Posts

Showing posts from May, 2020

মরশুমি ( ডায়রি )

আমাদের দেখা হয় গীটারের স্ট্রিং-এ বারিষি মরশুমে ওঠা-নামা চোখ চোখ থেকে পায়ে বিরহ থিতিয়ে আসে নতুনের গায়ে নিজেরই ভেতর নিজে পেরিয়েছি পথ মনের ভেতর ছায়াছবি যে দেশে হৃদয় মেলে— সঙ্গ দিলে রবীন্দ্রানুরাগী ক্ষয়ের ভেতর ক্ষয় ফোনালাপে বিছানা স্খলন কোথাকার তিল! ভেবে ভিজে ভিজে উদ্বেল যৌবন সন্দেহের তারে ঝোলা দৃষ্টিকোণ ঠিকানা বিহীন দূরত্ব সাপের মতো গোটায় আস্তিন তবু তো সম্ভোগ করি স্বপ্নাবিষ্ট ঘরে প্রেম বিবেচক হয় অন্তরালে, বিচ্ছেদের পরে৷

মোনালিসা সাহা

জুড়তে গেলে উড়ে যায় ঠোঁট থেকে কথা সহসা নীরবতার ডানা ঘেঁষে খসে পড়ে তারা অন্তরীণ ব্যাগ্র দ্বারে বাতাসি প্রহরা আমাকে অধীন করে নিয়েছিল তার তিন ফুট দূরত্ব সীমার পানকৌড়ি নেমে গেল জলে হায়! সে জল যদি হতে পারতাম রাতের তারার মতো ভেজা চুলে আলোর বোতাম হঠাৎ কেমন ঘোরে ফেলে দিল একরোখা দোঁহা— কালিন্দীর জল ঠেলে উঠে আসা মোনালিসা সাহা৷

ফুঁ

জন্মেছি যে জলে তার কী রং'ই বা ছিল দিনান্তে রঙিন হয় ধূলো— পথে পথে মৃদু কথা, ঠাট্টা ও বিদ্রুপ; বাতাস দূরত্ব দিলো, নির্বোধের সঙ্গে এলো 'ধূপ' পোশাকে উৎসব ফোটে,  সিড়িতে জড়িয়ে আছে ফাঁদ আকাশ বোঝেনা কোন গ্রন্থে ঢাকা কতটা গরাদ৷ ধোঁয়াকূণ্ডে বোধ ওড়ে সংঘের চুরুটে ফুঁ— দিয়ে দেখেছি ঔঁ এর মাথায় ঈদ চাদ হয়ে ওঠে৷

ঝড়

কয়েদি বুক ঘেরা স্বপ্ন হননের আত্মঘাতী ঝড়ে পদার্পণ নিঃস্ব, বিধি হারা বিরহ সমাদরে বারিষ জমা ঘরে সংবরণ কে দিক হারিয়েছে, উড়াল পুল ধরে মেঘের স্মৃতি কথা দিচ্ছে ডাক ওরা তো পরিযায়ী ঘুরতে উড়ে আসে আকাশে প্রেম হীন মনস্তাপ এমন মঞ্চ কি কোথাও ধরা দেবে সমূহ শ্রোতা যার বিশ্বময়? গত উপন্যাস সমাপ্তির শেষে বিরহ চোখ ছাড়ে, স্বপ্ন নয়৷ যা কিছু পুষে রাখা দরদী গৃহকোণে পোষ্য নয় শুধু, আমার ধন ধ্বংস শেষ হলে জগৎ খুঁজে ফেরে এমন চুলচেরা বিশ্লেষণ শেষের নীরবতা বিরহী বাধ্যতা যে যার মনে গাঁথে ব্যথার গান ব্যথাও পরিযায়ী, পদ্ম খুঁজে পেলে হৃদয় শুরু করে নিত্য স্নান এত যে ঝোড়ো হাওয়া পেরিয়ে ফিরে আসা এ কি জীবন নয়? ও মাই লর্ড তবুও চোখ ঝরে শব-স্বয়ম্বরে দীর্ণ ঘরে এলে তোমার ঝড়৷

শলাকা

কে তুমি গহ্বর থেকে ডেকে ডেকে ফিরে গিয়েছিলে পাথরে আছাড়ে বুঝি নষ্ট হল ফুল! রং কে বসন্ত ভেবে চুম্বনের আগে বিধির সড়ক ভুলে নিপাট যৌবন  লণ্ডভণ্ড মেঘ আর অন্ধকার ফেনা তোমার স্মৃতির ভার এতটাই বেশি সরাব সরাব করে সরাতে পারছি না৷

