Posts

Showing posts from 2019

বিলাস এ বেনারস

১) অহং উত্থানভূমি, রাত্রিকাল পেছনে ছাড়িয়ে যে বেদ পড়েছি এতকাল, তার দ্বারে টোকা দিতে আসি৷ — ক্যায়সা হ্যা ইয়ে বেনারস, হামারে শহর জ্যায়সা হি হোগা৷ ওহি লোগ, ওহি গঙ্গা যো কলকত্তা মে হ্যায়৷ মৃত্যুর খাটে বসে জীবন ফ্যাকাশে লাগে আর, ধোঁয়ার ওপাশে কিছু ধাঁধাঁ৷ এ জন্ম যৌতুক নিয়ে আসে, ঋণ থাকে আকাশে ফেরার৷ বোধ-ব্যাপ্তি-বিস্ময়ের প্রাপ্তি থেকে খুলে যায় নতুন দুয়ার৷ — জি কাঁহা চলেঙ্গে ভাইয়া জি, বি.এইচ.ইউ.. সারনাথ.. অসসি ঘাট.. জহন মে সন্দেহ্ ঔর দিল মে জিজ্ঞাসা আমাদের পথিক বানায়৷ একটি 'ই' এর তফাতে লালসাকে বিসর্জন করে দেওয়া যায়৷ পরিচিতি পেতে নয় পরিচিত হতে গেলে মুক্ত হতে হয়৷ এই স্বস্তিচায়ের দোকানে ব্যাবসা বুনতে এসে কোনো তাঁতিই মরে না৷ অথচ কী চমৎকার স্বাদ৷  — ভাইয়া অসসি ঘাট জানে কে লিয়ে টোটো ইয়াহা সে মিলতা হ্যা? — জি  — কিতনা লেতা হ্যা? — শ রুপয় রিজর্ভ মে, আপ তিনজন হ্যা না... এ ভইয়া ইয়ে তিন জন কো অসসি ঘাট পহচা দো, কিতনা লোগে? — দেড়শ — সুবহ কা টাইম হ্যা, কিউ এয়সে বোলতে হো... শ মে লেকে যাও৷ — ঠিক হ্যা ভাইয়া জি আপ লোগ আইয়ে ইসমে৷ তফাত তুমিই করো ঘৃণা ও প্রেমের, স্বরের ভেতর ঘরে সহবত যতটুকু থাক

সেনোরিটা

পায়ের পাতাটি ছাড়া আর কিছু দেখিনি, কিচ্ছু না৷ এক চিলতে নূপুর চঞ্চলা, আর বেহায়া গোলাপি নেলপলিশ৷ কখনো ঠোঁটের দিকে দেখেছি বোধহয়, এমন শীতের রাতে উষ্ণতা কি তুচ্ছ করা যায়? ফাজিল বাতাস এসে কুর্তিটিকে দুলিয়ে চলেছে! এতবড় স্পর্ধা শুধু বাতাসেরই থাকে৷ কার সাথে এসেছিলে... আর কে তোমাকে নিয়ে গেল বলো৷ কতকাল.. বহুকাল ধরে থেকে যাবে নভৃত কুটিরে৷ আর কোনো ভয় নেই হারিয়ে যাবার৷ নিজের বউয়ের সাথে মেলাতে পারিনি৷ মিলবেনা কখনো; যেমন টপ্পার সাথে আউদের মিলন ঘটেনি৷ জীবনের গর্ভগৃহে আরতির অধিকার সবার তো থাকে না সেনোরিটা৷ শুধু কিছু সুর থাকে মাঝে মাঝে যার কাছে পরিচয়হীন হতে যাওয়া৷ আমাদের পরিচয় কই? হেটে যেও বিভাজিকা ধরে, সেখানে আমার বহু প্রতিবিম্ব শুয়ে আছে শব্দহীন ভাষার কবরে৷

পাঁচগুচ্ছ

১) দিনান্তে প্রবৃত্তি দাঁড়িয়ে আছে মুহূর্তেই শূন্যে ভাসবে বলে৷ এখনো দুয়ার বন্ধ, তার আগে বেঁচে নেওয়া, খেলা৷ সময়ের মুখ আঁকা পর্দাঘেরা ছায়াটির ছলে মৃত্যুর উল্লাসে লিফ্ট নেমে আসে; শেষ কালবেলা প্রশ্ন করে.. শূন্য হয়ে ক'টি পাত্র পূর্ণ করে গেলে? ২)অতিথি জ্যোৎস্নাকে ভালবেসে এসেছ কি জঙ্গলনগরে? ভাল করে লক্ষ্য কর, কাছাকাছি আর কেউ নেই বৈঠক খানায় শীত-মজলিশ নেই দ্বিপ্রহরে নেই; নেই; বিষ ছাড়া আমাদের আর কিছু নেই.. কবে যে প্রেমের চেয়ে বড় ধর্ম ঢুকে গেল ঘরে!! ৩) ঘুণ দূর থেকে ভাঙনের প্রতিধ্বনি শোনো হিতাহিত জ্ঞান জ্বেলে ধর্ম এলোকেশী নিঃস্বতার পথে প্রেম, শতাব্দী পুরোনো৷ নিজেরই ঘরের বুকে ঘুণেরা বিদ্বেষী... যাকে ঘর মানি তাকে ভাঙিনি কক্ষনো৷ ৪)মেয়াদ ছায়ার ওপরে সূর্য অস্তগামী, ক্লান্ত৷ পথের দুপাশে ফুল মৃত, পাতা শুকনো বিচ্ছেদের এত সুখ মেয়াদ কি জানতো? ধূলায় ওড়ালে ক্লেদ থিতু হয় দুঃখ বড় হয় পথ আর পথিক বাড়ন্ত৷

