Posts

Showing posts from 2021

অন্ধকার শেষে (১৫)

১৫) চারিদিকে জমকালো বিষ নিজেকে গোপন করে গুণী— আসলে আমরা সব'ই সময়ের দাম দিয়ে চিনি নিশির শিশিরে ভিজে শক্ত হয় কমলিকা কায়া নিজের বেহায়া রূপে রং লাগে— রঙিন সরম ঠিক'ই ফিরে আসে পড়ন্ত বিকেলে অন্ধকার সেজে ওঠে তারা দুটি কাছাকাছি এলে ©প্রভাত ঘোষ

ভাঙা জ্যোৎস্নার সঙ্গম

শিরিষের ঘেরাটোপে এমন বিমুগ্ধ রাতে... খুনসুটিতে বারে বারে চাঁদটিকে গিলে নিচ্ছে মেঘ৷ পাশের ঈশ্বরগৃহ তত লাল হয়নি এখনো.. যতটা এগিয়ে গেলে চিৎকারের শব্দ শোনা যায়৷ কিছু দূরে শ্মশানের শেষ গন্ধ অহং ঘুচিয়ে দিতে আলিঙ্গনরত৷ সেই মাঠ, গোলপোস্ট, তালগাছে সপ্তাহের ক্ষিদে জমে থাকে৷ দামোদর শুয়ে আছে কয়েক কদমে, নির্বিকার অর্ধমৃত পাখিটির প্রাণ দু-ফোঁটা জলের পাশে বিষাক্ত দ্বীপে৷ আষাঢ় আসেনা তবু কবিগুরু বেঁচে থাকে রাতচরা পতঙ্গের প্রাণে৷ জোনাকির দেহত্যাগে প্রেমিক পেঁচার ভীড়; দীর্ঘশ্বাসে প্রেম আর আঁধারে অতীত বেঁচে থাকে৷ রাস্তাটিও চলে গেছে সুদূর মিশর থেকে যতদূরে মৃত সভ্যতার ধ্বংসাবশেষ... নীল ফোয়ারার৷ নীলনদ, আকাশ ও প্রিয় অতীতের রঙে  বিষের দহন, আমৃত্যু ভোলার কোনো অবকাশ নেই৷ এই মাঠ; মাটি গন্ধ; হাওয়া ও পাতার প্রেমে  বাইজির নৃত্যগৃহে সাপ্তাহিক বিরহসঙ্গম৷ ধ্বংসপ্রায় ব্যাবিলন গান ধরে স্খলনের পরে৷

আশ্চর্য ওষুধ

     আমরা কতদিন ভালভাবে গল্প করিনি৷ পাশাপাশি বসে শরতের মেঘ দেখে কোনো এক কল্পনার ডিঙি চড়ে চলে যাওয়া হয়নি এই বাস্তবের থেকে বহু দূরে৷ প্রত্যন্ত গ্রামের মাঠে গোধূলির হাত ধরে যেভাবে সন্ধে নেমে আসে, আস্তে আস্তে জোনাকির আলো যেন উড়ে আসে দূর ওই আকাশের থেকে, উড়ন্ত তারার মতন৷ তার পর দীর্ঘশ্বাসগুলি বের করে হালকা বাতাস থেকে বুকভরা শ্বাস টেনে অপলক দৃষ্টিতে মায়া ভরা চাঁদটির দিকে তাকানো হয়নি বহুদিন৷ দোটানা জীবন তার একদিকে কাজ আর একপাশে বিদ্বেষের ভার৷ কল্পনা এক আশ্চর্য ওষুধ, সঞ্জিবনীর মতো কীভাবে যেন মৃতপ্রায় মন থেকে আবিষ্কার করে ফেলে মানুষের ডানা৷ ©প্রভাত ঘোষ

