এমনই স্তব্ধ যেন শতাব্দীর শেষ প্রলয় এখুনি আসবে আর ছারখার করে দেবে জগতের মায়া৷ এই ভাবি, বসে থাকি, সময়ও আমার সাথে সঙ্গ দিচ্ছে আজ.. এককাপ কফি আর বৃষ্টির জানালা; জিন্দেগিকিতাব৷  "ভালবাসাদের কোনো গণ্ডি থাকে না" এমন ফাজিল কথা নির্বোধের বাণী৷ গণ্ডি থাকে, নিজস্ব পরিধির গণ্ডি, যেখানে সবাই এক কেন্দ্রবিন্দু; আর বৃত্তটিকে যতই ঘোরাও কেউ কাউকে ছাড়তে পারে না৷ আবার এখানেই বসে লেখা হয় মৃত্যুর শুষ্ক পরিভাষা৷ আঁকড়ে ধরায় জোর না থাকলে গাছও নির্বিচারে ফেলে দেয় অনাবাদী আম৷  ঘরের ভেতর বসে মরুভূমি না পেরোলে ভালবাসা আসলে কী বোঝাই হত না৷ এভাবে নিজের কাছে এক ঘটি জল চেয়ে নিই, চোখে মুখে ঝাপটা দিয়ে সে জলের আয়নায় নিজের নতুন রূপ দেখি৷ পায়ের আঙুল আজও নেচে ওঠে সন্ধ্যাকালে রবীন্দ্র সঙ্গীতে..  "কী সু

ঝুল

আমাদের হাত আমদেরই কাছে থাকে আমাদের হাত বহুকাল গেছে বাঁধা কেউ ধরে ফেলে শূন্য হবার ফাঁকে আরও শূন্যতা নিয়ে আসে প্রত্যাশা আমরা যতই আমি'র মধ্যে বাঁচি আমার ভেতরে আমি হতে থাকে বড় বড় হতে হতে ঢেকে ফেলে বোধ মাটি বিভেদী নীরব ফাটলের মতো গাঢ় প্রশ্নেরা আরও প্রশ্নের ঘরে ঢোকে আমার প্রশ্ন আমিহীন আর নয় উত্তর বসে নিশ্চুপ ঘেরাটোপে কে কার জন্যে? জিজ্ঞাসা পড়ে রয় হৃদয়ের বই নীরবেই পড়ে থাকে না পড়ার ঝুল এ দিনে দিনে বাড়ে বোঝা আমরা যেদিন বেছে নিই সন্ধ্যাকে রাতে শুরু করি সূর্যের আলো খোঁজা... এখানে আঘাত চিহ্ন ছাড়েনা কিছুই অনেক পেছনে ধোঁয়াপ্রত্যাশা গান নীরবের দ্বেষ নরকের চেয়ে নীচু স্পর্শের চেয়ে বড় নয় অভিমান৷

মুক্তি

ভিন্ন দেশ, ভিন্ন সম্প্রদায়, জাতির মিলন রূপকথার বেদবাক্য নয়৷ নদীর প্রবাহ নয় যে সমুদ্রের বুকে তার সন্ধিগানে নাচতে নাচতে বসন্তকে ডাকে৷ দক্ষিণের রাগ আর উত্তুরে চেরাউ অঙ্ক কষতে বসেছিল এক পেয়ালা মদ আর কফির আড্ডায়, জমেনি৷ নতুন কোন পন্থা বের করতে চেয়েছিল তারা মিলনের পথে... নিজেকে না ভাঙলে অণু এই বিশ্ব জলও পেত না৷ গোঁ বড় বালাই, যারা একে ঈষ্ট দেবতার স্থানে বসিয়ে পূজার পর স্থাপন করেছে.. তারা কেন মিছিমিছি চন্দ্রবিন্দু ধারণ করবে? "গো" হয়েই থাকুক না হয়৷ আজ থেকে বাধন খুলেছি, নিজের দু চোখ আর একগাছা অদৃশ্য সুতোর৷ কচ্ছপকে টেনে তুলে সমুদ্রের ঢেউয়ের ওপরে ছড়ানো হীরকজলবিন্দু দেখানো মূর্খতা৷ আজ তার মুক্তির অধ্যায়ে শিখনের অন্তিম কলম চালিয়েছি৷ বালির ভেতর থেকে যদি কোন দিন আত্মগ্লানি উঠে আসে তীক্ষ্ণ স্বরে বিনম্র প্রত্যয়ে.. নতুন অধ্যায় হবে মুক্তির বাঁধন৷

