Posts

ইগো

প্রকৃতি সহায় হলে মেঘ ওঠে, গর্জনকে হাতিয়ার করে  নিয়তই ছড়ায় হুংকার ভুলে যাচ্ছে ভিটে-মাটি , ধুলো-বালি, ফেলে আসা জামানার পথ — নিজেকে পরখ করে , একটু পেছন ফিরে দেখা যদি যেত  হোঁচটের ক্ষত, পতনের দান হারানো জীবনরথ বেড়ে ওঠা ইগোর সমান ভুলে যায় অপরাধী, অপরাধ ভুলে যায় কিছু? যেটুকু বেড়েছ মেঘ— সবই মাটি, জল থেকে পাওয়া এত যে উড়েছে সেই ধূলায় গড়াবে বেপরোয়া‌‍‌‌‍‍।

দহন

আমরা যারা মরতে জানি, মারতে জানি নিজেকে কোপ; প্রতিবাদের পাতায় বসে সহনশীলতায় ঘাড় নামাবো, আমার কিসের দায়? ক্ষণিক সহন, আগুন বরণ, ঝলসে দিলে মুখ এক আঙুলে চালাচ্ছি দেশ এমনই উজবুক বিষাক্ত শ্লথ গিলছি বসে, কিসের অভিপ্রায়— নেশার সন্ধ্যায় আগুন আমার শৈশবাঘাত, আগুন ভবিষ্যত শুকিয়ে গেছে, শুকিয়ে গেছে পথ আর যেটুকু রইল বাকি সস্তা যখের ধন আঁকড়ে ধরা আগুন যেন আমার'ই প্রাক্তন পুকুর পাড়ে ধারের ধোঁয়া, মইয়ের ওপর ভাত ছিলিম যেন আস্ত যুবক, ঘুঙুর হারা নাচ— তবু কোথাও টান পড়েছে প্রতিবাদের ভাষায় সহনশীল অভ্যাসে— আগুন আমায় পুড়িয়ে দিও এগারশোর গ্যাসে। © প্রভাত ঘোষ

꧁ বারিষনামা (১৫) ꧂

একদিন, কোনোদিন এরকম'ই তুমুল বর্ষণে কতিপয় সময়ের টুকরোগুলি জুড়ে যাবে মনে ঝড় আর পাতার আওয়াজ ধুয়ে যাওয়া বিরক্তের কাজ; সেই খোলা জানালায় বসে একদৃষ্টে ভাবনার আকাশে দুজনের ভাবনায় মিল কোনোদিন দেখা নেই, ওপারেও পরিচয়হীন। রঙিন পাতায় যেন কবেকার আঁকা সাদা - কালো রঙের আল্পনা এই মিল লক্ষ - কোটি জনে। আজীবন স্বপ্নের স্মরণে মেঘের হৃদয় ধোয়া ছিটে এসে মুখে লাগে — (বুকে) শান্তির শলাকা অভিসার পূর্ণ শুধু স্পর্শ হাওয়ার মতো ফাঁকা কে বলবে— কে নেই, কে আছে— যারা চিরকাল ধরে মিলনের স্বাদ পায়— ঘর বাঁধে বৃষ্টির আকাশে। ©প্রভাত ঘোষ

নীব

বিষাক্ত পাতার ঝাঁঝ, অধর্মের বান ছাপ থাকে আজীবনকাল কার হাতে কী দিয়েছ সব জানে নধর কঙ্কাল ধারণা ও ধারণার নীব— আয়নাই বলে দেয় কার সত্তা কতটা গরীব লেখা থাকে পাতায় পাতায় অন্ধকারও যত্নে রাখে ছাপ ওল্টালেই দেখা যায় নোংরা সব পত্রের আলাপ কোনো কোপ স্থায়ি নয় রেশ থাকে সমস্ত ক্ষোভের সব কাদা ধোয়ার ক্ষমতা থাকেনা গঙ্গার ঢেউয়ের © প্রভাত ঘোষ

প্রতিবন্ধকতা

ঢুলে পড়া চোখ, অতন্দ্র প্রহরী— কড়ি তুলে ঘুমায় যে জন ভাবে এ'ই প্রকৃত আপন কেউ ভালমন্দ রেখেছে সাজানো আমি - তুমি ভেদাভেদ স্থাণু বলীয়ান দিক— সমস্ত প্রদীপ ছুটে চলে যায় আলো করে ঘর তবুও বর্বর যারা মাথা দিয়ে ভেঙেছে শহর কড়ি দিয়ে জ্বালিয়েছে গ্রাম তাদের সেলাম যারা পোড়া গন্ধে চেপে গেছে বুক আমাদের ভাষায় কুলুপ দেখি আর মরে যাই; এইটুকু চিরন্তন প্রথা— শব্দহীনতা প্রতিদিন ব্যাক্ত করে আমাদের প্রতিবন্ধকতা © প্রভাত ঘোষ