পাষাণে তুষার

অনন্ত যৌবন এক পাষাণের ক্ষুণ্ণ হয়েছিল দ্বিধা-দ্বন্দ্বে, জীবনের তুমুল মশকরায়৷ অনুকূল আবহাওয়া, যার কোনো ফিরবার তাড়াও ছিল না— তেমনই আয়েশ করে বিকেলের বৃষ্টির পরে শীত শীত বাতাসের মতো এসে জড়িয়ে ধরেছ যেন কতদিন ধরে অপেক্ষায় ছিলে৷ ক্ষয়ের হারানো জ্বালা প্রতিদিন ভরে দেয় আলগোছে ঠোঁটের ছোঁয়ায়৷  বিমনা বিকেল তুমি থেকে যাও আরও কিছুক্ষণ, না বলা বারণ বুঝে আরও শীতে কাবু করে দাও৷ চোখের প্রতিটি কোণে গুড়িগুড়ি বরফের প্রেম, হাত ছোঁয়া আলতো পশম সুদূর পাহাড়ি কোনো বরফের গলে যাওয়া নদী উপত্যকা প্রাণ ভরে স্বাগত জানায়— এসো আজ মিশে যাও, ভালোবেসে পা ভেজাও, দু-জন দু-জনা থেকে চেয়ে নাও পূর্ণতার ফুল৷ পাপড়ির খাশ গন্ধে, অচেনা রঙের ছন্দে জীবনে আসুক কুহুতান৷ এ গান আমার, এ গান তোমার, আমাদের মধ্যবর্তী লয়-এ চূর্ণ হোক সমগ্র পাষাণ৷ ©প্রভাত ঘোষ

শুভ নববর্ষ

❤️ শুভ নববর্ষ ❤️ ৭) প্রতিদিন নতুন রকম, আকারে বাড়ছে সিকি সীমাহীন উদ্যমতাও আমাদের প্রাত্যহিকি বাজারের হাজার ভিড়ের মাঝে মন ভুলিয়ে থাকা কত কাজ বেকার রাখা বেকারের নিয়ম নীতি জমায়েত নতুন মানুষ, কত প্রেম নতুন ঢেউয়ে পেছনের পথ বলে দেয় পথিকের ব্রাত্য কে কে কত গান ছড়িয়ে থাকা সুরে কোন নদীর মেজাজ প্রতিদিন নতুন রেওয়াজ যেন এক স্বপ্ন লেখে দ্বিধাহীন রাত্রি আঁকে হৃদয়ের স্বপ্নবিলাস কিছু ফুল নতুন ফুটুক, ক'টা দিন হলুদ পলাশ সে জানে কোন ঘ্রাণে কার শরীরের স্পর্শ মেশে এ নদীর নতুন দেশে যে প্রেমের পান্থনিবাস ঝরা দিন কুড়িয়ে রেখে কে বাঁচে আজ অবধি ক'টা দিন নিয়মহীনায়, ক'টা দিন নিজের প্রতি— অনাদিকালের স্রোতে জীবনের নতুন পাওয়া এ ভালোবাসার হাওয়ায় দুটো দিন কাটাই যদি © প্রভাত ঘোষ

ঘুমন্ত প্রদীপ

১) বিচার ঘুমিয়ে থাকে বিশ্বাসের ঘরে তলে তলে গিলে ফেলে বাগান, বসত বাড়ি অগোচরে অবিশ্বাসী নদী ঘুমের ভেতর আমি-তুমি তুমি-আমি সন্ধি করে স্বপ্ন দেখি রোজ মাঝে মধ্যে খোঁটা দেয় জ্বলন্ত কাগজ ঘুম-স্বপ্নে সুখ, আর সুখস্বপ্নে ঘুম বিশ্বাস এমনই এক নেশাপূর্ণ তূণ— আমাদের সন্ধি ভাঙে নেশার দরুন

খণ্ডচিত্র

স্নান সেরে বসিনি এখনো৷ জমায়েত টানে না আমায়৷ যেন এক খণ্ডচিত্র মেঘ যার কোনো রাস্তাই নেই, বাতাসের সঙ্গী হয়ে এখানে ওখানে ওড়ে৷ স্থায়ী কোনো বারান্দাও নেই যেখানে উজাড় মনে বিষণ্ণতা উগরে দিয়ে আসে৷ শীতল জলধী তাপে ছেঁকা পেলে হঠাৎ বাষ্পের মতো ছতিছন্ন হয় চারিদিকে৷  কে আমি, কী ধাতু যার মাটির বাঁধন মানে টান৷ বাতাসের ঠুংরি তুমি দিওনা কক্ষণো৷ উদাসী পালক আজও নিজেকে চেনে না৷ মৌনস্বর নাভি থেকে বুকে উঠে এলে সমস্ত বাতাস যেন একপলকায় স্তব্ধ হয়ে যায়৷