প্রলয়শিয়রে

আমার বাবার মতো কোটি কোটি হৃদয়ের কোণে অনিশ্চিত আরোগ্যের দেশ  ঢেউয়ের ওপরে বসে বেঁচে থাকা, ভাসার লড়াই৷ অদৃশ্য আঁধার থেকে ছুটে আসা অলক্ষ্যের গুলি... তারই মাঝে বর্মহীন জীবনযাপন পাখিরা নিশ্চুপ মানে কাছেপিঠে প্রলয় এসেছে খসেছে তারার বাণী "স্তব্ধ হও প্রাণ, খেলা করো নিসর্গশোভায়" প্রকৃতিক্রিড়াও এক ধ্বংস সমাবেশ দাসত্ব মানে না সে— মৃত্যু আসবে বলে জাগে ঈশ্বরবিদ্বেষ৷ অযথা আঙুল দিয়ে খোঁচাটি না দিলে সাপ এসে ছোবলও মারে না৷ পেছনে আগুন নিয়ে বসে আছে দূত৷ ভালবাসা খেলা ও সংসার— খাদের ওপর থেকে নিচের জমাটি মেঘ যেভাবে দেখেছি তারও নিচে নগ্ন বসে নিঃস্ব ভবিষ্যত৷

ঘাটতি (৪)

আমাদের স্বাধীনতা হনন করেছে প্রকৃতি ও তার দূত; প্রেম  হীনতায় বেঁচে আছি বন্ধ এক শহরের কোণে অন্ধ পাখিটির মতো আগে বড় প্রিয় ছিল বন্দী খেলাঘর কদিন যেতেই ছোঁড়া নিংড়ে নিল রস চারিদিক মৌমাছির দল দেখে না এদিকে এক বিরহী মৌচাক মাঝে মাঝে বসে থাকে ছাদে৷ ওটুকু আকাশ তার, ওখানেই ওড়ে যে কখনো ভাত দেয়নি সেই মহাকাব্য পড়ে বলে আহা! কী ছান্দিক আর পিঠ পুড়ে গিয়ে ঠেকেছে দেয়ালে৷

একা

যে ছোঁয়া ছোঁয়াচে নয় প্রাত্যহিক অনাদির গণ্ডি মনে হয় তৃষ্ণার্ত বেলায় একা থাকতে দাও একটু একা থাকতে দাও এভাবেই একা একা একা একা একা থাকতে থাকতে থাকতে— বহুদূর চলে যাব  সেই দিন আমায় থামিও; সেই দিন, আমায় থামিও!

ঘরানা

আমাদের ঘরানায় প্রাণ নেই কোনো আমাদের ঘরানায় মৃত্যু শেষে আলো কিছু রং ইতি উতি গুলে নিয়ে দেয়ালে, তুলিতে নিষ্প্রাণ চেয়ারে মন বসে বসে কাঁদো৷ তোমার সামর্থে আছে বাতাসের গান তুমি নিজে সুর করে গেয়ে দিতে পারো দাঁড়িয়ে থেকেই জোড়া তবলার মতো উঠলে বেজে দম্ভ শেষে ভয়নৃত্যে নাচবে সমারোহ৷ এতই যে নেচে উঠছ নিজের ভেতর নিচ থেকে নীচ গর্বে হত্যা হয়ে যাও ঘরানা এতই দীন প্রাণবায়ূ ধার করে নিতে ছায়াকে অমৃত ভাবে মমির ফ্যারাও৷ আমাদের ঘরানায় মোম শেষে মমি তোমাদের ঘরানাটি যদিও সেকেলে অনাহূত আমরাই, অন্ধকারে দেখেছে প্রত্যেকে কাফন ছাড়াই তুমি মৃত্যু শেষে এলে