গুপ্তধন

কোন দুয়ারে ঠুকবে মাথা? গৃহস্থে দ্বার বন্ধ পথ হারানোর দুঃখে পথিক আজন্মকাল ক্লান্ত৷ তুষের ধর্মে নরম তুলো বুকের মধ্যে পুড়লে গন্ধে মহান বৃক্ষ তোমার কঠিন জগত ভাঙবে? দু-হাতে দুই ধর্ম আমার, ধ্বংস এবং ঝর্ণা কাটলে শুধু মৃত্যু হবে, রক্তে ঘৃণার বন্যা৷ জড়িয়ে ধর, পুষ্প ছোঁয়াও, তোমারই নাম সভ্য সভ্যতাকে জ্বালিয়ে দিলে অপূর্ণ গন্তব্য৷ তবুও যদি শান্ত না হয় দণ্ড দেওয়াই ধর্ম৷ অনুরোধের দাবির কাছে বজ্র এসেও থামত চক্ষে প্রেমের বার্তা দিলে, কণ্ঠে ভাষার বর্ম... এক হাতে ঢিল, পশ্চাতাঘাত, সইতে বড়ই ক্লান্ত৷ প্রতিবাদের ভাষাই এবার চিনিয়ে দেবে তোমায় কোন বস্তায় গোপন আগুন লুকিয়ে ছিল বোমায়৷

সমগোত্রিয়

বিয়োগের পরজন্ম গতিবিধি লক্ষ্য করে চলে সন্দেহ বিয়োলে প্রিয় পাখিটিকে মৃত্যুদূত ভাবি৷ কেউ ই জানিনা তার বিপরীতে কত অগ্নি, লাভা জমায়েত হয়ে আছে পৃষ্ঠতলে ফুলের আড়ালে৷ হঠাৎ মহুয়া পাখি ঝাপটা দিয়ে ওড়ালে মৌমাছি বাঁচার তাগিদ নিয়ে ছুটে ফিরি হতভম্বলোকে; কদম্ব গাছের কাছাকাছি এসে থেমে যাই সুখে৷ কত না শোকের ধোঁয়া গায়ে লেগে সুগন্ধি হয়েছে! কিছুক্ষণ তার তলে বসে ভাবি মহীয়সী তুমি৷ প্রেমের নিঃশ্বাসটিকে এভাবেই চিনি৷ ক্রমাণ্বয়ে কেন্দ্রে যার প্রেমজন্ম আসে, পরিচয়ে আগুন গোত্রিয়৷ সময়ের নিরলস ক্ষয়ে... তুমি ও আমার মাঝে যোগসূত্র বিরহ জাতীয়৷

ব্যাধিহত্যা

জ্যোৎস্না মেখে লক্ষ্মীপেঁচা উড়ে গেল অন্ধকার ঘরে৷ হা হুতাশ চাঁদ তাকে খুঁজে পেতে দেশলাই জ্বালায়৷ জনতা মেলায় যদি আধকাটা দেহ পড়ে থাকে, কারো শিহরণ জাগে, কেউ প্রতিহিংসাপরায়ণ৷ জিঘাংসার মৃত্যু হলে সে হাতে পাথর তুলে নেয়৷ কোন্ ব্যাধি নিয়ে গেল? কোন্ পরজীবী? ঘাতকের বেশ ধরে উল্লাস যাপন৷ এবার বিচার খাতা খোলে আর লিখে রাখে ক্রম দিনক্ষণ৷ চাঁদ আরও দিন গোনে রক্তক্ষয়ী রাতের আশায়৷ চিৎকারের শব্দ শোনা যায়৷ মাঝরাত; স্বপ্নদোষে মৃগিরোগ আছড়ে দেয় ঘরে৷ আমার শহরে যেন মৃত্যুগঙ্গা উজ্জাপনে আসে, সম্ভ্রম বরণ করে; পেশ করে রেস্তোরা সংবাদ৷ এত যে বিবাদ, তবু দুটি পরজীবী যদি মরে... ব্যাধিকে মারার মতো পাথর কি খুঁজে পাবে প্রিয়?

বন্ধনীর ভগ্নাশেষে

বন্দী রাখা স্নায়ুদের ঘ্রাণশক্তি ফিরিয়ে দিয়েছি৷ মুহুর্মুহ জলতরঙ্গ এতদিন গোপনই তো ছিল শ্রোতাহীন, পরিচয়হীন এক দেশে৷ দুরূহ আবেগ বিষপতঙ্গের বেশে, দংশনের মৃদু প্রকৃয়ায় তুলির ওপরে বসে ছবি আঁকিয়েছে এতকাল; যেন কোনো মহাকাল এক্সিবিশনের দ্বারে আছে৷ জল-আলো ছাড়া কে যে বাঁচিয়ে রেখেছে! অন্দর মহলে জমা ক্লোরোফিল পুড়েছে ট্রমায় জীবনের গ্রাস তুলে দিতে৷ যে যত পুড়েছে সে'ই পৃথিবীকে আলো দিয়ে যায়৷ নিজের ক্ষমায় নিজে থেমে যাই বিপথের মাঝে; সহস্র এস্রাজ থেকে ভেসে আসে জীবনের সুর৷ আমার এ পথ বহু দূর৷ ফিরে আসে পথ, পথে নতুন শপথ, আর পথিকের ধূলো মাখা গায়ে লেগে ধূপের সুবাস৷ স্নায়ুর ভেতর বেঁচে ওঠে জীবনের প্রতিভাস৷ দগ্ধ ছাইয়ের নিচে জমা থাকে কিছু ক্ষীণ আশা৷ পৃথিবীকে ছন্দ দিতে চুম্বনের নতুন প্রত্যাশা৷

সফর

যেন কতকাল ধরে বিস্ফোটের আশায় রয়েছি৷ আজ সেই মাহেন্দ্রক্ষণের শুভ দেখা৷ তবু কোনো পতাকা ওড়েনা; জয়হীন, স্বপ্নদৃষ্টি মুগ্ধতায় দেখে যায় খালি৷ প্রেমের আলপিন নেই যে মহাসাগরে ভূমি তার অতলে ঘুমায়৷ বিরহ ও অন্ধকার দুটি ট্রেন, ছোটে পাশাপাশি৷ ক্ষোভের সাঁড়াশি তবু নির্বিকার, তিক্ত অসহায়ে নিরুপায় বলে সে কি আঘাত করেনা? রিক্তের অধরে মৃদু হাসি দিতে সুর ধরে অর্ধনগ্ন বাঁশি৷ মনের আকাশি রঙে ধূসর এক জ্যোৎস্না ফুটে ওঠে৷ ঈদি চাঁদ-তারা যেন সহস্র শতাব্দি ধরে উৎসবের কাছে... বোঝেনা ভেতরে তারা কত দূরে আছে৷