বোধক্রম

ভুল করে বেরিয়ে এসেছি, এই পথ কার ঘরে ঢোকে? নিজেরই দর্পনচিত্রে দুর্বোধ্য গহন হেটে যাওয়া কল্পিত বাগান জড়ভূমি, ইতিহাস দ্বাররুদ্ধ তাই— অচেনা সাগরে এলে লহরীকে সঙ্গী করে হাওয়া স্থায়ী নয়, স্থায়ী নয় এ শরীর, কলহ ও পীড়া দোষারোপ সীমিত আক্ষেপ দংশনকে ফেড়ে ওঠো বোধ তোমাকেই পথ ভেবে চেয়ে আছে শীর্ণ বিবাগীরা৷

ভ্রম

সেভাবে দেখিনি কোনো শরতের পাখি মিলিত চোখের অনুভবে বিভাবরী চাঁদ, অনুকম্পাহীন এক পাহাড়ি সংসার এই আছে, এই নেই— মেঘসিক্ত রাস্তা থেকে নিঃশব্দে চিৎকার অথবা পেলিং রাতে অনুরক্তে আলিঙ্গনরত হাটাপথে ক্লেশ বিস্মরণ— এ জীবন স্বপ্নবৎ হলে এত কিছু স্বপ্ন দেখে লোক?

রেললাইন

জলকে বলি আমার ঘোড়া দৌড় লাগালাম কিডনি ছাড়া মনস্তত্ব এমনই এক লকডাউন চোখ ফিরিয়ে দেখছি না আর ভবিষ্যতে কী অন্ধকার এখন আমার হৃদয় মানে মালান-বৌ বিষয় যখন বাঁচতে দেখা ভুলুই গাঁয়ের ছোট্ট শিখা পায়ের তলায় পিচ গলে যায় তার নামে লাঠির ভয়ে রাস্তা ছাড়া হাজার হাজার বাস্তুহারা বৃষ্টি চোখে জড়িয়ে ধরে রেললাইন অখাদ্য আর জলের ঢেকুর দারিদ্রতার শৃঙ্খলাপুর আড়াল করে নামিয়ে যাচ্ছে এরোপ্লেন মেঘের কাছে আর্জি জানাই সঙ্গে ভেজার ধৃষ্টতা চাই এমন সময় শঙ্খ ঘোষই বিরাম দেন৷ ঘরের পাশে পুকুরখানা হাসের পেছন বেড়াল ছানা ভরসা আমার সরকারি গম, রেশন ডাল ভাগ্য মাফিক আসছে হাতে বেশিরভাগই স্টোরখানাতে মহমারীর যুদ্ধ জানে পেটের ঢাল ঝাপ পড়েছে কারখানাতে বাচ্চাছেলে বাগিয়ে হাতে ভারত মাতার রোদের নিচে সোনার দিন জীবন মানে লুকিয়ে রাখা অপূর্ণতা, রক্তেমাখা.. মহামারীর ছাপ শুকানো রেললাইন

পরিচয়

এতখানি ঝড় আছে তোমার আঁচলে! সব মেঘ সরে যায় ক্ষণে কোলের অধিক কোনো মনোরম পর্যটন নেই তেমন বজ্রও নেই যে দুধের সমানে দাঁড়াবে এত যে উঠলাম বেড়ে— বুদবুদের কণা... তুমি না থাকলে বিশ্ব নিজেকেই চিনতে পারে না৷