ঘাটতি (৩)

এমন সন্ধ্যাও আসে উড়ন্ত জ্যোৎস্নার মতো  গুচ্ছ গুচ্ছ মায়াবী ময়ূরী-রাজহাঁস রাধার বসন পরে নেমে আসে আমাদের ছাদে যেন নর্তকীর ঝাঁক হাতে ধরে প্রেমিক বানাবে সন্ধ্যাপেঁচা ঘুরু ঘুরু এপাশে ওপাশে হালকা বাতাসের ডানা কোলে তুলে ওড়াতে এসেছে৷ ঝিঁঝি ডাক মৌনতায় স্বপ্ন কাঁধে নিয়ে যায় বহু দূর ফেলে আসা গ্রামের কিনারে সে পুকুর, জোড়, প্রান্তে গোধূলিতে বাথানের খেলা, শাড়ি গুঁজে টিউকলে জলকে যাওয়া মেয়ে.. মেঠো পথও নেশা করে, বৃষ্টি শুরু হলে তার নেশামুগ্ধ গন্ধ পাওয়া যায়৷ এভাবে উজাড় করে উপহারও দেয়নি আগে কেউ৷ তবু এরা প্রশ্ন করেনা মৃত্যুর উঠোনে কেন এতদিন ফেলে এসেছিলে

ঘাটতি (২)

হঠাৎ বাতাস এসে বলল তুই যেভাবে আছিস বসে রাস্তাটিকে স্বপ্ন মনে করে দূর থেকে শান্ত হয়ে হারানো শান্তিকে দেখ্ দেখ্ , এভাবেই ধ্বংস হয় বাবুর পালুই৷ ছোঁয়াচে সময় আজ তোর কাল অন্য কারও হয়৷ পালা করে করে তুইও ডাল-পালা কেটেছিলি মহানন্দভোগে৷ আমার চিৎকারে তোর ঠাট্টা হেঁয়ালির দিন শেষে মহাদীন উঠে আসে সমগ্র রাত্রিতে৷ ও আমার প্রিয়জন হে! কী ভাবে নিজেকে মেরে আমায় বাঁচালি

ঘাটতি

যে পথে যোগান আসে  বিপরীতে মন্দা, হাতে একগুচ্ছ তির পুকুরকে নষ্ট করবে বলে বাড়ে কচুরিপানার দম্ভবিষ হারানো ডানারা ওড়ে, রং লাগে ফুলের বিন্যাসে৷ একা চাঁদ ফুটে আছে ধোঁয়াহীন  বহুদিন পর এখন শহর জানে ক্ষমতাও অস্থায়ী জৌলুষ বাতাস যোগান আছে               ঘাটতিতে রয়েছে মানুষ৷