কাঁটা দেওয়া আরাম কেদারা

বাইরে মসৃণ পথ, রাস্তার দু-পাশ জুড়ে সারি দিয়ে বহুতল ফ্ল্যাট৷ সারি সারি কৃষ্ণচূড়া গাছ, আর তার মাঝখানে চলে যাওয়া চমৎকার রাস্তা ধরে যে সকল রঙচঙে চারচাকা মিড়িয়াম স্পিড ধরে চলে তার ভেতরেও চলে পুরোনো সঙ্গীত৷   নতুন চালের সাথে মানিয়ে নিতেও ঘোড়া অনেকটা পাহাড় পেরোয়৷  যারা শুধু আয়নায় মুখ দেখে অবয়বে চুমু ছুঁড়ে দেয়— অথবা কিঞ্চিত হিংসে মনে পুষে রেখে বলে গাড়ির ভেতর থেকে অসুখের ওরা কী বা বোঝে... তারা কেউ জানে না কিভাবে লাইফ জ্যাকেট পরে অন্ধকার উত্তাল সমুদ্র কাঁপতে কাঁপতে পাড়ি দিয়ে ভাঙা জাহাজের পাটাতন মেরামত করে ফের হাসিমুখে কফিতে চুমুক দিয়ে বলা যায়— এই, ভালো আছি৷ চকমকি আলো যে গহ্বর থেকে বেরিয়ে এসেছে কেউ তার ভেতরে ঢোকেনা৷ প্রাণঘাতী মিথেনকে ফাঁকি দিয়ে বেঁচে ওঠে যারা... হয়তো তারা সাইকেল চড়ে না, খালি পায়ে নগ্ন পিচে ভর-দুপুরে হাটে না কখনো, পাথর ভাঙার ঘাম কাকে বলে সে জানে না আজও৷  তবে যে গহ্বরে বোমা ফাটে বাইরে তার কতটা আওয়াজ পাওয়া যায়? ভাঙা ভাঙা কাঁচে যারা নিজেকে সহজ করে আকাশে উড়েছে... ডানা তুলে দেখো কত দাগ৷ এ দাগের সফরও সহজ নয় খুব৷ দেখতে বড়ো ভালো লাগে এটুকুই উপরি পাওনা৷ নাছোড়বান্দার মতো ভাঙা কাঠ ধরে যারা প

মেয়াদ

সহিষ্ণুতার পাথর  যখন ভাঙছে জলের নিচে সেদিন কাঁদলো রাত্রি প্রহর ঝরণা নামলো অতর্কিতে জলের ভীষণ রকম মেজাজ মনের নিজস্বতার তেজে আমায় ওড়ালো গন্ধরাজ বিশেষ ভালোবাসার ক্ষেতে কবে— নামতে চেয়ে ছিলাম ভীষন শূন্য ছিল যখন আদর ঝেঁটিয়ে দিল বিলাপ বুকের মাঝখানে মরিয়ম ক্ষণিক অন্ধকারের খেয়াল হঠাৎ ঝাঁপিয়ে এলে ঝোঁকে প্রেমের আকাশ সম মেয়াদ আবার ডাকছে অরণ্যকে © প্রভাত ঘোষ

চোখ

Image
যাওয়া শুধু যাওয়া নয়, ডানা হারানোর মত ক্ষোভ অসীম বিয়োগ ভেলাহীন মেঘ তুমি কিভাবে ভাসাও যত ছুঁই ততবার একটি নতুন চোখ দাও এমন'ই জগত যার প্রতি কোণে হৃদয়ের নিটোল তর্জমা তোমাকে জীবন ভেবে প্রতিবার অন্ধকারে  আঘাতকে করে গেছি ক্ষমা বারিষ যেদিন নামে  তারই মাঝে নৃত্য করে ঝেড়ে ফেলা নিশ্বাসের শোক মুছে যাওয়া হৃদয়কুহক যতই পুরোনো হও নতুন তোমার কাছে ম্লান কে যেন গোপন ঘরে ঝরণার শব্দ শোনান... © প্রভাত ঘোষ