আলোকপাত

বহু চারা পথপ্রান্তে পায়ের ঠোকরে গৃহ থেকে দূরে, উচ্ছিষ্ট মাদকে জীবন ও মৃত্যু থেকে ছিন্ন হয়ে ভিন্ন যার বাস; তার দেহে কতটা সুবাস? অন্ধকার খুঁটে নেয় তাকে৷ সময়ের বাঁকে কোনো পরিত্যক্ত মাঠে অচেনা জীবন যেন সুস্বাদু আহার৷ প্রিয় ক্ষণে মৃত্যু তাকে পিছুও ডাকেনা৷ বিষবৃক্ষ কার কাছে দায়ি? উচ্ছিষ্টের ধারাপাতে প্রেম যদি লিখে যেতে পারো, তুমি বা আমারও কোনো পরজন্মে দেখা ঠিক হয়ে যাবে নব্য যুগের প্রভাতে৷ মানদণ্ড হাতে মেপে নিও ক্রমশ সবুজ হবে দেশ৷ এতটুকু প্রয়োজন; এতটুকু আলোর প্রবেশ৷ রুগ্ন হোক, শক্তি দাও খুঁটিটি ধরার৷ ছায়াটির মৃত্যু যদি চাও, কায়াকে থামাও; দ্বিধা-কুণ্ঠা ভোঁতা, শুধু কর্মই ধারালো৷ ঘরে যদি না'ই জ্বালো আলো চাঁদের আলোতে তুমি কতটা বিদ্বান হতে পারো?

উদাসীনগঞ্জ

ছোট শহরের পাশে উদাসীনগঞ্জ, শেষ কোণে বসে আছে মাঠ৷ বহুকাল ধরে যেন সে'ই কোনো বিরহী সম্রাট৷ দূরে চার তালগাছে সূর্য নিভে ফুটে ওঠে রাত; বলয়ে ঘিরেছে যাকে কৃষ্ণচূড়া ফুলের মলাট৷  বাইকের পিঠে কেউ; কেউ হাঁটে, প্রেমের স্মরণে স্মৃতিস্নান৷ দু-পা মন্দিরের থেকে কখনো হাঁটেনা ভগবান৷  আকাশ তাকিয়ে দেখে একাকী চোখের তারা উঁচু;  যখন বৃহৎ ভাবো নিচু হয় ঘাড়, তোমাকেই অস্তিত্ব বোঝায়৷ শুধু শাক্ত হলেই কি মহাদেব আসেন বাসায়? এ মাঠের অন্ধকারে তারাদের স্নেহ, সমস্ত বিরহ গৃহে ক্ষীণ আলো পেতে দিয়ে যায়৷ মেঘের সীমায় যেন জ্যোৎস্নার চাদর মুড়ে রাতচরা পাখিদের শান্তি দিতে নেমে আসে কেউ৷ এভাবে হারিয়ে যাওয়া অন্ধকার বুকে আজও বিজেতাকে আঙুল দেখায়৷

সম্পৃক্ত

কিছুটা গোপন থাক অন্দরমহলে তারাটির বুকে যত দহন যন্ত্রণা আনন্দের মাঝে যেন নিভু নিভু জ্বলে ব্যতিরেকে সান্ধ্যকালে দ্বন্দ্ব, প্রতারণা৷ তবু ভালবাসা থাক, অবিমৃশ্য ধারা দূরে ঠেলে পুষ্পবৃষ্টি, বারিষের গান৷ হারানোর প্রয়োজনে কুয়াশাও আসে নিঃসঙ্গের প্রয়োজনে কবিতার ভাষা৷ দূর আলো, যাকে তুমি ভালবাসি বলো; প্রসারিত দ্বার তার, অন্তহীন পথ৷ যে জীবন তাকে প্রিয় দহন শেখালো সে ঋণের প্রতিদানে স্বর্ণের শপথ সে তোমায় মুক্তি দেবে, শান্তি দেবে আজ৷ উষ্ণতায় ক্লান্তি মুছে যুগের সফরে যুক্ত হয়ে তৃপ্ত হবে বিরল সমাজ, প্রেমটিকে রং দিলে অন্ধকার ঘরে৷ নিজেকে সাজিয়ে তোলো তারাটির কাছে চঞ্চল পায়ের কাছে বন্ধনের ফুল৷ হারানো সময় জানে কতটা ফ্যাকাশে, বাঁধন আলগা করা বিপদশঙ্কুল৷

মধ্যস্থান

গেঁথে নিই, পুঁতে নিই, নিজের ভেতর;  অবশিষ্ট যা আছে গভীরে,  হাতে নিয়ে নিঃস্ব হতে আসা৷ পুরোনো কাপড় ছেড়ে নিজেকে সাজানো যেন লুকানো আমিকে কোনো বিস্ময় প্রহর সজ্ঞা দিয়ে আকাশে ওঠায়৷ প্রথাহীন উৎসব দূরে ঠেলে যদিও বা আসে নির্মল বাতাসে প্রিয় গন্ধটুকু দিও  চুম্বক ও চুম্বনের মাঝামাঝি বসার সময়৷

