Posts

পিতৃস্নেহ

যে ভ্রমর খোঁজ নিতে আসে  তোমার ফুলের আর বিষাদের মুহূর্তগুলিতে তার গুঞ্জনেই পাও উত্থানের নতুন শহর৷ বাঁধা আছে প্রাণের সঞ্চার নিরাকার ভালবাসা খনি; হৃদয় তরণী থেকে ডাক আসে এসো, সমূহ বিরাগ থেকে খুঁড়ে আনে সম্মোহিনী গান সুলভ সে, নয় তবু সস্তার বিকার; উদার পাথেয়৷ সে'ই বর্ম; খানা-খন্দ, দুর্যোগের পথে হাত ধরে থাকে পিতৃস্নেহ

দায়বদ্ধতা *

কোনো দায়বদ্ধতা নেই কবিতার কাছে৷ ভাত - কাপড়ের কোনো আশাও থাকে না৷ নিখাদ এক ঐশ্বরিক প্রেম, ভালবাসা যার কোনো কর্ড লাইন নেই৷ যা কিছু প্রশ্নের বাণ, যা কিছু উত্তরের খোঁজ জীবনের কাছে, সেটুকুই কবিতা দিয়েছে৷ কোনো এক অস্তগামী সময়ে দাঁড়িয়ে জাগতিক বন্ধু, প্রেম, সম্পকেরা গুটিয়ে নেবে জাল; সেদিনও নিজেকে পাব, ফেলে আসা সময়কে পাব, আগামী সূর্যের আলো কবিতাই চেনাবে আমাকে৷

বিচ্যুতি

একখণ্ড রাত্রি ধার দিতে পার অবসর থেকে? দিবলোকে হারিয়ে ফেলেছি নিজেরই অস্তিত্বের সূক্ষ্মতর রূপ অহরহ সুখস্নান, কর্তব্যের মোহ বাহু থেকে ছিটকে দিচ্ছে আঙুলের ভাঁজ নিজেই নিজের নই, কার কাছে যাব?

সফর

সন্ধিক্ষণ জাগ্রত হয়েছে, সুগন্ধি ধোঁয়ায় প্রিয় কাশফুল মহানন্দে শরীর দোলায়.. যেন তার জন্মদিনে প্রেমনদ গোধূলি সফরে মাঝবক্ষে ভাসতে ভাসতে প্রগাঢ় চুম্বন পাথুরে দ্বীপের বুকে সবুজাভ শীৎকার শোনায়৷

জ্যোৎস্না

এই তো সেদিন, ওড়ার ছলে এসে জীবনকালের মাঝ আকাশে আনন্দ সংবাদ স্বপ্ন পাখির ডানা ওড়ায় মেঘে ভাসতে ভাসতে ক্লান্তি এলে বাঁ পাশ ঘুরেই স্পর্শ পেলাম, জ্যোৎস্না ছোঁয়া বেলির গন্ধ চুলে স্পর্ধা আছে কোন সে মেঘের রাতের আলো নিভিয়ে দেবে যখন বুকের কাছেই দাঁড়িয়ে আছে চাঁদ

সংসর্গ

উড়ন্ত চাবুক এসে মৌমাছির মতো শোধ করে ঋণের বকেয়া যেন কত কাল ধরে পুড়ে যাচ্ছে জ্বলন্ত চারকোল আশে পাশে মধুভাণ্ড নেই, সহ্য করে মৃত পালকের ন্যায় সংযমের চাষ৷ সঙ্গিনী সংসর্গে ভাঙে পাহাড়ও, বিনয়ে৷ বিধ্বস্ত পাখিরা কেমন ওড়ার আগে পরস্পর চেটে নিচ্ছে ঠোঁট!

আড্ডাঘর

গাছের ঝালর গায়ে পাথর পুরুষ, নিচে ভর্তি সুরাপাত্রখানি.. ডাকতে পারিনি যাকে আড্ডাঘরে সঙ্গী করে নিতে৷ কুসুম কুসুম জলে বৈরাগি পাখির দল ডানা খুলে ভেজাতে এসেছে৷ আমাদের কোনো কথা নেই, বলার যা কিছু ছিল দুজনেই বুঝে নিই স্পর্শহীন ভাষার আড়ালে৷ সময় কিছুই নয়, শরিরী শেকল, যে কখনো বাঁধতে পারেনি বায়বীয় মনের বিস্তার৷ জোৎস্না কেমন হবে পাহাড়ের বুকে এই ভেবে ফুঁ দিয়েছি সূর্যে৷ সন্ধের পায়ে পায়ে জ্যোৎস্নার বাঁশিতে নেমে আসে চারপেয়ে দল সুরা পাত্রে চুমুক লাগাতে; এক পাত্রে এঁটো তারা বিচার করে না৷ শেয়াল - কুকুর যেন আমার চেয়েও বেশি সভ্য মনে হয়৷ ব্লেজারের মধ্যে যত গোপন করেছি অমানুষ, প্রতিটি নিঃশ্বাস থেকে বারুদের গন্ধ ভেসে আসে৷ সিগারি ধোঁয়ায় ঢাকা পড়ে যায় শৃঙ্খলার ধ্বনি৷ আমাকে লেলিন নয়, নেতাজির জুতো দিয়ে যাও; রং হীন, গাণ্ডিব থেকে ছেড়ে যাওয়া শলাকার মতো, মুক্তি ও বিশ্বাসে এক অভিন্ন জগৎ তুলে আনি৷

