Posts

Showing posts from August, 2019

শ্বাপদ উল্লাস

প্রথম ভোরের কুঁড়ি, শিউলি বা শেফালির স্নিগ্ধপ্রান চঞ্চলা যুবতি; প্রজাপতিটির মতো উঠোনে, বাগানে৷ উড়ে যেতে যেতে ঘরে ফিরে আসে পূজার থালায়৷ মা স্নেহে ছাড়িয়ে দিচ্ছে চুল৷ সন্তান প্রসব না কী প্রাজন্মিক ভুল!! উন্মাদ প্রবণ জরা ভূমি, কার শাপে জন্ম দিলে যৌনতার ঘ্রাণ? বৃশ্চিকপ্রমান.. হিংস্রতার লৌহদন্ডে ফুলে ফুলে ঘা; নিজেকে মাড়িয়ে ফেলে স্নেহের পাদুকা৷ পূজার ঘন্টার মাঝে চণ্ডালের উল্লাস হুঙ্কারে মায়ের জঠরে বেড়ে ওঠা শ্বাপদের হাত লুঠে যায়, শুঁকে নেয় কুঁড়িটির যৌবন সুবাস৷ নৃসংস কাপালিক অন্ধকার মাঠে বুভুক্ষু বান্ধবের সাথে মায়ের সামনে ছেঁড়ে জঠরের ফুল আর্তনাদ, যন্ত্রণায়... মা বললেন.. "ও বড়ই ছোট; বাবা তোরা একে একে আয়৷"

সমীকরণ

কী ক্ষয়, সন্দেহে; বিশ্বাস উজাড় করে ত্রাণ কুয়াশার ঘরে৷ জমা সমগ্র হৃদয় খতিয়ান ভুলে, ফুলে ফুলে ভ্রমরেরা                                 দূরত্ব বিয়োবে৷ বিরূপ প্রকট হলে অনুরাগী স্বর ক্রমে মৃত বিরহী দয়িত; সন্তুষ্টির পরিধি বাড়ালে... জবাবে ক্ষয়ের দাগ, প্রত্যাশায় গ্লানি খুলে আসা সম্পর্কের ব্যাকরণ লেখেনি পাণিনি৷

কণ্ঠরোধ

সিড়িটি পেরিয়ে এলে ঘর মৃত্যু ও জ্ঞানের মাঝে ক্ষিদের শহর৷ জখমের কণ্ঠ পেষা গান যা কিছু দেবার ছিল, বিদ্রোহী বয়ান শান্তি প্রিয় কল্কের ধোঁয়ায়৷ মেধার ফসলে মূঢ় প্রাচীরের চিহ্ন পাওয়া যায়৷ দিকে দিকে লেহনের সুর উল্লাসমধুর৷ আত্মহননের আগে লাথি খায় পঠনের স্তব ক্ষিদের দুয়ার থেকে ফিরে গেলে সমুহ গৌরব৷

বিলাপ (অপ্রকাশিত)

দৌড়; দৌড়ে তৃষ্ণার দশক পিছনের গাছ থেকে ঝুলে, ঝোলে বাদুড় হৃদয়, বন্যার চেয়েও বড় দারিদ্রের শোকে; বিলাপের শ্বাস৷ মশারির ওপর জোনাকি এসে বসে, ভাললাগা ছুঁয়ে দেখা বাকি৷ প্রিয় গন্ধ, প্রিয় ফুল, প্রিয় পাহাড়ের গায়ে ফোটা সৌন্দর্যে বিরহবুলি জ্যোৎস্নার গালিব৷ প্রণয় সঙ্গিনী নয়, নিরাশায় আলো দেখা যায় স্পর্শ থেকে দূরে৷ দয়া করো গো কবিতা নিজেকে স্থাপন করো আমার ভেতরে৷

জন্ম

এই ক্ষণে ভাললাগা প্রকৃতির কাছে দু-দণ্ড বসতে ভাল লাগে, ভালবাসতে গেলে তাকে জন্ম দিতে হয়৷