মায়া

বিনাশের আগে যদি কিছু থাকে অমরপুরাণ,  প্রাণ তার কাছে ফিরে আসে৷ তৃষ্ণার আকাশে, ন্যুব্জ শরীরের ক্ষতচিহ্নে বন্যার প্রভাব নরম করেছে যত, কাঠিন্যের আড়ালে লুকিয়ে পরিপাটি করে রাখে পথ; আর সফেদ উঠান৷ ঝংকারে ঝংকারে কোন্ কঙ্কালের উলুধ্বণি বাজে! যেন তার রন্ধ্রে শেষ প্রেমিকের শরীর গজাবে৷ জীর্ণ এক পথ প্রিয় শ্বাস নেবে সুগন্ধির মাঝে; অবসান একজন্ম, কর্কট সময়৷ হে বৃক্ষ, আপন ভেবে যে তোমার উপাসনা করে ফুলেল সোহাগ দেওয়া তোমারও তো দায়৷ কণ্ঠটিকে সুর দিও গোপন মায়ায়৷

অন্তহীন

আশ্রয়ে লুকানো যত ভুয়ো প্রেম কথা.. বিদায় দুয়ারে লেখে তিক্ত নিরবতা৷ মুখোশের অভিমান শেষ দিনও থাকে নতুনের হাত ধরে অতীতের ফাঁকে৷ যে পাখিটি তীব্র রোষে বদ্ধগৃহহীন অন্য কোনো দ্বীপে তার স্বপ্নময় দিন৷ ক্ষীণ আলো জ্বলে থাকে মেঘের সীমায় বিরহ কঠিন হলে কণ্ঠ ছিঁড়ে যায়৷

কুহকস্রোত

অনুভব লেগে থাকে দেহে নয়; কুয়াশার ঘ্রাণ  যেভাবে শতাব্দি পরে সাদাকালো অতি প্রিয় ছবি আমাকে আমার কাছে আনে৷ আগুনও দেখেছি বহু, পুড়ে গেছি তারও চেয়ে বেশি৷ এমন নর্দমা যার সম্ভাব্য নিকেশি কিছু নেই৷ পর্দাপ্রিয় উষ্ণতায় বিপ্লব এসেছে, রঙিন পল্লব যেন ঘটা করে পন্য হতে চায়৷ কালো হতে হতে আলোকবর্ষের শেষে, গর্জনের চেয়ে বহু দূরে তার ঘর... সেই নদী ডুব দিতে ডাকে৷ গমক চঞ্চলা রূপে পরিত্রাণ করে নিশিশোক৷ অজানা কুহকস্রোত কী ভাবে যে প্রাণে মিশে যায়! সে কথা বোঝার পাতা নয়, তার পরিচয় শুধু মিশে থাকে পবিত্র পল্লবে.. পিশাচ আঁচের থেকে দূর কোনো স্নিগ্ধ অনুভবে৷

সংসার কথা

দু চোখে যন্ত্রণা তবু বিবশ এ হাত বহু দূরে ক্রমশ বিরহগাথা বিষণ্ণ ঘুঙুরে, বাজে তান৷ এ প্রমান গেঁথে নিলে প্রেমে.. থেমে থেমে অশ্রুবিন্দু অপেক্ষায় বসে থাকে দ্বারে৷ যেটুকু বিলাপ, প্রিয় স্পর্শ থেকে সরে প্রহরের কাঁটা যেন বর্ষ মনে হয়৷ হে নিকট অভিকর্ষে বেঁধে নাও বিশ্বলোক, প্রীতি৷ শুধু তার চিহ্ণের উদ্ধৃতি থাক নিমগ্ন, গভীরে৷ যোগীর আসনে নয়,  নগ্ন থাকি নাভিচক্র মাঝে; অথবা যুবক পাখি সংসার বাসায়... যার থেকে দূরে এলে সময় অলস হয়ে যায়৷

ছিন্ন জোনাক

ভঙ্গুর যে ঘর তাকে ভেঙে দাও জ্ঞাত নিশির ভেতর থাক পরিমিত শোক৷ স্তুপ শেষে জ্বলে আছে আস্ত ব্রহ্মলোক৷ দৃষ্টি তুমি ফিরে যাও স্তুপে ফেলে আসা স্বপ্ন আর স্পর্শস্নাত দেশে; যেখানে ক্ষিদের নাম প্রেম৷ খুলে দাও অধিবস্ত্র প্রাচীন বিভ্রাট দ্বন্দ্ব নাগপাশ৷ ভ্রমর সঙ্গমে বাঁধো বিষন্ন পলাশ৷ সমাপ্তির কালো মেঘ, যে দুয়ারে গেয়েছিলে গান তুচ্ছ ভেবে বিঁধে গেল ক্ষতে৷ বিভাজন চিহ্ন দুটি জোনাকির ছিন্ন দেহে, পথ ও শপথে৷

অপেক্ষা (অপ্রকাশিত)

হিয়ার ভেতরে যদি না'ই থাকে অভিকর্ষ প্রিয়.. দুই পা থামিও, কিছুটা থামিও৷ অপেক্ষার দ্বারে দ্বারে যেদিন দেখতে পাবে প্রতিচ্ছবি, সমুদ্রের ঢেউ; যে ঢেউ আছাড় দেবে রাত্রিকালে পাখির হৃদয়.. নিঃস্ব হয়ে পূর্ণ হবে সেইক্ষণে দয়িতের প্রাণ৷ তোমার স্বপ্নের মাঝে আমাদের গান৷ যা কিছু গোপন থাকে স্রোত তার বিপরীতে আসে৷ যা কিছু  দেখাতে চাই সেইটুকু ছাড়া বাকিটুকু একান্ত আপন৷ কে কখন নিয়ে গেছে এ গানের প্রাণকণ্ঠখানি.. গোপন দুয়ার আর আমি কিছু জানি৷ ভাবনার ভেতর শুধু একছত্র গান... বহু সুরে গেয়েও বুঝেছি অর্থ তার এখনো সমান৷ যেটুকু বুঝিনি তাও গণিতের মতো করে বুঝি; দর্শন পেরোলে যাকে আদ্যোপান্ত ফিকে মনে হয়৷ এখন স্বপ্নের মানে রাত্রিকাল ক্ষয়; অপেক্ষা প্রমাণ দেবে পৃথিবীর ত্যাগের সময়৷