শূন্য

মোহের প্ল্যাটফর্ম থেকে তুলে নাও আমাকে হে ভালবাসাগামী ট্রেন, অতীতের স্বপ্ন যেন শুধু চিত্রকলা রূপে দেখে যেতে পারি৷ অনুভূতি বদলে যায় এমনই ট্রানসফর্মারে যুক্ত কর মন৷ এ.সি ও ডি.সি'র মাঝে পড়ে থাক যত আকাঙ্খার দাগ, শুকনো পাতার মতো একদিন জড়ো করে ফেলে আসব দূর কোনো মাঠের প্রান্তরে৷ সুন্দর তবুও যাকে আবর্জনার মতো সরিয়ে ফেলি৷ মোহের বাঁধন ছাড়া আবেগ আসে না৷ বেমালুম ভুলে যাই কে যে কোন স্থান থেকে বেরিয়ে এসেছি৷ যে যত সক্ষম সে ততটাই শূন্য থেকে কাছে, তবু ত্যাজ্য জমির বুকেই জমা থাকে হীরকসাগর৷ যতই তলিয়ে গেছি দৃষ্টি থেকে দূরে, গহ্বরের ভেতর নিজের অস্থিচূর্ণ অলসতা ছেড়ে অস্থির সমরে অসীমের বাজনা শুনতে পায়৷ যেখানেই শেষ ভাবি, চতুর্দিকে নতুন দুয়ার, নানাবিধ রঙের আহ্বানে অকস্মাৎ চমকে উঠি... বাহ্...  উদ্দীপনা ডানা পেলে জন্মান্তর চিনে নিতে চায়৷ পান্থহীন পথে যেতে যেতে রথে জড়ো করি নিঃস্বতার জ্ঞান, বৃক্ষরাজ বাড়বে বলে ফেলে দেয় পুরানো সম্পদ৷ আমি আর কতটুকু পারি? ক্ষয়িত স্বপ্নের ডাক শূন্য থেকে উঠে আসে রোজ শূন্যতা পূর্ণের আশায়৷

পদক্ষেপ

বিশ্বের ভেতর বিশ্ব, তার মধ্যে তুমি - আমি সব তারও মধ্যে বিশ্ব আছে নিশ্চুপ অথবা কলরব বাইরে ভয়ঙ্কর ঝড়, শক্ত কাঁচে মারণ বিদ্যুৎ চোখে আসে, আমি যেন মৃতদেহে শঙ্কিত শহর৷ যে সিন্দুকে যতখানি প্রেম, ভয় তার দ্বিগুণ শাসায় অভিশপ্ত আঁধারে বাস্তব ভয়ে ভয়ে মুখোশ সরায়৷ কলমের ডগা থেকে মুছে যাওয়া বিশ্বাসের দ্বীপ জীবনের চেয়ে ছোট, তবু পথ রুখেছে মৃত্যুর৷ নিজেকেই গেঁথে নাও প্রেমনামে প্রত্যাশা পেরেকে ভালবাসা বেঁচে থাক প্রতিদিন ছোট পদক্ষেপে৷ খেয়ালি পতাকা যার হৃদে, বোধপুষ্প উপহারে দাও; উড়ন্ত ফ্যারাও যদি নেমে ঘরে ঘরে জ্বালায় প্রদীপ

নিমজ্জিত

মাঝরাতে ঘুম চোখে নেমে আসা দৈববাণী ঊষার আলোক৷ তার কোন প্রতিচ্ছবি পশ্চাতে দেখিনি৷ স্রোতস্বিনী তিস্তা নয়, জলঙ্গির শান্ত প্রতিরূপ নাভিগর্ভ পথে নাড়িতে প্রবেশ করে মল্লিকার সুরভি ছড়ায়৷ হৃদয় এমনই নীড় যুগল বলাকা যার অন্দরমহলে স্বপ্নাবিষ্ট অভিসারে যায়৷ শতাব্দীর শেষ ডাকও অস্ত্রহীন ফিরে যায় মগ্নতার ঘুম না ভাঙিয়ে৷ ভয় তবু মাঝে মাঝে চোখ খুলে দেখে নেয় বিশ্বাসের জ্যোতি... যেন তার নিষ্পলক দৃষ্টি এক স্বর্ণাভ হরিণ৷