বিলাস এ বেনারস

১) অহং উত্থানভূমি, রাত্রিকাল পেছনে ছাড়িয়ে যে বেদ পড়েছি এতকাল, তার দ্বারে টোকা দিতে আসি৷ — ক্যায়সা হ্যা ইয়ে বেনারস, হামারে শহর জ্যায়সা হি হোগা৷ ওহি লোগ, ওহি গঙ্গা যো কলকত্তা মে হ্যায়৷ মৃত্যুর খাটে বসে জীবন ফ্যাকাশে লাগে আর, ধোঁয়ার ওপাশে কিছু ধাঁধাঁ৷ এ জন্ম যৌতুক নিয়ে আসে, ঋণ থাকে আকাশে ফেরার৷ বোধ-ব্যাপ্তি-বিস্ময়ের প্রাপ্তি থেকে খুলে যায় নতুন দুয়ার৷ — জি কাঁহা চলেঙ্গে ভাইয়া জি, বি.এইচ.ইউ.. সারনাথ.. অসসি ঘাট.. জহন মে সন্দেহ্ ঔর দিল মে জিজ্ঞাসা আমাদের পথিক বানায়৷ একটি 'ই' এর তফাতে লালসাকে বিসর্জন করে দেওয়া যায়৷ পরিচিতি পেতে নয় পরিচিত হতে গেলে মুক্ত হতে হয়৷ এই স্বস্তিচায়ের দোকানে ব্যাবসা বুনতে এসে কোনো তাঁতিই মরে না৷ অথচ কী চমৎকার স্বাদ৷  — ভাইয়া অসসি ঘাট জানে কে লিয়ে টোটো ইয়াহা সে মিলতা হ্যা? — জি  — কিতনা লেতা হ্যা? — শ রুপয় রিজর্ভ মে, আপ তিনজন হ্যা না... এ ভইয়া ইয়ে তিন জন কো অসসি ঘাট পহচা দো, কিতনা লোগে? — দেড়শ — সুবহ কা টাইম হ্যা, কিউ এয়সে বোলতে হো... শ মে লেকে যাও৷ — ঠিক হ্যা ভাইয়া জি আপ লোগ আইয়ে ইসমে৷ তফাত তুমিই করো ঘৃণা ও প্রেমের, স্বরের ভেতর ঘরে সহবত যতটুকু থাক

সেনোরিটা

পায়ের পাতাটি ছাড়া আর কিছু দেখিনি, কিচ্ছু না৷ এক চিলতে নূপুর চঞ্চলা, আর বেহায়া গোলাপি নেলপলিশ৷ কখনো ঠোঁটের দিকে দেখেছি বোধহয়, এমন শীতের রাতে উষ্ণতা কি তুচ্ছ করা যায়? ফাজিল বাতাস এসে কুর্তিটিকে দুলিয়ে চলেছে! এতবড় স্পর্ধা শুধু বাতাসেরই থাকে৷ কার সাথে এসেছিলে... আর কে তোমাকে নিয়ে গেল বলো৷ কতকাল.. বহুকাল ধরে থেকে যাবে নভৃত কুটিরে৷ আর কোনো ভয় নেই হারিয়ে যাবার৷ নিজের বউয়ের সাথে মেলাতে পারিনি৷ মিলবেনা কখনো; যেমন টপ্পার সাথে আউদের মিলন ঘটেনি৷ জীবনের গর্ভগৃহে আরতির অধিকার সবার তো থাকে না সেনোরিটা৷ শুধু কিছু সুর থাকে মাঝে মাঝে যার কাছে পরিচয়হীন হতে যাওয়া৷ আমাদের পরিচয় কই? হেটে যেও বিভাজিকা ধরে, সেখানে আমার বহু প্রতিবিম্ব শুয়ে আছে শব্দহীন ভাষার কবরে৷

পাঁচগুচ্ছ

১) দিনান্তে প্রবৃত্তি দাঁড়িয়ে আছে মুহূর্তেই শূন্যে ভাসবে বলে৷ এখনো দুয়ার বন্ধ, তার আগে বেঁচে নেওয়া, খেলা৷ সময়ের মুখ আঁকা পর্দাঘেরা ছায়াটির ছলে মৃত্যুর উল্লাসে লিফ্ট নেমে আসে; শেষ কালবেলা প্রশ্ন করে.. শূন্য হয়ে ক'টি পাত্র পূর্ণ করে গেলে? ২)অতিথি জ্যোৎস্নাকে ভালবেসে এসেছ কি জঙ্গলনগরে? ভাল করে লক্ষ্য কর, কাছাকাছি আর কেউ নেই বৈঠক খানায় শীত-মজলিশ নেই দ্বিপ্রহরে নেই; নেই; বিষ ছাড়া আমাদের আর কিছু নেই.. কবে যে প্রেমের চেয়ে বড় ধর্ম ঢুকে গেল ঘরে!! ৩) ঘুণ দূর থেকে ভাঙনের প্রতিধ্বনি শোনো হিতাহিত জ্ঞান জ্বেলে ধর্ম এলোকেশী নিঃস্বতার পথে প্রেম, শতাব্দী পুরোনো৷ নিজেরই ঘরের বুকে ঘুণেরা বিদ্বেষী... যাকে ঘর মানি তাকে ভাঙিনি কক্ষনো৷ ৪)মেয়াদ ছায়ার ওপরে সূর্য অস্তগামী, ক্লান্ত৷ পথের দুপাশে ফুল মৃত, পাতা শুকনো বিচ্ছেদের এত সুখ মেয়াদ কি জানতো? ধূলায় ওড়ালে ক্লেদ থিতু হয় দুঃখ বড় হয় পথ আর পথিক বাড়ন্ত৷