আহত

পাখিদের ডানা থেকে খুলে পড়া পালকের শোক এবার লুকায় যারা, সে প্রেমের কথা লেখা হোক৷ ওই যে যেভাবে নমনীয় বালুচরে মনোহরা পদস্পর্শে কোন কালে লক্ষ্মী ছাপ ছেড়ে গেছে ক্ষত৷ সে আমার বা তোমারই মতো, কোন এক দ্বীপ থেকে এসেছিল জলপথ ভুলে৷ যেখানে মাইলস্টোন ছিল শুধু বালির চমক৷ খেরোখাতা হিসেব কষেছে আর কলমের কালি যাকে ভালবাসা ভেবে লিখেছিল জীবনের গান৷ কে আজ কোথায় থাকে সংবাদ রাখছেনা কেউ; চাঁদে তার ছবি এলে নোনা জল দিয়ে যায় ঢেউ৷ আহত পাখির বাসা গোপন কুটিরে, বড় অসহায়৷ প্রতিটি ঝড়ের কাছে পড়ে থাকে ভাঙনের দায়৷ সোনার খনির নিচে আধমরা পাখিটির বুক; সবাই আহত তাই কেউ কারও তোলেনা চিবুক৷ কোন কষ্ট লঘু নয়, বিচারের কাছে স্বপ্ন মৃত; নিজেকে লুকিয়ে রাখা ঘৃণাকুণ্ডে বিরহজনিত৷

হেমন্ত বিলাস

জ্যোৎস্নার মুখোমুখি স্থগিত সময়, একাকী মাঠের মাঝে কোজাগরি রাতে৷ হৃদয়ের বাইপাস এমন আলোর কাছে ঋণী৷ কাছাকাছি হয়তো কোনো ছাতিমের গাছ আধমরা কঙ্কালের কানে কানে বলে গেল... এই যে যেটুকু প্রেম, যার জন্য সপ্তাহের শেষে ঘাড়ভাঙা তালবৃক্ষ সহস্রাব্দ বাঁচবে বলে ঘ্রাণ নিতে আসে... সেখানেই জন্ম নাও তুমি; অনন্ত বিস্ময়; হৈমন্তী প্রত্যয়ে৷ কে বলে হারিয়ে গেছে হেমন্তের সুধা? সবারই নিজের দেশ থাকে৷ তোমরা যারা রূদ্ধ কর জ্যোৎস্নার চুম্বন, তার থেকে বহু দূরে অবহেলা বুকে নিয়ে জোনাকির দেশে নিঃশব্দ দোতারা হাতে পুরোনো শতাব্দির মেঠো গান ধরে৷ নিঃশব্দকে কখনো বা দেখেছি ঘরের কোণে শহুরে কোতলগৃহে বীতস্বরে আজান পড়েছে; লক্ষ্মীর স্মরণে শুধু সুখের সন্ধান৷ তার কোনো বাস্তু ভিটে নেই যেখানে প্রেমের ঘ্রাণ কোকিলের স্বরে স্বরে ভাসে৷ হেমন্ত লক্ষ্মীর ভারে অন্ধকার কুয়াশার দেশে নির্বাক, চাদর গায়ে কফিনের নিচে শুয়ে আছে৷ শিশিরের স্নান জানে বিলাসের দম্ভ মৃত নদীটির নাম৷

অলংকার

যেকটি ধূপ ছিল একে একে পুড়িয়ে ফেলেছি৷ গন্ধহীন পাড়ায় এখন মদনমোহন তর্কালঙ্কারের কোন সঙ্গী নেই৷ তর্ক থেকে বহু দূরে উদাসীনগঞ্জের দিকে হেটে চলেছেন৷ মাঠ, পথ, খেজুর বীথিকা, ময়নাগান, শিউলিশয্যা পার হয়ে অবশেষে অত্যন্ত সাধারণ এক মাটির দাওয়ায় এসে বসলেন৷ যেখানে মা কাঁসার গেলাস হাতে বয়োজ্যেষ্ঠ শিশুটির দিকে বাড়িয়ে দিলেন জল৷ ঘাম শুকিয়ে কর্পুর৷ এমন এক স্বর্গের কাছে বহুকাল আসা হয়না৷ আচ্ছন্ন ঘুম থেকে উঠে দেখি বিকেল নেমেছে৷ আমি কোন দিক থেকে উঠেছি জানি না৷ এমন স্বপ্নের জন্য চিরকালীন শয্যায় ঘুমিয়ে পড়া যায়৷ যার আভ্যন্তরীণ কোন দেশ নেই,কোন মাটি নেই, তার আছে মায়াবী পাহাড়, আছে উদাসীনগঞ্জ, আছে শূন্যনদীর বুকে ষষ্ঠী মিঞার গান৷ নদীর পাড়ে সরলতার কলসী কাঁখে মায়াচন্দনের গন্ধ মেখে দাঁড়িয়ে আছে সুরভিতন্দ্রা৷ গভীর ক্লান্তির দেশে যাকে মোহিনী আফিম মনে হয়৷ পলাশপাখিটি এসে ঠোঁটে তার ঠোঁট ঘষে যায়৷ এই চুম্বন আমার অলঙ্কার, যার কোনো বিনাশ যুগ নেই৷

ঠিকানা

ছোট্ট শহর, সুরের চোখাচুখি বুকের ভেতর অজস্র এস্রাজে তোমার পাড়া, আমার পাড়ায় ছুটি প্রেমের ডালি পুজোর মতো সাজে৷ আর কিছুক্ষণ শাড়ির ভাঁজে মন প্রেমাঞ্জলি এসেছে কার কোলে? কথায় কথায় নতুন প্রিয়জন পৃথিবী তার গতির কথা ভোলে৷ দুই পৃথিবী এক ঠিকানায় থাকি মিলবে বলে সন্ধে নেমে আসে শেষ কথাদের কথার আরও বাকি জড়িয়ে থাকো সমস্ত বিন্যাসে৷ ঘরের ভেতর নতুন জনের কথা শিউলি আসে প্রেমের গন্ধ চিনে সময় তোমার নিভিয়ে দেবে ব্যাথা পুজোর সাজে সমস্ত আশ্বিনে৷

