Posts

Showing posts from 2022

পক্ষপাত

ঠুনকো আওয়াজ ঝড়ের গলায়, ঘোড়লাগাম ছুটছে, বালি ছিটিয়ে ভাবে পক্ষীরাজ থামতে হতো ডঙ্কাওয়াজে, পেণ্ডুলাম দেখিয়ে দেবে শেষ সময়ের সিংহদ্বার ওই যে দূরে মাঠের শেষে খড়ের ঘর সেইখানে কে বীণ বাজালো মূর্ছণায় তলব তোমায় শিখিয়ে দেবে দ্বিপ্রহর কাঠের গলা শুকিয়ে এলে কষ্ট হয় কোনখানে শিরদাঁড়ার পয়েন্ট সব জেনেও গোপন পকেট সূঁচ ফোটালেই পক্ষাঘাত বাঁচিয়ে রাখার শর্তে শুধু দেখছে কেউ মেঘের মাথায় সূর্য এলেই বজ্রপাত হঠাৎ আলো তীব্র এলেই অবাক হয় অন্ধকারে ধুঁকতে থাকা চাষআবাদ খুড়ছে কবর অহংকারের শেষ সময় পথের কাছেই চিনতে এলাম পক্ষপাত৷ © প্রভাত ঘোষ

ছায়া

নিজের ছায়ার কাছে বসে আছি রবিবার, দুপুরের ছাদে দেখছি কিভাবে সূর্য নড়ে গেলে সরে যায় ছায়া আমাদের মায়া দূরে ঝাঁক পায়রার দল সারি বেঁধে উড়ে যাচ্ছে ঘুরপাক খেয়ে ফের ফিরে আসছে বাড়ি আমরা তার কতটুকু পারি বড়দিন, জন্মদিন সব ফিকে হয়ে আসে সময়ের পথে তবু কেউ ধরে থাকে, ব্যতিরেকে সমস্ত লাঞ্ছন আলো জ্বালে, বলে কর্নেল আউট হয়ে কত দিন বেঁচে থাকে বর্ডারের ফাঁক সময়ে ফারাক আর মায়ায় বাঁধন পাহাড়ে দিনের পর রাত নয় মৃত্যু নেমে আসে যেটুকু দিনের আলো - চেখে নাও, দেখে নাও, বেঁচে নাও প্রকৃতির ঋণে যেটুকু জীবন আছে দিনে আমরা সব সন্ধানী ডুবুরি মৃত্যু আসছে জেনেও আমরা উজ্জাপন করি। © প্রভাত ঘোষ 

রক্তাক্ত ঘুঙুর

ঘুঙুর ভেঙেছে যার, রক্ত ঝরা জমিনে ছয়লাপ বিধবার কাপড়ে ছিটিয়ে— ধুয়ে ফেললে জ্যোৎস্না আর নিংড়ে নিলেই পাপ ভুলে যায় ক্ষমাও সংলাপ শব্দের প্রকৃতি এসে জনান্তিকে দিয়ে যাও আলো চড়া রোদে দৃষ্টি দিলে কালো ফুটোয় চাঁদের আলো, চালা ঘর তবুও রঙিন ভাঙা লবঙ্গের ঝাঁঝে প্যার বিচূর্ণ লঙ্কার বুকে গোপনে লুকিয়ে থাকে মারণের বিষেলা ক্যান্সার কোথায় ধুলোর ঝড়, যেখানে ধুলোর মুঠি চোখে নিজ হাত, নিজের বিচার— ঘাড়ের উদ্দেশ্যে নিজে কুঠার ওঠাবে না কি হাত ধুয়ে সাজাবে বিহার...