ছাপ

এবার মরলে বেকার হব ভাতার নামে ভিক্ষা নেব বছর পাঁচেক চাকরি-বাজার লকডাউন রেশন হাতে ইঞ্জিনিয়ার এত টুকুই তার এক্তিয়ার মন্দাকালীন ভাতের ওপর অল্প নুন কলেজ শেষে ডিগ্রিধারি আন্দোলনের পাল্লা ভারি কণ্ঠ আবার হাতিয়ে নেবে কালশিটে চাষির ঘরে বউ মেলে না কাঁধের ওপর মস্ত দেনা চপের আকার আঁকবে বসে আর্কিটেক্ট যুদ্ধ পেটে ছাড়বে মাটি চাকরি সোনার পাথর বাটি বিপ্লবীদের হাজার কলম ফেসবুকে বাঁধিয়ে নেবে রাজনীতিতে বোমার ওপর শক্ত ফিতে ছাপ পড়েছে বিষাক্ত এক বস্তুতে © প্রভাত ঘোষ

যেতে যেতে

কোথাও কখনো যদি চলে যেতে চাই নীল ঘর, বারান্দা হলুদ হাড়ির ভেতরে শেষ বেঁচে থাকা দু-টুকরো খুদ যেতে যদি না দাও তখন তবু বলব শোন্ তবে শোন্  ওপাশের দীঘি বেয়ে রাত নেমে আসবে যখন পদ্মের দুলুনি এসে ঘাড় নেড়ে বলে যাবে— সে'ই ছিল এক অনাদায়ী ঋণ নিশীথ মসৃন— কখনো চাঁদের কাছে ধার নিত প্রেমের ঠিকানা কামিনীর গন্ধ শুঁকে চলে যেত জলের ভেতর সে এক সুরাহা ছিল সুরা ঢেলে দিত রাতে, মন তাকে ভেবে নিত ঘর৷ © প্রভাত ঘোষ

মিথ্যে হোক

যাবেন বলে তো বুকে আগলে রাখিনি ছাড়ছি না কোনো শব্দ, কোনো প্রেম, অলীক বিধান কেড়ে নিতে পারবে না— তাও আমার যে বহু ঋণ, এক কণা দিতেও পারিনি৷ কতটা মলিন হলে শোক লেখে রক্তস্নাত মন ঈশ্বরের মৃত্যু বরণ— কিভাবে বহন করে নিয়ে যাবে অস্তগামী ডানা এ কেমন কান্নার বাণী, কণ্ঠে কোনো বিদেহী আঘাত অথচ কেন যে আজ এ হেন শোকের মুখে ঝামা ঘষে দিতে পারছি না এটুকু সান্তনা ছিল সূর্যের কলমে আমার ঈশ্বর লিখে চলেছেন— কোথাও, কখনো  প্রণামের আশায় আশায় নিত্যদিন ফুল দিয়ে সাজিয়েছি রাতের সড়ক আজ শুধু এটুকু প্রার্থনা হে ঈশ্বর— মিথ্যে হোক, মৃত্যু মিথ্যে হোক © প্রভাত ঘোষ

ক্রয়-বিক্রয়

ঘর দেখে বিক্রি হয় শরীর বা হাত পেট বুঝে বিক্রি হয় কেউ চরম আঘাত, মুখে চরিত্র আড়াল, শুধু ঢং থাকে প্রত্যাবর্তনেও ক্রেতা আর বিক্রেতার গোপন বিহার অবাধে পোষাক খুলে  কেনা বেচা আখছার মন  মুখোশ চিনিয়ে দেয় নেমক হারাম আর পুষে রাখা বিষের ধরণ চারিদিকে বহু মুখ, মুখোশ আর নিত্য ব্যাভিচার কারও কোনো দায় নেই হত্যারও এমন'ই বিচার হাতুড়ি পিটিয়ে মারে মাঝে মাঝে, দাগহীন নিষ্ঠুর অন্তঃক্ষরণ কোন্ বৃষ্টি ধুয়ে ফেলবে এমনি পরিস্থিতি? এত জ্বলন্ত পোষাক তবে কার— কোথাও কি বিক্রি নেই স্মৃতি মুছে ফেলা ইরেজার! © প্রভাত ঘোষ