ফেলে আসা রং

১) আরও কত কাছাকাছি  আরও কত চোখের গভীরে আবীর না হাতের নরম কে— বেশি বসন্ত মাখালো দু-গাল ছোঁয়ার পরে শহরের দৃষ্টি ফিরে এলো ২) ওপরে কৃষ্ণচূড়া তার নিচে রাধার আবীর অধর ছোঁয়ার পরে নাম জিজ্ঞেস করলাম এখন তা মনে নেই আর সব শব্দ স্থায়ী নয় সময় পেরোলে ঝাপসা হওয়া অবয়ব এতদিন পরে— স্মৃতিচারনের পথে ফেরার সময়   অনাবিল শান্তি নিয়ে এলে ৩) তখন কতই হবে— বছর পনেরো কথা বলা মানে প্রেম, ছোঁয়ায় সম্মতি লাল আবীরের কাছে ফেলে আসা প্রাণ কিশোরের প্রথম প্রণতি পনের বছর পর তাই মনে হয়— সেদিন সে হাত দুটি আমার'ই তো ছিল রং দিয়ে ছোঁয়ার সময়৷ ৪) দোল তুমি দূরে থাকো আজ ফুলের দেরাজ থেকে উড়ে যাওয়া রঙিন পাখাটি ভুলে গেছে সংস্রবের দিন পৃষ্ঠা থেকে মুছে যাওয়া শব্দের সংসারে বেমানান মিলনশিঙ্গার দূরের আলোয় নৌকো দড়ি ছেঁড়ে নোঙর বাঁধার৷ ৫) এই আসে- এই ওড়ে- দূর থেকে রঙের হাওয়ায় আমাদের পরিখার বাষ্পায়ন স্পষ্ট দেখতে পাই৷ চোখে চোখে বদলের স্বাদ ঋতুর মতই তার স্বভাব পাল্টায় যেভাবে আবীর দোল-এ ফি-বছর গাল বদলে যায়৷

প্রকৃতি

অব্যক্ত মেঘের ফরাশে ধুলো জমা গাঢ় অভিমান থম মারা অসাড় প্রতিমা কাছে ঘেঁষা বারণ তখন,  অথচ না এলেও ঝড়ের বন্যশঙ্কা ঘাপটি মেরে থাকে৷ কাছাকাছি এলে পড়ে বাজ আর উড়ে যায় ধুলো৷ কারা যেন পুরুষ প্রকৃতি! ছেলেখেলা করে মোলায়েম রাস্তা ধরে দৌড়ে যায় মেঘ থেকে মেঘের চাদরে... অভিমান বিশ্বাসের, অবিশ্বাস দিক ভুল করে৷ অনাস্থা যাদের ধন, কোনোদিন শুধিয়ে এসেছ কত পাথরের বোঝা দিন রাত গুঁড়ো হচ্ছে সে পথের বুকে... তোমার সরলরেখা চিরকাল সোজা রাখবে বলে; ঝুঁকে দুর্গম পাথার ধরে থাকলে যেতে চাই, যাও বললে ফিরি বারবার৷

মন্দা

শ্রদ্ধার দ্বারে পিছলে পড়েছি ক্রমে আয়নার চোখে এক পিঠ ভাবি সত্য সত্য খুলেছে হৃদয়ের প্রয়োজনে ওপারে বাগান সুন্দরে সম্পৃক্ত সহস্র রাত তিরিশে হারানো বন্যা এক মেঘ কথা হারিয়ে ফেলেছি শূন্যে সম্পর্কের নীরবতা মানে সন্যাস অগোছালো দেখে ভেবেছি ওখানে মন নেই কাশ্মীর ফেলে ছুটে ছুটে গেছি কান্দার মেকি গৃহকোণে স্বার্থের খানাখন্দ মৃত সৌরভ, মরুভূমি ব্যাপি ধান্দা প্রেমহীনতায় কপটের বাহুবন্ধ নতুনের হাতে স্বপ্নের প্রাণসঞ্চার অতীতের পাখি বিরহের বুকে শিশ দেয় ভালবাসা শ্রেণি সত্যের মতো মন্দা প্রেমই সত্য, সফলতা যত মিথ্যে

প্রসঙ্গ রবীন্দ্রনাথ

যখনি হোঁচট খাই, পাতা ধরে উঠি বারবার কস্মিনকালের এক পুরোনো ইঞ্জিন, তার বিশুদ্ধ ধোঁয়ায়...  নিভেছে আগুন,  মৃতপ্রায় পথে পথে জন্ম দেয় নতুন হাওয়ার৷ তোমাকে পড়ব বলে পাতলা হয়ে আসে অন্ধকার৷ সভ্যতা পেরিয়ে এল প্রকৃতির শব৷ নিশ্ছিদ্র নীরব বহু পাহাড়ের মনে  গুঁড়ো গুঁড়ো শব্দের বরফ হৃদয়ের অগ্নিনির্বাপক৷ প্রকৃতির প্রেম যেন প্রেমের প্রকৃতি... লেখনীর স্তরে স্তরে অসীমের স্তুতি গানের বিন্যাস ইহজীবনের জাতিয় সড়ক তোমায় পেরোতে গেলে ভেঙে যায় বিশ্বের শপথ৷