পরিত্রাণ

নিকট দূরত্ব এক অদম্য চিৎকার যার কোনো পরিভাষা নেই বালুচরে তপ্ত গান ছিঁড়ে ফেলা সপ্তকের গিঁট বুদ্ধির গণিত শেষে শূন্যটুকু সার বিচ্ছিন্ন আঁচড় এসে মাঝে মাঝে কঠিন বানায়৷ তবুও স্বার্থের চেয়ে বড় হও অবশিষ্ট প্রেম ভিনদেশী দুর্ভিক্ষের পরিত্রাণে লিখে দিও নাম সমগ্র প্রণাম আর আশীষের হাতে মুক্ত হও, মুক্ত হও, সুপ্ত বিষবাষ্প গ্রাস করে৷ পূর্ণ হোক, পূর্ণ হোক নির্বাণের হাত ধরে বিশ্বময় ব্রহ্মের স্লোগান৷

উদ্গম

আর কেউ নেই, চারিদিক শুধু জল একে একে সব পাখিরাও বাসাগামী শেষ হতে হতে বেঁচে থাকে সম্বল নিজেরই ভেতরে শুয়ে থাকা শুভকামী৷ দূর থেকে আসা ছুঁড়ে দেওয়া অভিশাপে বজ্রের তেজ স্পর্শ করেনা ভাটা আয়না যেভাবে ঝলসে দিতেও জানে সবার সমুখে উঁচু করে নাও মাথা৷ নিরালায় ঝিরঝিরে বৃষ্টির ফোঁটা জানালায় যদি আগুনের মতো বেঁধে ভেতরে ভেতরে ছিঁড়ে যায় বাধ্যতা নতুন সূর্য নবসঙ্গমে মেশে৷ সঙ্গম শেষে জন্মালে দেবশিশু শৌর্য-আড়ালে রাখো রহস্যদাগ পতঙ্গেরাই ফুলেদের পিছু পিছু সুরভির তলে ধুয়ে যাক অভিশাপ৷

চিত্তপট

শক্তের চেয়েও শক্ত নত হয়ে থাকে আহরিত গুণ ব্যক্তিশুভ্রতাকে প্রকাশের নদী নিজ জল স্থির করে উপহারে প্রতিবিম্ব দেয় অস্থির প্রয়াণে যারা শুয়ে পড়ে মরণের আগে৷ প্রাকৃতিক রঙ-পুষ্প মানুষের বিধবা শাড়িতে লাগাও-- লাগাও আর মুছে ফেল অহং এর ভিত শেকড়ের বলিষ্ঠ তড়িৎ উৎকর্ষ ছড়িয়ে দাও আকাশ ক্যাম্বিসে বহুত্ব প্রাঙ্গণে যদি চিত্র আঁকে একাত্মের নিব

পিতৃস্নেহ

যে ভ্রমর খোঁজ নিতে আসে  তোমার ফুলের আর বিষাদের মুহূর্তগুলিতে তার গুঞ্জনেই পাও উত্থানের নতুন শহর৷ বাঁধা আছে প্রাণের সঞ্চার নিরাকার ভালবাসা খনি; হৃদয় তরণী থেকে ডাক আসে এসো, সমূহ বিরাগ থেকে খুঁড়ে আনে সম্মোহিনী গান সুলভ সে, নয় তবু সস্তার বিকার; উদার পাথেয়৷ সে'ই বর্ম; খানা-খন্দ, দুর্যোগের পথে হাত ধরে থাকে পিতৃস্নেহ

দায়বদ্ধতা *

কোনো দায়বদ্ধতা নেই কবিতার কাছে৷ ভাত - কাপড়ের কোনো আশাও থাকে না৷ নিখাদ এক ঐশ্বরিক প্রেম, ভালবাসা যার কোনো কর্ড লাইন নেই৷ যা কিছু প্রশ্নের বাণ, যা কিছু উত্তরের খোঁজ জীবনের কাছে, সেটুকুই কবিতা দিয়েছে৷ কোনো এক অস্তগামী সময়ে দাঁড়িয়ে জাগতিক বন্ধু, প্রেম, সম্পকেরা গুটিয়ে নেবে জাল; সেদিনও নিজেকে পাব, ফেলে আসা সময়কে পাব, আগামী সূর্যের আলো কবিতাই চেনাবে আমাকে৷

বিচ্যুতি

একখণ্ড রাত্রি ধার দিতে পার অবসর থেকে? দিবলোকে হারিয়ে ফেলেছি নিজেরই অস্তিত্বের সূক্ষ্মতর রূপ অহরহ সুখস্নান, কর্তব্যের মোহ বাহু থেকে ছিটকে দিচ্ছে আঙুলের ভাঁজ নিজেই নিজের নই, কার কাছে যাব?