ঔদ্ধত্ত্বের শিখায়

হঠাৎ মৃত্যুর দিনে দুটো ফুল হাতে যারা আসেনি কখনো... ভয়ঙ্কর সুনামির পূর্বাভাস জানার পরেও যারা সাবধান করেনি সেদিন...  ছটফট করতে থাকা যন্ত্রণার দিনে যারা কথার মলমটুকু লাগাতে আসেনি... এ লেখা তাদের কাছে যাক৷ উড়ে গেল ঘর আর পুড়েছিল অন্ধের সংসার.. কে কতটা ভার তুলে নিতে এসেছিল সেই দিন? অথবা কিঞ্চিত দুটো পরিযায়ী মেঘ হয়ে সামান্য বৃষ্টির ছিঁটে দিয়েছিল নিদাঘ প্রান্তরে? যে ছিল সে আজও আছে পাশাপাশি হাত ধরে৷ তলিয়ে যেতাম, ঠিক সে সময় তুলে এনেছিল এক নারকীয় কূপ থেকে ফুলের বাগানে৷ প্রতিটি রাতের চোখে লেখা আছে তারই শুভনাম৷ ভালোবাসা বুকে নিয়ে তার'ই কথা লিখতে এলাম...                                                      — প্রভাত ঘোষ এই সূত্রে অদিতি সরকারের এই লেখাটি লিখতে বড় ইচ্ছে করল— "পুরুষের ভালোবাসা পাওয়াও সাধনার বিষয়। দেহদানের পরেই যে-নারী ব'লে পুরুষের ভালোবাসা পেয়েছি, সে নির্বোধ; পুরুষের বিশ্বাস ছুঁয়েই দেহ ছুঁতে হয়... শরীর তো বেশ্যাও দেয়।"

বসন্ত

Image
  'কখনো যাব না' বলে থেমে আজও থাকেনি উড়ান৷ বাতাসের সাথে শোঁ শোঁ করে এগোনোর যাত্রাপথ মলিন হয়নি কখনোই পশ্চাতে বারুদ আছে বলে৷       বেড়িয়ে এসেছ বুড়ি? বহুকাল না দেখায় অচেনা লেগেছে কোনো রং? এ মনের চোখ খুলে শ্বাসের দরজা ঠেলে বেলি ফুলে ডুবিয়েছ প্রাণ?         সহস্র অঘ্রাণ যেন তোমারই অপেক্ষায় আস্তে আস্তে বৃদ্ধ হয়ে গেল আর তুমি তাকে চেয়েও দেখলে না৷ চৈত্র শেষে কচি শাল - পলাশের ফুল প্রেমিকার মতো এসে চুলের কিনার ধরে গালে ঠেকে দিয়ে যায় চুম্বনের নতুন সমাস৷ সমস্ত জগত জুড়ে ভালোবাসা তোমারই তো বাস৷ আর আমি আজীবন সন্যাসে জড়াব বলে রূদ্রাক্ষের মালা নিয়ে বসি৷        অবুঝের চোখে কত রং এই বসন্ত দিয়েছে৷ শুনিয়েছে একতার গান, হে প্রেম, মহান৷ এতটা মহান যে— চরণের চিহ্নটুকু নেই তবু চারিদিক ঘিরে ছড়িয়ে রয়েছ মানবের প্রতিটি কোণায়৷ যে যার যাত্রার পথ ভালবেসে নিজে খুঁজে নেয়৷             যতই এগিয়ে যাই গ্রাম থেকে গ্রামান্তর সুরভির টানে, যে পথ হাঁটিনি আমি আগে কোনো মিথ্যা অভিমানে৷ হৃদয়ের পথ চেনা যায় জড়তার নাগ পাশ সরিয়ে বেরোলে... এ জীবন জ্যান্ত হয় ফি-বছর বসন্তের কোলে৷ © প্রভাত ঘোষ