মৃত্যুর মৃত্যুদণ্ড ( অপ্রকাশিত )

সুতোতে আঘাত করে আয়ুকে পোড়ানো হলে ভালবাসা শীতঘুমে যায়; বেঁচে থাকে বিষাক্ত ক্ষমায়৷ দিনলিপি যুদ্ধ করে, স্নান করে, ঘামে, প্রেমের বিলাপ ভাসে সহস্র প্রণামে৷ সময় আশ্চর্য বায়ু, নিঃশ্বাস নিভিয়ে দিতে পারে৷ যার সুরে নাচবে বলে মায়াবহ্নি এসেছে দুয়ারে৷ অনুজ প্রয়াত হলে মাটিও কলার ধরে বিধিকে শাসায়৷ কত শব্দ ছন্দে বাঁধা নির্বিকার পড়ে আছে ব্যবধানে সুরের আশায়... ঈশ্বরের নেই কোনো দায়? যে গানে বারিষনামা কাঁদবে বলে ছেড়ে আসে ঘর; সেই পথে নেমেছ ঈশ্বর? প্রতিটি মেঘের বুকে লেখা আছে বন্য বিষোদ্গার৷ প্রেমকে হারিয়ে দেবে এত বড় ঈশ্বর তোমার? এমন কয়েদে ভরো, প্রেমটিকে পুজো করো, শোক ফিরে যাক বিদ্রুপেই৷ বিধানও বিচার চায় বিচারের হত্যা হলে, মৃত্যুর কি মৃত্যুদণ্ড নেই?

নিশীথের প্রতি ( অপ্রকাশিত)

জিভ থেকে খুলে রাখা প্রয়াসের চাকা সোনায় বাঁধিয়ে রাখা কণ্ঠগুহা থেকে খুন করে উন্মেষের ডানা৷ কয়েদ করেছো যত তত তুমি অন্ধ হলে আজ জলুসের চোখ পেলে প্রেক্ষাগৃহে হারাবে স্বরাজ৷ মায়াবী মরুতে ক্রীতদাসের প্রথায় সন্ধানের সুখ ছিঁড়ে পথ আজ তোমাকে চালায়৷ অভিমত লাঠি পেলে ধৃতি ওড়ে নিশীথের প্রতি৷ ঘুমন্ত স্বপ্নের কাছে বেড়ে চলে দেনা; তোমাকে বেঁধেছে জ্যোতি ক্ষমতা না চিনলে ঘোড়া নিজেকেই পেরোতে পারে না

গর্ভ শূণ্য পথ (অপ্রকাশিত)

নিজের ভেতরে খুঁজি হারানোর কতটুকু আছে বিলিয়ে দেবার মতো সঞ্চয়ের মাটি তারই মধ্যে দরদাম, শ্মশানে হেঁটেছি৷ পুড়ে যাওয়া কাঠ আর ধোঁয়ার মুকুট জানে কতটুকু ছিল ভ্রমের যোগান৷ তাই দিয়ে আগুনকে কাঠি! শূণ্য ঘর, তবু কিছু দেখাতেই চাই যেন কেউ কোনোদিন ছায়ামূর্তি বানাবে আমার৷ বাটিকে পুকুর ভাবি, খাল কে সাগর বিদায়ী চৌকাঠ জানে কতটুকু পূর্ণ হলো ঘর৷

ধ্বজা

প্রতিদিন ধ্বজা ওড়ে, রক্ত মাখে দেশে - বিদেশে, সীমান্তের বুকে.. পাখিদের নিঃস্ব করে, ক্ষমতাকে ঝাঁঝরা করে নিস্তব্ধতা ফিরিয়ে আনে দেশ৷ শুধু নিষ্পাপ গঙ্গার হাওয়ায় যে পতাকা উড়ছে কোন শব্দ হয়নি সেখানে৷ বহু রক্ত অন্ধকারে নিঃশব্দে ধুয়ে গেছে৷

বারিষনামা # ১৩

যখমের ঘরে, সন্ত্রাস শেষে আধমরা কুয়ো, নিরাশার দেশে দাদরার চালে বাতাসের সঙ্গীত৷ ঠিক প্রেম নয়, বিবিধ ক্ষতের বেঁচে থাকা মেঘেদের সমাবেশ৷ পুতুলের ঘরে এসেছ পরীক্ষিত! পিছুটান নেই, তবু কত টান পাখিটির ঠোঁটে বিরহ প্রয়ান বাঁধানো উঠোনে বৃষ্টির আগমন৷ কুয়াশা বিক্রি শালুকের দামে যতটুকু আছি শুধু এই নামে মৃত গোলাপের সমুদ্র মন্থন৷ এইটুকু থাক, পথ নির্বাক যতদূর যায় যাক চলে যাক বুক ছুঁয়ে থাক প্রিয় বারিষের স্বর৷ কিছু নেই, তবু কিছু তো আছেই মরুভূমি যেন চাঁদের কাছেই ভালো থাক যারা ইয়েমেনে বাঁধে ঘর৷

তৃষিত কেলাস

দুধেল বকের ঝাঁকে শেষের সারিতে বসে চলে যাই নিঃশব্দের দেশে.. ঘেমো কলকাতা থেকে বহু বহু দূর.. দিনান্তে; আহত কাঠবেড়ালির দ্বীপে৷ যেখানে সময় হাঁটে ফ্রিজারের দেশে, ব্যঙ্গ ফুঁড়ে উঠে আসে লালাভ শালুক, কেলাসের প্রাণবায়ু ভেজাবে বলেই৷ বিস্ময়ের তাস গিলে থুতুর মতোই, দেখি ওরা সাহেবকে বিঁধে ফেলে জোরালো টেক্কায়৷ আমিও হার্টের পাঁচ হাতে ধরে শূন্য হয়ে শুনি৷ কী চমক! ঔদ্ধত্য, বিরহের কাঁটা দিয়ে প্রলয় ঝংকার৷ পাশে মৃত পথ, দুর্গন্ধের ক্ষোভ বাসে বাসে৷ তৃপ্তির আভাসটুকু নেই৷ তারই পাশাপাশি এক কোণ ঘিরে জগৎ দেখেছি; পরিমিতি ধ্বংস করে প্রেমবৃত্তে বাঁচতে শেখা দেশ৷ সভ্যতার সমুদ্র পেরিয়ে শেষ স্টেশনের পথে ধীরে ধীরে খালি হয় ট্রেন৷ তৃষ্ণা বলে তুমি তার বিপরীতে হাঁটো৷