ঝালরের শোক

(১) একদিন মহাকাশ নড়ে যাবে, ভূকম্পের আড়ে যে লুকিয়ে রাখা উষ্ণ প্রস্রবণ  পুড়িয়ে দিচ্ছে চামড়ায় ঢাকা জীবন্ত ঝালর— প্রাণবন্ত পাখিটির ঘর ঢুঁ মেরে লণ্ঠণের বাতি ঠেলে জ্বলে উঠল চাতালের খড় মুখোশে লুকিয়ে থাকা মিথ্যের বহর৷ শোনো শোনো ওইখানে চিৎকার দাউদাউ স্বার্থের আগুন প্রতিরোধ, প্রতিবাদ নিবারনে ধেয়ে আসে খুন৷

অন্ধকার পথে (১১)

১১) কোথায় চলেছ — যেন মনখোয়া ডিঙির নাবিক উজাড় প্রান্তর যেন ধোঁয়ার প্রতীক হয়ে ভ্রমে ভ্রমে ভুলিয়েছে দিক কাজ আছে আজ নেই, কাল আর কাল-এ ঘেরা জাল ঝুনঝুনি বাজে ওই— ওপারে দাঁড়িয়ে মহাকাল৷ পরিণত ফল হয়ে যদি কোনো চারা দিতে পারো আগামী সূর্যের মতো নাম জ্বলে উঠবে তোমারও ©প্রভাত ঘোষ

কুসুম কানন

আরও একটা গান আমি লিখব জীবনে৷ ডুবতে ডুবতে জীবনের সমস্ত হারিয়ে ফেলা নিশ্বাসের বিশ্বাসকে টেনে ধরার গান৷ অনন্তকালের সব কুয়াশার ডানা ছেঁটে ভালবাসার তীক্ষ্ণ আলোয় নিজেকে ফিরে পাবার গান৷ স্বপ্নহীন বাঁচতে চাইনি কখনোই, অন্ধকার মৃত্যুর ঢেউ এমন আছাড় মারে— জীবনের চোখ দিয়ে আঁকা যতো ক্যানভাসের রং সব পুড়ে যেতো হয়তো আগুনে৷ তখন'ই কবিতা থেকে উঠে আসে আর্তনাদী হাওয়া৷ সে হাওয়ার বুকে হাত রেখে সে'ই বলেছিল ভালোবাসি, সত্যি ভালোবাসি৷ আঘাতে আঘাতে মৃতপ্রায় এক উন্মাদের ছিন্নভিন্ন ঘর আগলে ধরে বলেছিল— এ জীবনে আরও একবার বিশ্বাসের হাত ধরে ফিরে এসো সুবিশাল মুক্ত ধরাতলে, এখন'ই জন্ম নেওয়া বনটিয়া সোনাঝুরি ডালে... তার সুরে সুরে— আধভাঙা মনে... ভালোবাসা মুক্তি পাক বসন্তের কুসুম কাননে৷  ©প্রভাত ঘোষ

অন্ধকার পথে (১)

১) দুটো পাখি জড়াজড়ি দুধ উল্টে পড়ে আছে মেনি কিছু পাতা, ঝরা ফুল, ওরা আসছে— ফাঁকা রান্নাঘর তখনো শুনিনি কার পথমধ্যে লুকানো কবর মেনি আর উঠে এসে ভেজা নাক ঘষে না জামায় পাশে প্রভু অচেতন,  অসহায়, মৃত্যু বুঝি বিভেদ করে না দ্বেষ, ঘৃণা আর প্রার্থনায়! © প্রভাত ঘোষ

বৃষ্টিতে যারা হাঁটেনি কখনো

বৃষ্টিতে যারা হাঁটেনি কখনো ৪) তাদের কি ক্ষমা করবো আর? এই পথ দিয়ে যারা এসেছিল না ফেরার ছিল অঙ্গীকার যে যার নিজের মতো নদী হয়ে বেছে নিল পথ কখনো কখনো কাছে যাই ছেড়ে যাওয়া স্রোতে                ডুব দিয়ে তাদের ফেরাই।

ধারা

আধো আধো ফুটে গেছে ফুল যেটুকু কাঁকর ছিল তারই মাঝে সেচ, চাষাবাদ প্রার্থনা আকুল, যেন খরা ধুতে এইমাত্র বৃষ্টি আসবে ধেয়ে জীবনের স্রোত ধারা বেয়ে— সকলের আনন্দ সংবাদ কোন্ পাতা নষ্ট হয়ে ধীরে ধীরে পড়ে যাচ্ছে ঝরে তার কোনো ছাপ মাটি রাখছে না তোমার অধরে মৃদু মৃদু তাপ তারই মাঝে বেড়ে ওঠা প্রকৃতির বসন্ত সংলাপ যে যার স্বপ্নের দিকে যায় হাতে হাত মিলে গেলে ফুটে ওঠে নতুন অধ্যায়