সফর

সন্ধিক্ষণ জাগ্রত হয়েছে, সুগন্ধি ধোঁয়ায় প্রিয় কাশফুল মহানন্দে শরীর দোলায়.. যেন তার জন্মদিনে প্রেমনদ গোধূলি সফরে মাঝবক্ষে ভাসতে ভাসতে প্রগাঢ় চুম্বন পাথুরে দ্বীপের বুকে সবুজাভ শীৎকার শোনায়৷

জ্যোৎস্না

এই তো সেদিন, ওড়ার ছলে এসে জীবনকালের মাঝ আকাশে আনন্দ সংবাদ স্বপ্ন পাখির ডানা ওড়ায় মেঘে ভাসতে ভাসতে ক্লান্তি এলে বাঁ পাশ ঘুরেই স্পর্শ পেলাম, জ্যোৎস্না ছোঁয়া বেলির গন্ধ চুলে স্পর্ধা আছে কোন সে মেঘের রাতের আলো নিভিয়ে দেবে যখন বুকের কাছেই দাঁড়িয়ে আছে চাঁদ

সংসর্গ

উড়ন্ত চাবুক এসে মৌমাছির মতো শোধ করে ঋণের বকেয়া যেন কত কাল ধরে পুড়ে যাচ্ছে জ্বলন্ত চারকোল আশে পাশে মধুভাণ্ড নেই, সহ্য করে মৃত পালকের ন্যায় সংযমের চাষ৷ সঙ্গিনী সংসর্গে ভাঙে পাহাড়ও, বিনয়ে৷ বিধ্বস্ত পাখিরা কেমন ওড়ার আগে পরস্পর চেটে নিচ্ছে ঠোঁট!

আড্ডাঘর

গাছের ঝালর গায়ে পাথর পুরুষ, নিচে ভর্তি সুরাপাত্রখানি.. ডাকতে পারিনি যাকে আড্ডাঘরে সঙ্গী করে নিতে৷ কুসুম কুসুম জলে বৈরাগি পাখির দল ডানা খুলে ভেজাতে এসেছে৷ আমাদের কোনো কথা নেই, বলার যা কিছু ছিল দুজনেই বুঝে নিই স্পর্শহীন ভাষার আড়ালে৷ সময় কিছুই নয়, শরিরী শেকল, যে কখনো বাঁধতে পারেনি বায়বীয় মনের বিস্তার৷ জোৎস্না কেমন হবে পাহাড়ের বুকে এই ভেবে ফুঁ দিয়েছি সূর্যে৷ সন্ধের পায়ে পায়ে জ্যোৎস্নার বাঁশিতে নেমে আসে চারপেয়ে দল সুরা পাত্রে চুমুক লাগাতে; এক পাত্রে এঁটো তারা বিচার করে না৷ শেয়াল - কুকুর যেন আমার চেয়েও বেশি সভ্য মনে হয়৷ ব্লেজারের মধ্যে যত গোপন করেছি অমানুষ, প্রতিটি নিঃশ্বাস থেকে বারুদের গন্ধ ভেসে আসে৷ সিগারি ধোঁয়ায় ঢাকা পড়ে যায় শৃঙ্খলার ধ্বনি৷ আমাকে লেলিন নয়, নেতাজির জুতো দিয়ে যাও; রং হীন, গাণ্ডিব থেকে ছেড়ে যাওয়া শলাকার মতো, মুক্তি ও বিশ্বাসে এক অভিন্ন জগৎ তুলে আনি৷