ভাঙা জ্যোৎস্নার সঙ্গম

শিরিষের ঘেরাটোপে এমন বিমুগ্ধ রাতে... খুনসুটিতে বারে বারে চাঁদটিকে গিলে নিচ্ছে মেঘ৷ পাশের ঈশ্বরগৃহ তত লাল হয়নি এখনো.. যতটা এগিয়ে গেলে চিৎকারের শব্দ শোনা যায়৷ কিছু দূরে শ্মশানের শেষ গন্ধ অহং ঘুচিয়ে দিতে আলিঙ্গনরত৷ সেই মাঠ, গোলপোস্ট, তালগাছে সপ্তাহের ক্ষিদে জমে থাকে৷ দামোদর শুয়ে আছে কয়েক কদমে, নির্বিকার অর্ধমৃত পাখিটির প্রাণ দু-ফোঁটা জলের পাশে বিষাক্ত দ্বীপে৷ আষাড় আসেনা তবু কবিগুরু বেঁচে থাকে রাতচরা পতঙ্গের প্রাণে৷ জোনাকির দেহত্যাগে প্রেমিক পেঁচার ভীড়; দীর্ঘশ্বাসে প্রেম আর আঁধারে অতীত বেঁচে থাকে৷ রাস্তাটিও চলে গেছে সুদূর মিশর থেকে যতদূরে মৃত সভ্যতার ধ্বংসাবশেষ... নীল ফোয়ারার৷ নীলনদ, আকাশ ও প্রিয় অতীতের রঙে বিষের দহন, আমৃত্যু ভোলার কোনো অবকাশ নেই৷ এই মাঠ; মাটি গন্ধ; হাওয়া ও পাতার প্রেমে  বাইজির নৃত্যগৃহে সাপ্তাহিক বিরহসঙ্গম৷ ধ্বংসপ্রায় ব্যাবিলন গান ধরে স্খলনের পরে৷

কক্ষপথে

সীমানা ছাড়িয়ে অন্য কক্ষপথে প্রবেশ করায় পৃথিবীর ধার ঘেঁষে চলে গেল উত্তপ্ত তারাটি৷ পোড়া প্রকৃতির গন্ধ আমার সমাজ যেন উষ্ণতাকে গ্রহন করেনি৷ বাসের ভেতর বসে স্তন ছুঁয়ে চুমু খাওয়া যুগলের কাছে আমি এক নির্বাক পৃথিবী৷

বারিষনামা # ১২ (অপ্রকাশিত)

পাথর হয়ে দাঁড়িয়ে আছে, ভেতর ঘরে কে? মারবে বলে মেঘের ভেতর আগুন জ্বেলেছে৷ আলিঙ্গনের বারিষনামা বিরহীপ্রত্যয় আজ যে দিকে মেঘ জমে না, আমার বাড়ি নয়৷ চার কাঠা ঘর, ভীষণ গভীর, কাঁকড়াবিছের জাত পাঁজর খুলে মেঘ এনেছে বিরহসংঘাত৷ অন্নদায়ীর প্রলোভনে গঙ্গাপারের টান... উৎপাদনে ধ্বস নামালে মৃতেরই কল্যান৷ বিষের বুকে আলোকপাহাড়, সমূহ সংশয় গাছের নিচে উৎসবেরা মাদক প্রবণ নয়৷ কোন্ বাঁধনে আটকে যাবে স্বভাবি আহ্নিক? রাস্তা শেষে শুনবে ঘুরে বাঁচনসঙ্গীত৷ ওই পারে গাছ, বিশাল পাহাড়... খাদের পরে মৃত দাঁড়িয়ে থেকো, দূরের গানেও শান্তি অভিপ্রেত৷ যাবার আগেই ভূমির মতো নিরন্ত কর্ষনে ছিন্ন হলে নৃত্য হত পাখির স্পন্দনে৷ আয়না শেষে নিজের মমি খাদ্যপিরামিডে.. বারিষনামায় মন ভিজিও বিরহ আঙ্গিকে৷

বারিষনামা # ১১

চিত্তদাহে ভেজা যন্ত্রণায় মেঘের দরবারে বিচার চায় বারিষ দিন অনুরাগীর ঘরে অতৃপ্তের বুলেটি ঝড়, গান জগজিতের দোসরহীন৷ পুরোনো অধ্যায়ে ভীষণ স্রোত প্রেম, আরেক নাম কান্না, হোক আবেগ ব্যায় মেহগনির তলে প্রণয়প্রাণ বিরহে ঝরেনা যে.. মৃতের নাম সমীক্ষায়৷ মালগাড়ির ধ্বনি স্মৃতির তট জানালা রড থেকে ফেরত পথ শৈশবের মল্হারের টানে বারিষহাত উঠোনি শিল্পীর মনস্তাপ অভিসারের বৃষ্টির চে' বড় গামছা কই? যন্ত্রণার ভীড়ে রবির বই সামুদ্রিক ঘরের কোণ ঘিরে উৎসেচক অতীত ছুঁড়ে দেবে নতুন পথ প্রাসঙ্গিক৷