পলেস্তারা

এক বিছানায় চাদর বদল, নতুন কোনো আকাশ ফেলছে মুড়ে আমায়, তোমায় শোনায় কোনো গল্প যেনো নতুন করে আঁকা কোনো কনস্টেবলের চিত্র হারিয়ে ফেলে আমায়, আমি আমার কাছেই জিতব এক একটা দিন শুকনো ভালো, মৃত্যু ভালো, জানে— এই পৃথিবী নতুন করে স্বপ্ন দেখার মানে কুড়িয়ে রাখি শুকনো পাতা শিউলিতলায় বসে মুড়ছে হাঁটু, ঝুঁকছে মাথা শরৎ যেন স্বপ্নদাতা পেছন ফিরে দেখতে পেলাম— পুরোনো রং, নষ্ট যত পলেস্তারা পড়ছে খসে হাওয়ার কাছে গন্ধ চিনি, আস্ফালনে ভয়— পুজো যেনো বলতে আসে সকল ঝোঁকার অর্থ কিন্তু নিচু হওয়া নয়৷ © প্রভাত ঘোষ

নজরানা

মৃত্যু আমার অন্ধকারে, মৃত্যু আমার মাথায় পায়ের তলে বৃষ্টি জমে                                   জং ধরেছে বাঁচায়৷  কে কোন খাতে ঠুকবে বলে                              পেরেক নিয়ে বসে ড্রেনের ভেতর পদ্মকে কেউ মেরেছে আক্রোশে এই কদিনের জংলি হাওয়া                 চিনতে শেখায় ডানা — দেখিয়ে দিল শিক্ষা আমার প্রকৃত আস্তানা৷ যুদ্ধ আর এক নতুন সিড়ি                            বিদ্রোহী গন্তব্য — যে হাত আমায় দিক চেনালো তাদের কথাই ভাববো৷ উল্টো হাতে গুনতে থাকা কর্দমাক্ত সন্ধ্যা ঘৃণার চোখে পেরিয়ে আসি                                   আস্ত অলকনন্দা৷ এই ক'দিনের জংলি হাওয়ায়,                                        নতুন ফুলের গন্ধে এক গোধুলি'ই নজরানা দেয় তারায় ভরা সন্ধে৷ © প্রভাত ঘোষ

ইগো

প্রকৃতি সহায় হলে মেঘ ওঠে, গর্জনকে হাতিয়ার করে  নিয়তই ছড়ায় হুংকার ভুলে যাচ্ছে ভিটে-মাটি , ধুলো-বালি, ফেলে আসা জামানার পথ — নিজেকে পরখ করে , একটু পেছন ফিরে দেখা যদি যেত  হোঁচটের ক্ষত, পতনের দান হারানো জীবনরথ বেড়ে ওঠা ইগোর সমান ভুলে যায় অপরাধী, অপরাধ ভুলে যায় কিছু? যেটুকু বেড়েছ মেঘ— সবই মাটি, জল থেকে পাওয়া এত যে উড়েছে সেই ধূলায় গড়াবে বেপরোয়া‌‍‌‌‍‍।

দহন

আমরা যারা মরতে জানি, মারতে জানি নিজেকে কোপ; প্রতিবাদের পাতায় বসে সহনশীলতায় ঘাড় নামাবো, আমার কিসের দায়? ক্ষণিক সহন, আগুন বরণ, ঝলসে দিলে মুখ এক আঙুলে চালাচ্ছি দেশ এমনই উজবুক বিষাক্ত শ্লথ গিলছি বসে, কিসের অভিপ্রায়— নেশার সন্ধ্যায় আগুন আমার শৈশবাঘাত, আগুন ভবিষ্যত শুকিয়ে গেছে, শুকিয়ে গেছে পথ আর যেটুকু রইল বাকি সস্তা যখের ধন আঁকড়ে ধরা আগুন যেন আমার'ই প্রাক্তন পুকুর পাড়ে ধারের ধোঁয়া, মইয়ের ওপর ভাত ছিলিম যেন আস্ত যুবক, ঘুঙুর হারা নাচ— তবু কোথাও টান পড়েছে প্রতিবাদের ভাষায় সহনশীল অভ্যাসে— আগুন আমায় পুড়িয়ে দিও এগারশোর গ্যাসে। © প্রভাত ঘোষ