নিমেষ

যাচ্ছে নিমেষ সময় ভেঙে দেখছে না কি একটু থেমে— বুকের নরম ছটফটালো ভীষণ পরিত্যাগে মেঘের যদি হৃদয় ভাঙে কণ্ঠ দিয়ে কষ্ট নামে জানলা থেকে হাত ছুঁতে চায় ফেরার অসম্ভবে ভেতর ভেতর জড়িয়ে ধোরো বৃষ্টি নামার আগে মনের ভেতর টুকরো ডানা মরার আগে ঝাপটালো না! দোষ কী জলের যখন ঘরেই ঝড়ের আসা যাওয়া হঠাৎ চোখে প্রেম নামিয়ে অন্ধকারে ঠোঁট বাড়িয়ে রাতের হাওয়া ফের যদি আজ ছোঁয়ার কথা ভাবে আমায় ভেবে জড়িয়ে ধোরো বৃষ্টি নামার আগে © প্রভাত ঘোষ

প্রেম পিরামিড (২০)

হঠাৎ মৃত্যুর দিনে দুটো ফুল হাতে যারা আসেনি কখনো... ভয়ঙ্কর সুনামির পূর্বাভাস জানার পরেও যারা সাবধান করেনি সেদিন...  ছটফট করতে থাকা যন্ত্রণার দিনে যারা কথার মলমটুকু লাগাতে আসেনি... এ লেখা তাদের কাছে যাক৷ উড়ে গেল ঘর আর পুড়েছিল অন্ধের সংসার.. কে কতটা ভার তুলে নিতে এসেছিল সেই দিন? অথবা কিঞ্চিত দুটো পরিযায়ী মেঘ হয়ে সামান্য বৃষ্টির ছিঁটে দিয়েছিল নিদাঘ প্রান্তরে? যে ছিল সে আজও আছে পাশাপাশি হাত ধরে৷ তলিয়ে যেতাম, ঠিক সে সময় তুলে এনেছিল এক নারকীয় কূপ থেকে ফুলের বাগানে৷ প্রতিটি রাতের চোখে লেখা আছে তারই শুভনাম৷ ভালোবাসা বুকে নিয়ে তার'ই কথা লিখতে এলাম...                                                             — প্রভাত ঘোষ

অনুবাদ

   অলঙ্কার রিক্ত হলে বাঁশি ভেঙে ছড়ায় বিদ্যুৎ... আফশোষ নেই, শুধু নিত্যদিন ভাঙার যন্ত্রণা৷ জরুরি ছিল না, জরুরি ছিল না৷ অসমাপ্ত সন্ধ্যা পূর্ণ হয়ে যাবে আজ নয় কাল, কোনো কোনো হাত ভালোবাসলে মন ভুলে যায় বিরহী খেয়াল, শাপিত জামানা... জরুরি ছিল না, খুব জরুরি ছিল না৷        হৃদয়ের উপন্যাসে অনাহুত জটিলতা ভীড় করে আসে বলে অনুবাদ ছোট হওয়া ভালো৷ তিলে তিলে গড়ে ওঠা মেঘপূঞ্জ ভেঙে পড়লে নেমে আসে জল, এসব চলিত কথা কার'ই বা অজানা... তবু জরুরি ছিলনা, এত জরুরি ছিল না৷ ছুঁড়ে ফেললে রাগ আর ভাঙলে আবেগ, ভিতরি জুবান থেকে টেনে আনে নিরাশার খেদ৷ দূরের আগুন দেখে অন্ধকার ভেবে নেয় ভালবাসা, নয়তো প্রেমিক নদীর পাশাপাশি বসে দু-হাতে মিলন হলে একসাথে জীবনসঙ্গম করা যায়৷ আলিঙ্গন করলে কত পুড়তে হয় মধুবনে— সে রূপ চেনেনি বলে পেলো বিশ্বাসের নজরানা৷ জরুরি ছিল না, বোধহয় জরুরি ছিল না৷       ক্ষোভের'ও আয়না হয়, প্রতিদিন মেলে ধরলে ধীরে ধীরে জ্বলে যায় সবুজ দ্বীপের মহাদেশ, ঈশ্বরের প্রেমাংশ হনন করেও চেহারায় কিছু অনুতাপ— টুকরো'ও ছিল না৷ চাঁদের'ও বিচার হয়, নিভে যায় সময়ের ফের-এ৷ বিচার জরুরি, তবু এমন নির্মম কোপ! জরুরি ছিল না, খুব জরুর

