জিন্দেগিকিতাব
এমন দুর্দিন কেন ভূতপূর্বকাল হতে হঠাৎ এসেছে? আয়না হাতে দাঁড়িয়ে রয়েছে বর্তমান৷ আফ্রিকান ডেসার্টের মৃত্যুদূত যেন এতদিন গোপন রেখেছে মৃতপ্রায় অনুভব ও তার বিস্তার৷ বহু পাথরের স্তুপ জমা থাকে পর্দার আড়ালে, কেউ তাকে নগ্ন করেনা... পাথুরে যৌবনও এত সিক্ত হওয়ার বাসনা পুষে রাখে! অন্ধকারে না হারালে বোঝাই যেত না৷ আকাঙ্খার ঝড় আজ এমনই স্তব্ধ যেন শতাব্দীর শেষ প্রলয় এখুনি আসবে আর ছারখার করে দেবে জগতের মায়া৷
এই ভাবি, বসে থাকি, সময়ও আমার সাথে সঙ্গ দিচ্ছে আজ.. এককাপ কফি আর বৃষ্টির জানালা; জিন্দেগিকিতাব৷
"ভালবাসাদের কোনো গণ্ডি থাকে না" এমন ফাজিল কথা নির্বোধের বাণী৷ গণ্ডি থাকে, নিজস্ব পরিধির গণ্ডি, যেখানে সবাই এক কেন্দ্রবিন্দু; আর বৃত্তটিকে যতই ঘোরাও কেউ কাউকে ছাড়তে পারে না৷ আবার এখানেই বসে লেখা হয় মৃত্যুর শুষ্ক পরিভাষা৷ আঁকড়ে ধরায় জোর না থাকলে গাছও নির্বিচারে ফেলে দেয় অনাবাদী আম৷
ঘরের ভেতর বসে মরুভূমি না পেরোলে ভালবাসা আসলে কী বোঝাই হত না৷
এভাবে নিজের কাছে এক ঘটি জল চেয়ে নিই, চোখে মুখে ঝাপটা দিয়ে সে জলের আয়নায় নিজের নতুন রূপ দেখি৷
পায়ের আঙুল আজও নেচে ওঠে সন্ধ্যাকালে রবীন্দ্র সঙ্গীতে..
"কী সুর বাজে আমার প্রাণে, আমি জানি, মন জানে..."
উদিত তারার কাছে বাণপ্রস্থ সুরটিকে ধার চেয়ে নিই চাঁদের আড়ালে৷ অভিশপ্ত গান্ধার পেরোনো জুঁই তার গন্ধটিকে কাঁখে করে নিয়ে আসে উপহার স্বরূপ৷ নিশ্চিন্ত পাখিটিও ডেকে ওঠে মেহগনি ডালে৷ তুমি স্বপ্ন, তুমিই প্রেম, এতগুলো দিন গেল তবু কেন বুঝতে পারিনি! নিঃসঙ্গের মধ্যে এক সঙ্গীতের তান নিজেকে ভোলার মাঝে নিজেকে চেনায়৷ কথাহীন বিলম্বিত লয় রাগিনীর মতো বাজে মন-নদী প্রবাহ ধারায়৷
রাত্রির চৌকাঠে ঢুকে পড়ি নিঃশব্দ জোনাকির সাথে৷ স্ফটিক বিচার ধারা, সৌপ্তিক জ্ঞানের ছটা যত্ন করে তুলে রাখে সে— অন্ধকার ঘুঁচাবে বলেই৷
—প্রশ্ন করি এতদিন কার গৃহে ছিলে?
