Posts

সফর

সন্ধিক্ষণ জাগ্রত হয়েছে, সুগন্ধি ধোঁয়ায় প্রিয় কাশফুল মহানন্দে শরীর দোলায়.. যেন তার জন্মদিনে প্রেমনদ গোধূলি সফরে মাঝবক্ষে ভাসতে ভাসতে প্রগাঢ় চুম্বন পাথুরে দ্বীপের বুকে সবুজাভ শীৎকার শোনায়৷

জ্যোৎস্না

এই তো সেদিন, ওড়ার ছলে এসে জীবনকালের মাঝ আকাশে আনন্দ সংবাদ স্বপ্ন পাখির ডানা ওড়ায় মেঘে ভাসতে ভাসতে ক্লান্তি এলে বাঁ পাশ ঘুরেই স্পর্শ পেলাম, জ্যোৎস্না ছোঁয়া বেলির গন্ধ চুলে স্পর্ধা আছে কোন সে মেঘের রাতের আলো নিভিয়ে দেবে যখন বুকের কাছেই দাঁড়িয়ে আছে চাঁদ

সংসর্গ

উড়ন্ত চাবুক এসে মৌমাছির মতো শোধ করে ঋণের বকেয়া যেন কত কাল ধরে পুড়ে যাচ্ছে জ্বলন্ত চারকোল আশে পাশে মধুভাণ্ড নেই, সহ্য করে মৃত পালকের ন্যায় সংযমের চাষ৷ সঙ্গিনী সংসর্গে ভাঙে পাহাড়ও, বিনয়ে৷ বিধ্বস্ত পাখিরা কেমন ওড়ার আগে পরস্পর চেটে নিচ্ছে ঠোঁট!

আড্ডাঘর

গাছের ঝালর গায়ে পাথর পুরুষ, নিচে ভর্তি সুরাপাত্রখানি.. ডাকতে পারিনি যাকে আড্ডাঘরে সঙ্গী করে নিতে৷ কুসুম কুসুম জলে বৈরাগি পাখির দল ডানা খুলে ভেজাতে এসেছে৷ আমাদের কোনো কথা নেই, বলার যা কিছু ছিল দুজনেই বুঝে নিই স্পর্শহীন ভাষার আড়ালে৷ সময় কিছুই নয়, শরিরী শেকল, যে কখনো বাঁধতে পারেনি বায়বীয় মনের বিস্তার৷ জোৎস্না কেমন হবে পাহাড়ের বুকে এই ভেবে ফুঁ দিয়েছি সূর্যে৷ সন্ধের পায়ে পায়ে জ্যোৎস্নার বাঁশিতে নেমে আসে চারপেয়ে দল সুরা পাত্রে চুমুক লাগাতে; এক পাত্রে এঁটো তারা বিচার করে না৷ শেয়াল - কুকুর যেন আমার চেয়েও বেশি সভ্য মনে হয়৷ ব্লেজারের মধ্যে যত গোপন করেছি অমানুষ, প্রতিটি নিঃশ্বাস থেকে বারুদের গন্ধ ভেসে আসে৷ সিগারি ধোঁয়ায় ঢাকা পড়ে যায় শৃঙ্খলার ধ্বনি৷ আমাকে লেলিন নয়, নেতাজির জুতো দিয়ে যাও; রং হীন, গাণ্ডিব থেকে ছেড়ে যাওয়া শলাকার মতো, মুক্তি ও বিশ্বাসে এক অভিন্ন জগৎ তুলে আনি৷