জার্নি

আশ্বিনের হঠাৎ বৃষ্টির পর রামধনু রঙের মতোই আমার আকাশ জুড়ে এলে, তারপর আর কোনো রং দেখতে পাই না কোথাও৷ প্রথম মৃত্যুর পরে উদ্বাস্তু আনন্দ কতো কতো পথ একা হাঁপিয়ে মরেছে...  যতটা আদর পেলে চিতা ছেড়ে উঠে বসে শব.. সে সব সোহাগি ছোঁয়া, ভালোবাসা বেপরোয়া লিখে রাখে বেহায়া সড়ক৷ এটুকুও ফাঁক নেই, বাতাস পেরিয়ে যাবে.. আলগা তুমি করোনি বাঁধন৷ তৃষ্ণার্ত পিঠের আশা পূর্ণ করে অতৃপ্ত স্তন৷ ছুঁয়ে যাওয়া মাথা, ভালোবাসাগাথা, আস্তে আস্তে ফিকে হওয়া রোদ.. শীতের বাতাসে কত শিহরণ জমে থাকে মন ভরে দেখে জি.টি রোড৷ অনর্গল খোশগল্প বহুকাল শোনে নি বাইক৷ এসো হে বিলম্ব প্রেম, ঢেলে দাও যত অনুভব.. স্বপ্নের ভেতর থেকে তুলে আনো রঙিন বাস্তব৷ ©প্রভাত ঘোষ

সৎকার

দাহ - সৎকার করে এলাম বিভিষিকা নামক এক সম্পর্কের অধ্যায়৷ অহরহ পোড়াতে পোড়াতে বিগত পৈশাচিক সময় চমৎকার বুঝিয়ে দিয়ে বলল.. যেখানে সততা নেই, সবার প্রথমে তাকে পূন্য আগুনের মাঝে সৎকার করে আসতে হয়৷  অমাবস্যার অধ্যায়ের শেষ পৃষ্ঠায় হস্তাক্ষর করতে গিয়ে মনে এল... উপন্যাস এখনও অনেকখানি বাকি৷ কতখানি নির্মমের আঘাত লুকিয়ে ছিল... এতদিনে মুখোশ সরালে৷ ক্ষমাহীন হইনি তবুও৷ সমাপ্তির অগ্নিকাণ্ড এখনো নেভেনি, কিছু অঙ্গারের জ্বালা নেভে না কখনো৷ আজীবন পুড়তে থাকে অপেক্ষায়, সময়ের দান দেখবে বলে৷  প্রেতাত্মা উন্মাদ হয়ে ঘুরে মরলেও তাকে হাত তুলে ভাত দেয়না কেউ'ই৷ আরও একটা মৃত্যু দেখতে চাই এ জীবনে৷ রক্তগলা দিন থেকে আস্তে আস্তে ক্ষয় হওয়া জীবাষ্মের শেষ দিন পর্যন্ত... এতটুকু বেঁচে থেকে নিজেকে নিভিয়ে ফেলা যেন এক মহাজাগতিক আহ্লাদের শেষ স্বপ্ন... সমস্ত জ্বালার ব্যথা, যন্ত্রণার ইতিকথা সেদিন শোনাবে, সেদিন জুড়াবে৷   তারপর কোনো অধ্যায়ের নব চরিত্রের মাঝখানে নিজেকে ছড়িয়ে ফেলব, নিজেকে মিশিয়ে নেব অন্য নতুন কোনো শরীরের ঘ্রাণে... কিছুটা ঘুমিয়ে নেব আমাকে বাঁচানো সেই নৌকাটির হৃদয়ের ঠিক মাঝখানে৷ © প্রভাত ঘোষ