বাসন্তিকারসাজি

শাখায় শাখায় রঙিন পুঁতির শাড়ি বসন্ত রং আনলো বলে আবীর এসে ফুলের ওপর করেছে বাটপাড়ি এমনতরো মেজাজ অতর্কিতে ভালবাসায় ভেজা— স্পর্শে যেমন পলাশ পলাশ হাসি ঝাউয়ের মতো বাড়ছে যেন বাসন্তিকারসাজি অনেক চোখই হলুদ যেন ভোরের আকাশ  তাদের ডেকেছে কারশেডে তোমার সাথে মিলবো বলে আসি নিয়ম করে অদম্য এক জেদে ©প্রভাত ঘোষ

অন্ধকার শেষে (১১)

১১) কোথায় চলেছ — যেন মনখোয়া ডিঙির নাবিক উজাড় প্রান্তর যেন ধোঁয়ার প্রতীক হয়ে ভ্রমে ভ্রমে ভুলিয়েছে দিক কাজ আছে আজ নেই, কাল আর কাল-এ ঘেরা জাল ঝুনঝুনি বাজে ওই— ওপারে দাঁড়িয়ে মহাকাল৷ পরিণত ফল হয়ে যদি কোনো চারা দিতে পারো আগামী সূর্যের মতো নাম জ্বলে উঠবে তোমারও ©প্রভাত ঘোষ

অন্ধকার শেষে (১৫)

১৫) চারিদিকে জমকালো বিষ নিজেকে গোপন করে গুণী— আসলে আমরা সব'ই সময়ের দাম দিয়ে চিনি নিশির শিশিরে ভিজে শক্ত হয় কমলিকা কায়া নিজের বেহায়া রূপে রং লাগে— রঙিন সরম ঠিক'ই ফিরে আসে পড়ন্ত বিকেলে অন্ধকার সেজে ওঠে তারা দুটি কাছাকাছি এলে ©প্রভাত ঘোষ

ভাঙা জ্যোৎস্নার সঙ্গম

শিরিষের ঘেরাটোপে এমন বিমুগ্ধ রাতে... খুনসুটিতে বারে বারে চাঁদটিকে গিলে নিচ্ছে মেঘ৷ পাশের ঈশ্বরগৃহ তত লাল হয়নি এখনো.. যতটা এগিয়ে গেলে চিৎকারের শব্দ শোনা যায়৷ কিছু দূরে শ্মশানের শেষ গন্ধ অহং ঘুচিয়ে দিতে আলিঙ্গনরত৷ সেই মাঠ, গোলপোস্ট, তালগাছে সপ্তাহের ক্ষিদে জমে থাকে৷ দামোদর শুয়ে আছে কয়েক কদমে, নির্বিকার অর্ধমৃত পাখিটির প্রাণ দু-ফোঁটা জলের পাশে বিষাক্ত দ্বীপে৷ আষাঢ় আসেনা তবু কবিগুরু বেঁচে থাকে রাতচরা পতঙ্গের প্রাণে৷ জোনাকির দেহত্যাগে প্রেমিক পেঁচার ভীড়; দীর্ঘশ্বাসে প্রেম আর আঁধারে অতীত বেঁচে থাকে৷ রাস্তাটিও চলে গেছে সুদূর মিশর থেকে যতদূরে মৃত সভ্যতার ধ্বংসাবশেষ... নীল ফোয়ারার৷ নীলনদ, আকাশ ও প্রিয় অতীতের রঙে  বিষের দহন, আমৃত্যু ভোলার কোনো অবকাশ নেই৷ এই মাঠ; মাটি গন্ধ; হাওয়া ও পাতার প্রেমে  বাইজির নৃত্যগৃহে সাপ্তাহিক বিরহসঙ্গম৷ ধ্বংসপ্রায় ব্যাবিলন গান ধরে স্খলনের পরে৷

আশ্চর্য ওষুধ

     আমরা কতদিন ভালভাবে গল্প করিনি৷ পাশাপাশি বসে শরতের মেঘ দেখে কোনো এক কল্পনার ডিঙি চড়ে চলে যাওয়া হয়নি এই বাস্তবের থেকে বহু দূরে৷ প্রত্যন্ত গ্রামের মাঠে গোধূলির হাত ধরে যেভাবে সন্ধে নেমে আসে, আস্তে আস্তে জোনাকির আলো যেন উড়ে আসে দূর ওই আকাশের থেকে, উড়ন্ত তারার মতন৷ তার পর দীর্ঘশ্বাসগুলি বের করে হালকা বাতাস থেকে বুকভরা শ্বাস টেনে অপলক দৃষ্টিতে মায়া ভরা চাঁদটির দিকে তাকানো হয়নি বহুদিন৷ দোটানা জীবন তার একদিকে কাজ আর একপাশে বিদ্বেষের ভার৷ কল্পনা এক আশ্চর্য ওষুধ, সঞ্জিবনীর মতো কীভাবে যেন মৃতপ্রায় মন থেকে আবিষ্কার করে ফেলে মানুষের ডানা৷ ©প্রভাত ঘোষ