বিলাস এ বেনারস

১) অহং উত্থানভূমি, রাত্রিকাল পেছনে ছাড়িয়ে যে বেদ পড়েছি এতকাল, তার দ্বারে টোকা দিতে আসি৷ — ক্যায়সা হ্যা ইয়ে বেনারস, হামারে শহর জ্যায়সা হি হোগা৷ ওহি লোগ, ওহি গঙ্গা যো কলকত্তা মে হ্যায়৷ মৃত্যুর খাটে বসে জীবন ফ্যাকাশে লাগে আর, ধোঁয়ার ওপাশে কিছু ধাঁধাঁ৷ এ জন্ম যৌতুক নিয়ে আসে, ঋণ থাকে আকাশে ফেরার৷ বোধ-ব্যাপ্তি-বিস্ময়ের প্রাপ্তি থেকে খুলে যায় নতুন দুয়ার৷ — জি কাঁহা চলেঙ্গে ভাইয়া জি, বি.এইচ.ইউ.. সারনাথ.. অসসি ঘাট.. জহন মে সন্দেহ্ ঔর দিল মে জিজ্ঞাসা আমাদের পথিক বানায়৷ একটি 'ই' এর তফাতে লালসাকে বিসর্জন করে দেওয়া যায়৷ পরিচিতি পেতে নয় পরিচিত হতে গেলে মুক্ত হতে হয়৷ এই স্বস্তিচায়ের দোকানে ব্যাবসা বুনতে এসে কোনো তাঁতিই মরে না৷ অথচ কী চমৎকার স্বাদ৷  — ভাইয়া অসসি ঘাট জানে কে লিয়ে টোটো ইয়াহা সে মিলতা হ্যা? — জি  — কিতনা লেতা হ্যা? — শ রুপয় রিজর্ভ মে, আপ তিনজন হ্যা না... এ ভইয়া ইয়ে তিন জন কো অসসি ঘাট পহচা দো, কিতনা লোগে? — দেড়শ — সুবহ কা টাইম হ্যা, কিউ এয়সে বোলতে হো... শ মে লেকে যাও৷ — ঠিক হ্যা ভাইয়া জি আপ লোগ আইয়ে ইসমে৷ তফাত তুমিই করো ঘৃণা ও প্রেমের, স্বরের ভেতর ঘরে সহবত যতটুকু থাক

সেনোরিটা

পায়ের পাতাটি ছাড়া আর কিছু দেখিনি, কিচ্ছু না৷ এক চিলতে নূপুর চঞ্চলা, আর বেহায়া গোলাপি নেলপলিশ৷ কখনো ঠোঁটের দিকে দেখেছি বোধহয়, এমন শীতের রাতে উষ্ণতা কি তুচ্ছ করা যায়? ফাজিল বাতাস এসে কুর্তিটিকে দুলিয়ে চলেছে! এতবড় স্পর্ধা শুধু বাতাসেরই থাকে৷ কার সাথে এসেছিলে... আর কে তোমাকে নিয়ে গেল বলো৷ কতকাল.. বহুকাল ধরে থেকে যাবে নভৃত কুটিরে৷ আর কোনো ভয় নেই হারিয়ে যাবার৷ নিজের বউয়ের সাথে মেলাতে পারিনি৷ মিলবেনা কখনো; যেমন টপ্পার সাথে আউদের মিলন ঘটেনি৷ জীবনের গর্ভগৃহে আরতির অধিকার সবার তো থাকে না সেনোরিটা৷ শুধু কিছু সুর থাকে মাঝে মাঝে যার কাছে পরিচয়হীন হতে যাওয়া৷ আমাদের পরিচয় কই? হেটে যেও বিভাজিকা ধরে, সেখানে আমার বহু প্রতিবিম্ব শুয়ে আছে শব্দহীন ভাষার কবরে৷

পাঁচগুচ্ছ

১) দিনান্তে প্রবৃত্তি দাঁড়িয়ে আছে মুহূর্তেই শূন্যে ভাসবে বলে৷ এখনো দুয়ার বন্ধ, তার আগে বেঁচে নেওয়া, খেলা৷ সময়ের মুখ আঁকা পর্দাঘেরা ছায়াটির ছলে মৃত্যুর উল্লাসে লিফ্ট নেমে আসে; শেষ কালবেলা প্রশ্ন করে.. শূন্য হয়ে ক'টি পাত্র পূর্ণ করে গেলে? ২)অতিথি জ্যোৎস্নাকে ভালবেসে এসেছ কি জঙ্গলনগরে? ভাল করে লক্ষ্য কর, কাছাকাছি আর কেউ নেই বৈঠক খানায় শীত-মজলিশ নেই দ্বিপ্রহরে নেই; নেই; বিষ ছাড়া আমাদের আর কিছু নেই.. কবে যে প্রেমের চেয়ে বড় ধর্ম ঢুকে গেল ঘরে!! ৩) ঘুণ দূর থেকে ভাঙনের প্রতিধ্বনি শোনো হিতাহিত জ্ঞান জ্বেলে ধর্ম এলোকেশী নিঃস্বতার পথে প্রেম, শতাব্দী পুরোনো৷ নিজেরই ঘরের বুকে ঘুণেরা বিদ্বেষী... যাকে ঘর মানি তাকে ভাঙিনি কক্ষনো৷ ৪)মেয়াদ ছায়ার ওপরে সূর্য অস্তগামী, ক্লান্ত৷ পথের দুপাশে ফুল মৃত, পাতা শুকনো বিচ্ছেদের এত সুখ মেয়াদ কি জানতো? ধূলায় ওড়ালে ক্লেদ থিতু হয় দুঃখ বড় হয় পথ আর পথিক বাড়ন্ত৷

