Posts

যেতে যেতে

কোথাও কখনো যদি চলে যেতে চাই নীল ঘর, বারান্দা হলুদ হাড়ির ভেতরে শেষ বেঁচে থাকা দু-টুকরো খুদ যেতে যদি না দাও তখন তবু বলব শোন্ তবে শোন্  ওপাশের দীঘি বেয়ে রাত নেমে আসবে যখন পদ্মের দুলুনি এসে ঘাড় নেড়ে বলে যাবে— সে'ই ছিল এক অনাদায়ী ঋণ নিশীথ মসৃন— কখনো চাঁদের কাছে ধার নিত প্রেমের ঠিকানা কামিনীর গন্ধ শুঁকে চলে যেত জলের ভেতর সে এক সুরাহা ছিল সুরা ঢেলে দিত রাতে, মন তাকে ভেবে নিত ঘর৷ © প্রভাত ঘোষ

মিথ্যে হোক

যাবেন বলে তো বুকে আগলে রাখিনি ছাড়ছি না কোনো শব্দ, কোনো প্রেম, অলীক বিধান কেড়ে নিতে পারবে না— তাও আমার যে বহু ঋণ, এক কণা দিতেও পারিনি৷ কতটা মলিন হলে শোক লেখে রক্তস্নাত মন ঈশ্বরের মৃত্যু বরণ— কিভাবে বহন করে নিয়ে যাবে অস্তগামী ডানা এ কেমন কান্নার বাণী, কণ্ঠে কোনো বিদেহী আঘাত অথচ কেন যে আজ এ হেন শোকের মুখে ঝামা ঘষে দিতে পারছি না এটুকু সান্তনা ছিল সূর্যের কলমে আমার ঈশ্বর লিখে চলেছেন— কোথাও, কখনো  প্রণামের আশায় আশায় নিত্যদিন ফুল দিয়ে সাজিয়েছি রাতের সড়ক আজ শুধু এটুকু প্রার্থনা হে ঈশ্বর— মিথ্যে হোক, মৃত্যু মিথ্যে হোক © প্রভাত ঘোষ

ক্রয়-বিক্রয়

ঘর দেখে বিক্রি হয় শরীর বা হাত পেট বুঝে বিক্রি হয় কেউ চরম আঘাত, মুখে চরিত্র আড়াল, শুধু ঢং থাকে প্রত্যাবর্তনেও ক্রেতা আর বিক্রেতার গোপন বিহার অবাধে পোষাক খুলে  কেনা বেচা আখছার মন  মুখোশ চিনিয়ে দেয় নেমক হারাম আর পুষে রাখা বিষের ধরণ চারিদিকে বহু মুখ, মুখোশ আর নিত্য ব্যাভিচার কারও কোনো দায় নেই হত্যারও এমন'ই বিচার হাতুড়ি পিটিয়ে মারে মাঝে মাঝে, দাগহীন নিষ্ঠুর অন্তঃক্ষরণ কোন্ বৃষ্টি ধুয়ে ফেলবে এমনি পরিস্থিতি? এত জ্বলন্ত পোষাক তবে কার— কোথাও কি বিক্রি নেই স্মৃতি মুছে ফেলা ইরেজার! © প্রভাত ঘোষ

ঔদ্ধত্ত্বের শিখায়

হঠাৎ মৃত্যুর দিনে দুটো ফুল হাতে যারা আসেনি কখনো... ভয়ঙ্কর সুনামির পূর্বাভাস জানার পরেও যারা সাবধান করেনি সেদিন...  ছটফট করতে থাকা যন্ত্রণার দিনে যারা কথার মলমটুকু লাগাতে আসেনি... এ লেখা তাদের কাছে যাক৷ উড়ে গেল ঘর আর পুড়েছিল অন্ধের সংসার.. কে কতটা ভার তুলে নিতে এসেছিল সেই দিন? অথবা কিঞ্চিত দুটো পরিযায়ী মেঘ হয়ে সামান্য বৃষ্টির ছিঁটে দিয়েছিল নিদাঘ প্রান্তরে? যে ছিল সে আজও আছে পাশাপাশি হাত ধরে৷ তলিয়ে যেতাম, ঠিক সে সময় তুলে এনেছিল এক নারকীয় কূপ থেকে ফুলের বাগানে৷ প্রতিটি রাতের চোখে লেখা আছে তারই শুভনাম৷ ভালোবাসা বুকে নিয়ে তার'ই কথা লিখতে এলাম...                                                      — প্রভাত ঘোষ এই সূত্রে অদিতি সরকারের এই লেখাটি লিখতে বড় ইচ্ছে করল— "পুরুষের ভালোবাসা পাওয়াও সাধনার বিষয়। দেহদানের পরেই যে-নারী ব'লে পুরুষের ভালোবাসা পেয়েছি, সে নির্বোধ; পুরুষের বিশ্বাস ছুঁয়েই দেহ ছুঁতে হয়... শরীর তো বেশ্যাও দেয়।"