সঞ্জিবনী

এ ঘর ও ঘর করে খুঁজে গেছি এতদিন, ভ্রান্তির শিবিরে বসে আগুনের আঁচে কত যে বিনিদ্র রাত চিতা হয়ে জ্বলে গেছে হিসেব রাখিনি৷ এতগুলো বছরের নিটোল তপস্যা বুঝি পূর্ণ হল আজ! তোমাকে সন্তুর বলি অথবা সাগর থেকে ছুটে আসা হৃদয়ের ঢেউ, প্রতিটা জখম এসে ধুয়ে দাও, মুছে দাও পুরোনো অঙ্গার৷ ভালোবাসা সোহাগের প্রলেপ লাগালে বুঝি কঙ্কালের বুক থেকে বের হয়ে আসে দীপ্ত হীরে! তুমি তো হীরের চেয়ে কম নও প্রিয় ভালোবাসা৷ এ দেশে আঘাত এলে ওপারের আয়নায় ভেসে ওঠে যন্ত্রণার সুর৷ এমন জড়িয়ে ধরি না পাওয়ার ঘরে, ঘন অন্ধকারে.. না ধরে পারি না যে—  পূজার থালাকে আমি কী দিয়ে সাজাই? কী প্রসাদে ঈশ্বরীকে পাই?  প্রতি রাত শব্দ শোনে, স্বপ্ন দেখে, কানে আসে রাজকন্যার অশ্বারোহী ক্ষুর...  সংসার সাজাবো বলে ইন্দ্রের প্রাসাদ থেকে এনেছি সিঁদূর৷ ©প্রভাত ঘোষ

তোমাকেই চাই

তোমাকেই চাই.. শুধু তোমাকেই চাই... সমুদ্রের পাড়ে বসে বৃষ্টির সন্ধ্যায়.. তোমাকেই চাই, শুধু তোমাকেই চাই... নির্জন পাহাড় ঘেরা সবুজ জ্যোৎস্নায়... তোমাকেই চাই, শুধু তোমাকেই চাই... যে সময় সূর্য এসে জানাবে বিদায়.. তোমায় জড়িয়ে ধরে হেঁটে যাব গুটি গুটি পা'য়... গোধূলীর ঢেউ আর প্রেমের হাওয়ায়... তোমাকেই চাই, ওগো তোমাকেই চাই.... তোমাকেই চাই, শুধু তোমাকেই চাই.... ©প্রভাত ঘোষ

মৃত্যু

     এমন মৃত্যু দেখিনি কোনোদিন, শরতের শীত দিয়ে শুরু হয়ে বসন্তকে আরও রঙিন হতে দেখেছি... তবু এমন মৃত্যু দেখিনি যেখানে অমাবস্যা হত্যে দিয়ে বসে থাকে সংসারকে ছিঁড়ে খাবে বলে.. সত্যি বলছি, এমন মৃত্যু আর দেখিনি কখনো৷ টুকরো টুকরো নাভিমূল, ফুটো হওয়া হৃদয়কে একসাথে কবরে ও শ্মশানে দেখেছি৷      শুয়েছিল কলজে থেকে খসে পড়া ভালবাসার ভগ্নাবশেষ.. দেখে গেছি, ছিঁড়ে গেছি, নিংড়ে গেছি নিজের ভিতর৷ উহ টুকু করতে পারিনি... বন্ধ দরজার শেষে হাউহাউ কেঁদে গেছে স্বপ্ন ভেঙে অন্ধ হওয়া চোখ, কেউ তাকে চিনতে পারেনি৷      এমন মৃত্যু আর দেখিনি কখনো যাকে গোপনে পুড়িয়ে দিতে হয়.. সেই ঘর এখনো সাজানো আছে নির্লিপ্ত পাহাড়ের মতো৷ গোলাপি দেওয়াল, জানালায় ফুল ফুল পরদাগুলো বাতাসে পাখনা মেলে উড়ে এসে এখনো আদর করে... শুধু এক না পাওয়ার হাহাকার, হারাবার চিৎকার উন্মত্ত করে তোলে বারবার ভস্মভরা ঘরে৷      এখন এমন কেউ নেই... আলতো করে ছুঁয়ে দেবে ঠোঁটের শয্যায়, হঠাৎ জড়িয়ে নেবে নীল নীল আলো জ্বলা রাতে... এখন শুধুই রাত জেগে থাকে একা মনস্তাপে৷