꧁ বারিষনামা (১৫) ꧂

একদিন, কোনোদিন এরকম'ই তুমুল বর্ষণে কতিপয় সময়ের টুকরোগুলি জুড়ে যাবে মনে ঝড় আর পাতার আওয়াজ ধুয়ে যাওয়া বিরক্তের কাজ; সেই খোলা জানালায় বসে একদৃষ্টে ভাবনার আকাশে দুজনের ভাবনায় মিল কোনোদিন দেখা নেই, ওপারেও পরিচয়হীন। রঙিন পাতায় যেন কবেকার আঁকা সাদা - কালো রঙের আল্পনা এই মিল লক্ষ - কোটি জনে। আজীবন স্বপ্নের স্মরণে মেঘের হৃদয় ধোয়া ছিটে এসে মুখে লাগে — (বুকে) শান্তির শলাকা অভিসার পূর্ণ শুধু স্পর্শ হাওয়ার মতো ফাঁকা কে বলবে— কে নেই, কে আছে— যারা চিরকাল ধরে মিলনের স্বাদ পায়— ঘর বাঁধে বৃষ্টির আকাশে। ©প্রভাত ঘোষ

নীব

বিষাক্ত পাতার ঝাঁঝ, অধর্মের বান ছাপ থাকে আজীবনকাল কার হাতে কী দিয়েছ সব জানে নধর কঙ্কাল ধারণা ও ধারণার নীব— আয়নাই বলে দেয় কার সত্তা কতটা গরীব লেখা থাকে পাতায় পাতায় অন্ধকারও যত্নে রাখে ছাপ ওল্টালেই দেখা যায় নোংরা সব পত্রের আলাপ কোনো কোপ স্থায়ি নয় রেশ থাকে সমস্ত ক্ষোভের সব কাদা ধোয়ার ক্ষমতা থাকেনা গঙ্গার ঢেউয়ের © প্রভাত ঘোষ

প্রতিবন্ধকতা

ঢুলে পড়া চোখ, অতন্দ্র প্রহরী— কড়ি তুলে ঘুমায় যে জন ভাবে এ'ই প্রকৃত আপন কেউ ভালমন্দ রেখেছে সাজানো আমি - তুমি ভেদাভেদ স্থাণু বলীয়ান দিক— সমস্ত প্রদীপ ছুটে চলে যায় আলো করে ঘর তবুও বর্বর যারা মাথা দিয়ে ভেঙেছে শহর কড়ি দিয়ে জ্বালিয়েছে গ্রাম তাদের সেলাম যারা পোড়া গন্ধে চেপে গেছে বুক আমাদের ভাষায় কুলুপ দেখি আর মরে যাই; এইটুকু চিরন্তন প্রথা— শব্দহীনতা প্রতিদিন ব্যাক্ত করে আমাদের প্রতিবন্ধকতা © প্রভাত ঘোষ

বাসন্তিকারসাজি

শাখায় শাখায় রঙিন পুঁতির শাড়ি বসন্ত রং আনলো বলে আবীর এসে ফুলের ওপর করেছে বাটপাড়ি এমনতরো মেজাজ অতর্কিতে ভালবাসায় ভেজা— স্পর্শে যেমন পলাশ পলাশ হাসি ঝাউয়ের মতো বাড়ছে যেন বাসন্তিকারসাজি অনেক চোখই হলুদ যেন ভোরের আকাশ  তাদের ডেকেছে কারশেডে তোমার সাথে মিলবো বলে আসি নিয়ম করে অদম্য এক জেদে ©প্রভাত ঘোষ

অন্ধকার শেষে (১১)

১১) কোথায় চলেছ — যেন মনখোয়া ডিঙির নাবিক উজাড় প্রান্তর যেন ধোঁয়ার প্রতীক হয়ে ভ্রমে ভ্রমে ভুলিয়েছে দিক কাজ আছে আজ নেই, কাল আর কাল-এ ঘেরা জাল ঝুনঝুনি বাজে ওই— ওপারে দাঁড়িয়ে মহাকাল৷ পরিণত ফল হয়ে যদি কোনো চারা দিতে পারো আগামী সূর্যের মতো নাম জ্বলে উঠবে তোমারও ©প্রভাত ঘোষ