বোধি

এমনই সংগ্রাম, এই শেষ এই শুরু তলিয়ে যাবার বড় ক্ষীণ প্রবনতা উৎসর্গে জড়তা৷ মোমের পাথর ভেবে দ্যুতিতে জুড়াবে.. তপস্যাজীবন শেষে আমরন পৃথিবী পোড়াবে৷ রাজার বালিশে শুয়ে রাজা ভাবো                                   রাজাকে ভাবোনা? ঘুমেরও ভেতর বহু তৃষ্ণার যন্ত্রণা৷ দিয়েছে যে দেবার আশায় তার চিতাভষ্ম মেখে শান্তি যদি পাও নিজেকে পোড়াও, ওড়াও দ্যুতির ভার সন্যাসের গাঁয়ে গৃহ ছেড়ে কর গৃহদান৷ নতুবা হীরে ও দ্যুতি বোধ ছাড়া দুজনে সমান৷

ক্ষয়

লেখাহীন দিনগুলি গলায় তৃষ্ণার কাঠ, শুকিয়েছে শ্মশানের পথে৷ হঠাৎ বসন্ত শেষ, গ্রীষ্মেরও বিশ্রামাগার নেই৷ এমন সময় টুকরো টুকরো কিছু মেঘ এসে দাড়িয়েছে দূরে৷ আকুতির ভাষায় বোঝালো যেন তাদের প্রেমিকগুলি ফুটন্ত ক্ষুধার কাছে বিক্রি হয়ে গেছে৷ সবে মাত্র রক্তাক্ত রাস্তার বুকে কয়েক ফোঁটাই শান্তিজল ছেঁটালাম, তখনি পেছন থেকে তাড়া দেয় জ্বালাও.. জ্বালাও.. হে ক্ষুধা ক্ষমার চোখে দেখ, প্রেমের বিক্রয় মূল্য ধার্য করব এমন বাজারু হতে এখনো পারিনি৷ ও পথে যাবনা বলে ত্যাগ করি চাকা, নদীর বুকের মতো প্রেমিকারা এতটা আদর দেয় সঙ্গমের আগে... প্রার্থনা করেছি, সে প্রেম আমায় যেন মৃত্যুদণ্ড দেয়৷ নির্বান কেমন হবে.. লঞ্চের কোণায় বসে বারিষের ঢেউ এসে শিখিয়ে দিয়েছে৷ কানে কানে বলে গেল বিরহ মৃত্যুর চে'ও ভারি৷ ক্ষয়হীন শিলান্যাস কখনো কি ভূমিকে উর্বর করতে পারে? যে ক্ষয় সূর্যের মতো সহনশীলতা রাখে তার কাছে অমৃতও ভিখারি৷ নকশা থেকে বেরিয়ে বুঝেছি, এই প্রেম, ভালবাসা দূরত্বেরই দান৷ সুপ্ত বীজ জেগে ওঠে বহু বহুকাল পরে পৃথিবীকে শান্তি দেবে বলে৷

পিতামহকাল

পিতামহকাল থেকে কাঁচের দূরত্বে থেমেছে সময় যেন গতি কেড়ে নিয়ে গেছে কেউ মুহুর্তের দুশ্চিন্তার দেশে৷ প্রতিটি সকাল সেই দেশে একদিন জন্ম পায়৷ বর্ডারে যতটা ভয়.. তার কোন ছায়া নেই সৈনিকের চোখে৷ নিষ্প্রভ আলোকে বর্মের আড়াল থেকে সে দেশেও হৃদকণ্ঠী ফুল ঘোরে ফেরে সুরভি সীমায়৷ গরল সবুজ হতে তার কাছে যায়৷ ছুঁড়ে ফেলা যন্ত্রণার ভার সজত্নে কুড়িয়ে রাখা কোকিলের স্বর স্পর্শ করে পিতামহকাল সম্পর্কের শরিক বাড়ায়৷ ওই ডাকে থেমে যাওয়া মৃত্যুরথগুলি ঘুরে যায় শান্তির ব্রুণেই প্রলয়ের কান্না যদি যুগে যুগে আসে... কোকিলের পুনর্জন্ম নেই?