মেয়াদ

প্রাথমিক কিছু নয়, ভ্রমটুকু শোক তোমাকে জাগাবে বলে মেরে ফেলে দৃষ্টিহীন লোক৷ যে আগুনে মৌন মুখ হারানোর ভয়ে পাথরে পাথর ঠুকে হার্টবিট ক্ষয়... রাজহংসী হতে পারো বিশাল সে সমুদ্র নগরে স্বর্ণপদ্ম বেষ্টনীর মাঝে যেখানে লহরী জাগে শুভ্রস্নাত বধূটির সাজে তাকে শুধু কথা দিও, আর গন্ধ দিও ভালোবাসবার৷ সবেরই মেয়াদ হয় ঢেউ, পদ্ম জোয়ারের মতো ততটা আপন কর যা তোমাকে দিয়ে যাবে ক্ষত গাঢ়; কোনো প্রস্তর যুগের ইতিহাস খোঁড়া হলে ভবিষ্যত কুড়োবে প্রমাণ৷ শোক নয়, শোক নয়, জয়... কখনো প্রেমের আগে প্রেমিকের মেয়াদ ফুরোয়৷ ফসফরাসের গায়ে সমুদ্রের নোনা ইতিহাস আলিঙ্গন গৃহে অস্তমিত প্রেমটির অঙ্গার সাজিয়ে... সঞ্জীবনী দেশ পাবে প্রাচীন ক্ষতেই৷ গুপ্তধন ঝিনুকের ঘরে, তার কিছু হারাবার নেই৷ তবুও বিদায় বলে সারারাত জাগাবে বলেই৷

ঘূর্ণন

পৃথিবীর ভেতর পৃথিবী কার কথা, কত কথা পাথরের খাঁজে নর্তকীর সাজে, মলাটের ভাঁজে... যে বই লেখার চেয়ে মাঝে মাঝে পড়ে নেওয়া ভাল ভেতরে ভেতরে৷ ঘূর্ণনে হারিয়ে যায় শোক; কত হাত, বালির প্রণয়৷ এখন আর বিরহ আসে না৷ শ্লথ-প্রাণ অক্টোপাস চোখ পৃষ্ঠা খুলে পড়ে ফেরে ঘরে জোনাকি অক্ষরে লিখেছে তাদের ভাল হোক৷

পলাশের শোক (অপ্রকাশিত)

মাইগ্রেনের কথা চুরি করে ঢেলে দিই কুহকের ছাঁচে, জানিনা কবিতা না কী মৃত্যুর বিন্যাস; তোমাতে জড়াতে চায় ঝরে যাওয়া অপুষ্টির বিপন্ন পলাশ৷ আদরের স্পর্শ পেয়ে খুলে আসে লুক্কায়িত শোক, গন্ধের আকারে নর্দমার বীতশ্রদ্ধ মদ আর মুটেটির কাছে৷ তার কোন প্রেক্ষাগৃহ নেই; কুটুম্বের শেষ প্রান্তে যৌনতার গন্ধ শোঁকে রোজ৷ কলেজস্ট্রিটের ভীড় থেকে দূর কোন বস্তির কোণায় সে সাহিত্য খুজে পায় নেশার গহ্বরে, পরিমিত শয্যার ভেতর৷ বিক্রি হওয়া মাটির প্রদেশে জেগে ওঠে প্রাঞ্জল নিঃশব্দ৷ এখনও বলবে কবি রাত্রিহীন কবিতাকে                                 সঞ্জীবনী স্বপ্ন দেওয়া যায়?

প্রয়াণ বন্ধন

শ্মশান পেরিয়ে গেল যুগ; ম্লান সম্পর্কের টেরাকোটা, সুতোর প্রয়াণ৷ অন্তিম জলের কাছে বাকিটুকু সুখ৷ সময় পাথর হয়ে লেখে শোক, আয়না ও মুখ ঝাপসা, যত পরিধির বাড়; অস্থিভষ্ম স্তম্ভ করে গৃহস্থের উদিত সংসার৷ লুকান জলের আসা মানা৷ স্মৃতির গহনা কতটা বিয়োগ হলে হাসিমুখ উদযাপনে যায়... ফেলে আসা বান্ধবেরা সজ্জা ও মাছের ভাগ বেশি খোঁজে শ্রাদ্ধের থালায়৷

চরিত্রহীন

লজ্জার দ্বারে মাথা নুয়ে আছে কাম নিয়ন্ত্রণের ছাই চাপা বিছানায় সুযোগের তাসে ইন্দ্রজিতের বাণ স্মরণের পরে আগুনের পরিখায় ডুবে যেত, শুধু লজ্জার খুঁটে বাঁধা আয়নার কাছে চরিত্রদের মুখ৷ না, ছুঁয়ে দেখেনি কুয়াশার বুকে ধাঁধা পালা করে করে চেটে গেছে উৎসুক৷ অন্ধকারের উত্তেজনায় ধ্বস নিশিরাত, বাঁকা চাঁদ এসে খেতে চায় নেশার চাদরে বাতিলের খসখস দু ফোঁটা মাদকে ময়নার মতো গায়৷ তারা নেই, ফাঁকা মেঘে মেঘে গর্জন বেরোতে পারেনি অরণ্যে যার ঘর নিজেই নিজের আগুন নিয়ন্ত্রণ জ্বলেনি, ভেতরে ভিজে ভিজে গেছে খড়৷ কালো, ভাঙা বিশ্বের নিচে উদ্যান যা কেউ দেখেনি.. ঘুণ পোকা এসে খায় চরিত্রহীন আদরের কাছে ম্লান যা কিছু পেয়েছে তারও বেশি দিতে চায়৷