গুপ্তধন

কোন দুয়ারে ঠুকবে মাথা? গৃহস্থে দ্বার বন্ধ পথ হারানোর দুঃখে পথিক আজন্মকাল ক্লান্ত৷ তুষের ধর্মে নরম তুলো বুকের মধ্যে পুড়লে গন্ধে মহান বৃক্ষ তোমার কঠিন জগত ভাঙবে? দু-হাতে দুই ধর্ম আমার, ধ্বংস এবং ঝর্ণা কাটলে শুধু মৃত্যু হবে, রক্তে ঘৃণার বন্যা৷ জড়িয়ে ধর, পুষ্প ছোঁয়াও, তোমারই নাম সভ্য সভ্যতাকে জ্বালিয়ে দিলে অপূর্ণ গন্তব্য৷ তবুও যদি শান্ত না হয় দণ্ড দেওয়াই ধর্ম৷ অনুরোধের দাবির কাছে বজ্র এসেও থামত চক্ষে প্রেমের বার্তা দিলে, কণ্ঠে ভাষার বর্ম... এক হাতে ঢিল, পশ্চাতাঘাত, সইতে বড়ই ক্লান্ত৷ প্রতিবাদের ভাষাই এবার চিনিয়ে দেবে তোমায় কোন বস্তায় গোপন আগুন লুকিয়ে ছিল বোমায়৷

সমগোত্রিয়

বিয়োগের পরজন্ম গতিবিধি লক্ষ্য করে চলে সন্দেহ বিয়োলে প্রিয় পাখিটিকে মৃত্যুদূত ভাবি৷ কেউ ই জানিনা তার বিপরীতে কত অগ্নি, লাভা জমায়েত হয়ে আছে পৃষ্ঠতলে ফুলের আড়ালে৷ হঠাৎ মহুয়া পাখি ঝাপটা দিয়ে ওড়ালে মৌমাছি বাঁচার তাগিদ নিয়ে ছুটে ফিরি হতভম্বলোকে; কদম্ব গাছের কাছাকাছি এসে থেমে যাই সুখে৷ কত না শোকের ধোঁয়া গায়ে লেগে সুগন্ধি হয়েছে! কিছুক্ষণ তার তলে বসে ভাবি মহীয়সী তুমি৷ প্রেমের নিঃশ্বাসটিকে এভাবেই চিনি৷ ক্রমাণ্বয়ে কেন্দ্রে যার প্রেমজন্ম আসে, পরিচয়ে আগুন গোত্রিয়৷ সময়ের নিরলস ক্ষয়ে... তুমি ও আমার মাঝে যোগসূত্র বিরহ জাতীয়৷

ব্যাধিহত্যা

জ্যোৎস্না মেখে লক্ষ্মীপেঁচা উড়ে গেল অন্ধকার ঘরে৷ হা হুতাশ চাঁদ তাকে খুঁজে পেতে দেশলাই জ্বালায়৷ জনতা মেলায় যদি আধকাটা দেহ পড়ে থাকে, কারো শিহরণ জাগে, কেউ প্রতিহিংসাপরায়ণ৷ জিঘাংসার মৃত্যু হলে সে হাতে পাথর তুলে নেয়৷ কোন্ ব্যাধি নিয়ে গেল? কোন্ পরজীবী? ঘাতকের বেশ ধরে উল্লাস যাপন৷ এবার বিচার খাতা খোলে আর লিখে রাখে ক্রম দিনক্ষণ৷ চাঁদ আরও দিন গোনে রক্তক্ষয়ী রাতের আশায়৷ চিৎকারের শব্দ শোনা যায়৷ মাঝরাত; স্বপ্নদোষে মৃগিরোগ আছড়ে দেয় ঘরে৷ আমার শহরে যেন মৃত্যুগঙ্গা উজ্জাপনে আসে, সম্ভ্রম বরণ করে; পেশ করে রেস্তোরা সংবাদ৷ এত যে বিবাদ, তবু দুটি পরজীবী যদি মরে... ব্যাধিকে মারার মতো পাথর কি খুঁজে পাবে প্রিয়?