বসন্ত

Image
  'কখনো যাব না' বলে থেমে আজও থাকেনি উড়ান৷ বাতাসের সাথে শোঁ শোঁ করে এগোনোর যাত্রাপথ মলিন হয়নি কখনোই পশ্চাতে বারুদ আছে বলে৷       বেড়িয়ে এসেছ বুড়ি? বহুকাল না দেখায় অচেনা লেগেছে কোনো রং? এ মনের চোখ খুলে শ্বাসের দরজা ঠেলে বেলি ফুলে ডুবিয়েছ প্রাণ?         সহস্র অঘ্রাণ যেন তোমারই অপেক্ষায় আস্তে আস্তে বৃদ্ধ হয়ে গেল আর তুমি তাকে চেয়েও দেখলে না৷ চৈত্র শেষে কচি শাল - পলাশের ফুল প্রেমিকার মতো এসে চুলের কিনার ধরে গালে ঠেকে দিয়ে যায় চুম্বনের নতুন সমাস৷ সমস্ত জগত জুড়ে ভালোবাসা তোমারই তো বাস৷ আর আমি আজীবন সন্যাসে জড়াব বলে রূদ্রাক্ষের মালা নিয়ে বসি৷        অবুঝের চোখে কত রং এই বসন্ত দিয়েছে৷ শুনিয়েছে একতার গান, হে প্রেম, মহান৷ এতটা মহান যে— চরণের চিহ্নটুকু নেই তবু চারিদিক ঘিরে ছড়িয়ে রয়েছ মানবের প্রতিটি কোণায়৷ যে যার যাত্রার পথ ভালবেসে নিজে খুঁজে নেয়৷             যতই এগিয়ে যাই গ্রাম থেকে গ্রামান্তর সুরভির টানে, যে পথ হাঁটিনি আমি আগে কোনো মিথ্যা অভিমানে৷ হৃদয়ের পথ চেনা যায় জড়তার নাগ পাশ সরিয়ে বেরোলে... এ জীবন জ্যান্ত হয় ফি-বছর বসন্তের কোলে৷ © প্রভাত ঘোষ

নিমেষ

যাচ্ছে নিমেষ সময় ভেঙে দেখছে না কি একটু থেমে— বুকের নরম ছটফটালো ভীষণ পরিত্যাগে মেঘের যদি হৃদয় ভাঙে কণ্ঠ দিয়ে কষ্ট নামে জানলা থেকে হাত ছুঁতে চায় ফেরার অসম্ভবে ভেতর ভেতর জড়িয়ে ধোরো বৃষ্টি নামার আগে মনের ভেতর টুকরো ডানা মরার আগে ঝাপটালো না! দোষ কী জলের যখন ঘরেই ঝড়ের আসা যাওয়া হঠাৎ চোখে প্রেম নামিয়ে অন্ধকারে ঠোঁট বাড়িয়ে রাতের হাওয়া ফের যদি আজ ছোঁয়ার কথা ভাবে আমায় ভেবে জড়িয়ে ধোরো বৃষ্টি নামার আগে © প্রভাত ঘোষ

প্রেম পিরামিড (২০)

হঠাৎ মৃত্যুর দিনে দুটো ফুল হাতে যারা আসেনি কখনো... ভয়ঙ্কর সুনামির পূর্বাভাস জানার পরেও যারা সাবধান করেনি সেদিন...  ছটফট করতে থাকা যন্ত্রণার দিনে যারা কথার মলমটুকু লাগাতে আসেনি... এ লেখা তাদের কাছে যাক৷ উড়ে গেল ঘর আর পুড়েছিল অন্ধের সংসার.. কে কতটা ভার তুলে নিতে এসেছিল সেই দিন? অথবা কিঞ্চিত দুটো পরিযায়ী মেঘ হয়ে সামান্য বৃষ্টির ছিঁটে দিয়েছিল নিদাঘ প্রান্তরে? যে ছিল সে আজও আছে পাশাপাশি হাত ধরে৷ তলিয়ে যেতাম, ঠিক সে সময় তুলে এনেছিল এক নারকীয় কূপ থেকে ফুলের বাগানে৷ প্রতিটি রাতের চোখে লেখা আছে তারই শুভনাম৷ ভালোবাসা বুকে নিয়ে তার'ই কথা লিখতে এলাম...                                                             — প্রভাত ঘোষ