শ্বাপদ উল্লাস

প্রথম ভোরের কুঁড়ি, শিউলি বা শেফালির স্নিগ্ধপ্রান চঞ্চলা যুবতি; প্রজাপতিটির মতো উঠোনে, বাগানে৷ উড়ে যেতে যেতে ঘরে ফিরে আসে পূজার থালায়৷ মা স্নেহে ছাড়িয়ে দিচ্ছে চুল৷ সন্তান প্রসব না কী প্রাজন্মিক ভুল!! উন্মাদ প্রবণ জরা ভূমি, কার শাপে জন্ম দিলে যৌনতার ঘ্রাণ? বৃশ্চিকপ্রমান.. হিংস্রতার লৌহদন্ডে ফুলে ফুলে ঘা; নিজেকে মাড়িয়ে ফেলে স্নেহের পাদুকা৷ পূজার ঘন্টার মাঝে চণ্ডালের উল্লাস হুঙ্কারে মায়ের জঠরে বেড়ে ওঠা শ্বাপদের হাত লুঠে যায়, শুঁকে নেয় কুঁড়িটির যৌবন সুবাস৷ নৃসংস কাপালিক অন্ধকার মাঠে বুভুক্ষু বান্ধবের সাথে মায়ের সামনে ছেঁড়ে জঠরের ফুল আর্তনাদ, যন্ত্রণায়... মা বললেন.. "ও বড়ই ছোট; বাবা তোরা একে একে আয়৷"

সমীকরণ

কী ক্ষয়, সন্দেহে; বিশ্বাস উজাড় করে ত্রাণ কুয়াশার ঘরে৷ জমা সমগ্র হৃদয় খতিয়ান ভুলে, ফুলে ফুলে ভ্রমরেরা                                 দূরত্ব বিয়োবে৷ বিরূপ প্রকট হলে অনুরাগী স্বর ক্রমে মৃত বিরহী দয়িত; সন্তুষ্টির পরিধি বাড়ালে... জবাবে ক্ষয়ের দাগ, প্রত্যাশায় গ্লানি খুলে আসা সম্পর্কের ব্যাকরণ লেখেনি পাণিনি৷

কণ্ঠরোধ

সিড়িটি পেরিয়ে এলে ঘর মৃত্যু ও জ্ঞানের মাঝে ক্ষিদের শহর৷ জখমের কণ্ঠ পেষা গান যা কিছু দেবার ছিল, বিদ্রোহী বয়ান শান্তি প্রিয় কল্কের ধোঁয়ায়৷ মেধার ফসলে মূঢ় প্রাচীরের চিহ্ন পাওয়া যায়৷ দিকে দিকে লেহনের সুর উল্লাসমধুর৷ আত্মহননের আগে লাথি খায় পঠনের স্তব ক্ষিদের দুয়ার থেকে ফিরে গেলে সমুহ গৌরব৷

বিলাপ (অপ্রকাশিত)

দৌড়; দৌড়ে তৃষ্ণার দশক পিছনের গাছ থেকে ঝুলে, ঝোলে বাদুড় হৃদয়, বন্যার চেয়েও বড় দারিদ্রের শোকে; বিলাপের শ্বাস৷ মশারির ওপর জোনাকি এসে বসে, ভাললাগা ছুঁয়ে দেখা বাকি৷ প্রিয় গন্ধ, প্রিয় ফুল, প্রিয় পাহাড়ের গায়ে ফোটা সৌন্দর্যে বিরহবুলি জ্যোৎস্নার গালিব৷ প্রণয় সঙ্গিনী নয়, নিরাশায় আলো দেখা যায় স্পর্শ থেকে দূরে৷ দয়া করো গো কবিতা নিজেকে স্থাপন করো আমার ভেতরে৷

জন্ম

এই ক্ষণে ভাললাগা প্রকৃতির কাছে দু-দণ্ড বসতে ভাল লাগে, ভালবাসতে গেলে তাকে জন্ম দিতে হয়৷

ভাঙা জ্যোৎস্নার সঙ্গম

শিরিষের ঘেরাটোপে এমন বিমুগ্ধ রাতে... খুনসুটিতে বারে বারে চাঁদটিকে গিলে নিচ্ছে মেঘ৷ পাশের ঈশ্বরগৃহ তত লাল হয়নি এখনো.. যতটা এগিয়ে গেলে চিৎকারের শব্দ শোনা যায়৷ কিছু দূরে শ্মশানের শেষ গন্ধ অহং ঘুচিয়ে দিতে আলিঙ্গনরত৷ সেই মাঠ, গোলপোস্ট, তালগাছে সপ্তাহের ক্ষিদে জমে থাকে৷ দামোদর শুয়ে আছে কয়েক কদমে, নির্বিকার অর্ধমৃত পাখিটির প্রাণ দু-ফোঁটা জলের পাশে বিষাক্ত দ্বীপে৷ আষাড় আসেনা তবু কবিগুরু বেঁচে থাকে রাতচরা পতঙ্গের প্রাণে৷ জোনাকির দেহত্যাগে প্রেমিক পেঁচার ভীড়; দীর্ঘশ্বাসে প্রেম আর আঁধারে অতীত বেঁচে থাকে৷ রাস্তাটিও চলে গেছে সুদূর মিশর থেকে যতদূরে মৃত সভ্যতার ধ্বংসাবশেষ... নীল ফোয়ারার৷ নীলনদ, আকাশ ও প্রিয় অতীতের রঙে বিষের দহন, আমৃত্যু ভোলার কোনো অবকাশ নেই৷ এই মাঠ; মাটি গন্ধ; হাওয়া ও পাতার প্রেমে  বাইজির নৃত্যগৃহে সাপ্তাহিক বিরহসঙ্গম৷ ধ্বংসপ্রায় ব্যাবিলন গান ধরে স্খলনের পরে৷