—তোমার গণ্ডির পাশে চিরকাল উড়ে গেছি তবু এমনই অন্ধের মায়া জড়িয়ে ছিলে যে তুমি উদার সম্ভ্রমটুকু দেখতে চাওনি৷ তুমি শুধু "আমি"তে রয়েছ, আর আমি "আমাদের" ছাড়তে পারিনি৷
—এমন কঠিন কথা এত সহজেই বিঁধে দিতে পারে সব অতীতের তাস! এবার তাকাও ফিরে, ইহজগতের রাত্রি মুছে যাবার আগেই "আমাদের" মধ্যে এই আমিটিকে বন্দী করে নাও৷
—এর কোনো বন্ধনী নেই, শুধু দুই চোখ বুজে সহস্র চোখের থেকে কাফন সরাও; আমাদেরই মাঝে আছ জ্যোৎস্নার ঘরে৷
ঘুমের ভেতর থেকে কে যেন 'বিন্যাস' বলে আমায় ডেকেছে! অথচ নিজের সব শাখা-প্রশাখার শ্বাস রোধ করে ছিলাম বিষের যুগ ধরে, নীলাভ কঠিন এক দেওয়ালের ঘরে৷ ডাহুকেরা ডেকে ডেকে ফিরে গেছে প্রত্যহ সকালে৷ তারা আজও নিয়মিত আমার জানালা ঘেঁষে আসে আর অস্তিত্বের ছাপ ছেড়ে যায়৷ অস্তিত্ব কেমন হয়! খুঁজতে গিয়ে থমকে দাঁড়াই আমার বাড়ির কাছে অপরাজিতার জঙ্গলে৷ কত গাছ - কত ফুল ডেকে ডেকে নেতিয়ে পড়েছে; অথচ আমার বুকে চিরদিন জমা ছিল জলের ভাণ্ডার৷ আজ শুধু নোনা ভাগ সরিয়ে এসেছি পরিশুদ্ধ জল দেব বলে৷
এরাই শিখিয়ে ছিল নীলের সঙ্গে সাদা মিশে গেলে মেঘ, বহুদিন জমতে জমতে কালো হয়ে নেমে আসে বিরহী বারিষ৷ উজ্জ্বল সকাল আর গোধূলীর মাঝখানে আরও কত রং আছে... সে সব খবর যেন ইতিহাসে লেখা৷ একাকিত্বের সব জড়তা ভাঙলে ক্যানভাসে ফুটে ওঠে 'একা আঁকা অস্তিত্বের' কথা৷
ঘরের ভেতর বসে মরুভূমি না পেরোলে ভালবাসা আসলে কী বোঝাই হত না৷
"কী সুর বাজে আমার প্রাণে, আমি জানি, মন জানে..."
উদিত তারার কাছে বাণপ্রস্থ সুরটিকে ধার চেয়ে নিই চাঁদের আড়ালে৷ অভিশপ্ত গান্ধার পেরোনো জুঁই তার গন্ধটিকে কাঁখে করে নিয়ে আসে উপহার স্বরূপ৷ নিশ্চিন্ত পাখিটিও ডেকে ওঠে মেহগনি ডালে৷ তুমি স্বপ্ন, তুমিই প্রেম, এতগুলো দিন গেল তবু কেন বুঝতে পারিনি! নিঃসঙ্গের মধ্যে এক সঙ্গীতের তান নিজেকে ভোলার মাঝে নিজেকে চেনায়৷ কথাহীন বিলম্বিত লয় রাগিনীর মতো বাজে মন-নদী প্রবাহ ধারায়৷
—প্রশ্ন করি এতদিন কার গৃহে ছিলে?
—তোমার গণ্ডির পাশে চিরকাল উড়ে গেছি তবু এমনই অন্ধের মায়া জড়িয়ে ছিলে যে তুমি উদার সম্ভ্রমটুকু দেখতে চাওনি৷ তুমি শুধু "আমি"তে রয়েছ, আর আমি "আমাদের" ছাড়তে পারিনি৷
—এমন কঠিন কথা এত সহজেই বিঁধে দিতে পারে সব অতীতের তাস! এবার তাকাও ফিরে, ইহজগতের রাত্রি মুছে যাবার আগেই "আমাদের" মধ্যে এই আমিটিকে বন্দী করে নাও৷
—এর কোনো বন্ধনী নেই, শুধু দুই চোখ বুজে সহস্র চোখের থেকে কাফন সরাও; আমাদেরই মাঝে আছ জ্যোৎস্নার ঘরে৷
Comments
Post a Comment
Your Valuable Response and Comment would Inspire to Write Better..