অনুবাদ

   অলঙ্কার রিক্ত হলে বাঁশি ভেঙে ছড়ায় বিদ্যুৎ... আফশোষ নেই, শুধু নিত্যদিন ভাঙার যন্ত্রণা৷ জরুরি ছিল না, জরুরি ছিল না৷ অসমাপ্ত সন্ধ্যা পূর্ণ হয়ে যাবে আজ নয় কাল, কোনো কোনো হাত ভালোবাসলে মন ভুলে যায় বিরহী খেয়াল, শাপিত জামানা... জরুরি ছিল না, খুব জরুরি ছিল না৷        হৃদয়ের উপন্যাসে অনাহুত জটিলতা ভীড় করে আসে বলে অনুবাদ ছোট হওয়া ভালো৷ তিলে তিলে গড়ে ওঠা মেঘপূঞ্জ ভেঙে পড়লে নেমে আসে জল, এসব চলিত কথা কার'ই বা অজানা... তবু জরুরি ছিলনা, এত জরুরি ছিল না৷ ছুঁড়ে ফেললে রাগ আর ভাঙলে আবেগ, ভিতরি জুবান থেকে টেনে আনে নিরাশার খেদ৷ দূরের আগুন দেখে অন্ধকার ভেবে নেয় ভালবাসা, নয়তো প্রেমিক নদীর পাশাপাশি বসে দু-হাতে মিলন হলে একসাথে জীবনসঙ্গম করা যায়৷ আলিঙ্গন করলে কত পুড়তে হয় মধুবনে— সে রূপ চেনেনি বলে পেলো বিশ্বাসের নজরানা৷ জরুরি ছিল না, বোধহয় জরুরি ছিল না৷       ক্ষোভের'ও আয়না হয়, প্রতিদিন মেলে ধরলে ধীরে ধীরে জ্বলে যায় সবুজ দ্বীপের মহাদেশ, ঈশ্বরের প্রেমাংশ হনন করেও চেহারায় কিছু অনুতাপ— টুকরো'ও ছিল না৷ চাঁদের'ও বিচার হয়, নিভে যায় সময়ের ফের-এ৷ বিচার জরুরি, তবু এমন নির্মম কোপ! জরুরি ছিল না, খুব জরুর

জার্নি

আশ্বিনের হঠাৎ বৃষ্টির পর রামধনু রঙের মতোই আমার আকাশ জুড়ে এলে, তারপর আর কোনো রং দেখতে পাই না কোথাও৷ প্রথম মৃত্যুর পরে উদ্বাস্তু আনন্দ কতো কতো পথ একা হাঁপিয়ে মরেছে...  যতটা আদর পেলে চিতা ছেড়ে উঠে বসে শব.. সে সব সোহাগি ছোঁয়া, ভালোবাসা বেপরোয়া লিখে রাখে বেহায়া সড়ক৷ এটুকুও ফাঁক নেই, বাতাস পেরিয়ে যাবে.. আলগা তুমি করোনি বাঁধন৷ তৃষ্ণার্ত পিঠের আশা পূর্ণ করে অতৃপ্ত স্তন৷ ছুঁয়ে যাওয়া মাথা, ভালোবাসাগাথা, আস্তে আস্তে ফিকে হওয়া রোদ.. শীতের বাতাসে কত শিহরণ জমে থাকে মন ভরে দেখে জি.টি রোড৷ অনর্গল খোশগল্প বহুকাল শোনে নি বাইক৷ এসো হে বিলম্ব প্রেম, ঢেলে দাও যত অনুভব.. স্বপ্নের ভেতর থেকে তুলে আনো রঙিন বাস্তব৷ ©প্রভাত ঘোষ

সৎকার

দাহ - সৎকার করে এলাম বিভিষিকা নামক এক সম্পর্কের অধ্যায়৷ অহরহ পোড়াতে পোড়াতে বিগত পৈশাচিক সময় চমৎকার বুঝিয়ে দিয়ে বলল.. যেখানে সততা নেই, সবার প্রথমে তাকে পূন্য আগুনের মাঝে সৎকার করে আসতে হয়৷  অমাবস্যার অধ্যায়ের শেষ পৃষ্ঠায় হস্তাক্ষর করতে গিয়ে মনে এল... উপন্যাস এখনও অনেকখানি বাকি৷ কতখানি নির্মমের আঘাত লুকিয়ে ছিল... এতদিনে মুখোশ সরালে৷ ক্ষমাহীন হইনি তবুও৷ সমাপ্তির অগ্নিকাণ্ড এখনো নেভেনি, কিছু অঙ্গারের জ্বালা নেভে না কখনো৷ আজীবন পুড়তে থাকে অপেক্ষায়, সময়ের দান দেখবে বলে৷  প্রেতাত্মা উন্মাদ হয়ে ঘুরে মরলেও তাকে হাত তুলে ভাত দেয়না কেউ'ই৷ আরও একটা মৃত্যু দেখতে চাই এ জীবনে৷ রক্তগলা দিন থেকে আস্তে আস্তে ক্ষয় হওয়া জীবাষ্মের শেষ দিন পর্যন্ত... এতটুকু বেঁচে থেকে নিজেকে নিভিয়ে ফেলা যেন এক মহাজাগতিক আহ্লাদের শেষ স্বপ্ন... সমস্ত জ্বালার ব্যথা, যন্ত্রণার ইতিকথা সেদিন শোনাবে, সেদিন জুড়াবে৷   তারপর কোনো অধ্যায়ের নব চরিত্রের মাঝখানে নিজেকে ছড়িয়ে ফেলব, নিজেকে মিশিয়ে নেব অন্য নতুন কোনো শরীরের ঘ্রাণে... কিছুটা ঘুমিয়ে নেব আমাকে বাঁচানো সেই নৌকাটির হৃদয়ের ঠিক মাঝখানে৷ © প্রভাত ঘোষ