Posts

ঔদ্ধত্ত্বের শিখায়

হঠাৎ মৃত্যুর দিনে দুটো ফুল হাতে যারা আসেনি কখনো... ভয়ঙ্কর সুনামির পূর্বাভাস জানার পরেও যারা সাবধান করেনি সেদিন...  ছটফট করতে থাকা যন্ত্রণার দিনে যারা কথার মলমটুকু লাগাতে আসেনি... এ লেখা তাদের কাছে যাক৷ উড়ে গেল ঘর আর পুড়েছিল অন্ধের সংসার.. কে কতটা ভার তুলে নিতে এসেছিল সেই দিন? অথবা কিঞ্চিত দুটো পরিযায়ী মেঘ হয়ে সামান্য বৃষ্টির ছিঁটে দিয়েছিল নিদাঘ প্রান্তরে? যে ছিল সে আজও আছে পাশাপাশি হাত ধরে৷ তলিয়ে যেতাম, ঠিক সে সময় তুলে এনেছিল এক নারকীয় কূপ থেকে ফুলের বাগানে৷ প্রতিটি রাতের চোখে লেখা আছে তারই শুভনাম৷ ভালোবাসা বুকে নিয়ে তার'ই কথা লিখতে এলাম...                                                      — প্রভাত ঘোষ এই সূত্রে অদিতি সরকারের এই লেখাটি লিখতে বড় ইচ্ছে করল— "পুরুষের ভালোবাসা পাওয়াও সাধনার বিষয়। দেহদানের পরেই যে-নারী ব'লে পুরুষের ভালোবাসা পেয়েছি, সে নির্বোধ; পুরুষের বিশ্বাস ছুঁয়েই দেহ ছুঁতে হয়... শরীর তো বেশ্যাও দেয়।"

বসন্ত

Image
  'কখনো যাব না' বলে থেমে আজও থাকেনি উড়ান৷ বাতাসের সাথে শোঁ শোঁ করে এগোনোর যাত্রাপথ মলিন হয়নি কখনোই পশ্চাতে বারুদ আছে বলে৷       বেড়িয়ে এসেছ বুড়ি? বহুকাল না দেখায় অচেনা লেগেছে কোনো রং? এ মনের চোখ খুলে শ্বাসের দরজা ঠেলে বেলি ফুলে ডুবিয়েছ প্রাণ?         সহস্র অঘ্রাণ যেন তোমারই অপেক্ষায় আস্তে আস্তে বৃদ্ধ হয়ে গেল আর তুমি তাকে চেয়েও দেখলে না৷ চৈত্র শেষে কচি শাল - পলাশের ফুল প্রেমিকার মতো এসে চুলের কিনার ধরে গালে ঠেকে দিয়ে যায় চুম্বনের নতুন সমাস৷ সমস্ত জগত জুড়ে ভালোবাসা তোমারই তো বাস৷ আর আমি আজীবন সন্যাসে জড়াব বলে রূদ্রাক্ষের মালা নিয়ে বসি৷        অবুঝের চোখে কত রং এই বসন্ত দিয়েছে৷ শুনিয়েছে একতার গান, হে প্রেম, মহান৷ এতটা মহান যে— চরণের চিহ্নটুকু নেই তবু চারিদিক ঘিরে ছড়িয়ে রয়েছ মানবের প্রতিটি কোণায়৷ যে যার যাত্রার পথ ভালবেসে নিজে খুঁজে নেয়৷             যতই এগিয়ে যাই গ্রাম থেকে গ্রামান্তর সুরভির টানে, যে পথ হাঁটিনি আমি আগে কোনো মিথ্যা অভিমানে৷ হৃদয়ের পথ চেনা যায় জড়তার নাগ পাশ সরিয়ে বেরোলে... এ জীবন জ্যান্ত হয় ফি-বছর বসন্তের কোলে৷ © প্রভাত ঘোষ

নিমেষ

যাচ্ছে নিমেষ সময় ভেঙে দেখছে না কি একটু থেমে— বুকের নরম ছটফটালো ভীষণ পরিত্যাগে মেঘের যদি হৃদয় ভাঙে কণ্ঠ দিয়ে কষ্ট নামে জানলা থেকে হাত ছুঁতে চায় ফেরার অসম্ভবে ভেতর ভেতর জড়িয়ে ধোরো বৃষ্টি নামার আগে মনের ভেতর টুকরো ডানা মরার আগে ঝাপটালো না! দোষ কী জলের যখন ঘরেই ঝড়ের আসা যাওয়া হঠাৎ চোখে প্রেম নামিয়ে অন্ধকারে ঠোঁট বাড়িয়ে রাতের হাওয়া ফের যদি আজ ছোঁয়ার কথা ভাবে আমায় ভেবে জড়িয়ে ধোরো বৃষ্টি নামার আগে © প্রভাত ঘোষ

প্রেম পিরামিড (২০)

হঠাৎ মৃত্যুর দিনে দুটো ফুল হাতে যারা আসেনি কখনো... ভয়ঙ্কর সুনামির পূর্বাভাস জানার পরেও যারা সাবধান করেনি সেদিন...  ছটফট করতে থাকা যন্ত্রণার দিনে যারা কথার মলমটুকু লাগাতে আসেনি... এ লেখা তাদের কাছে যাক৷ উড়ে গেল ঘর আর পুড়েছিল অন্ধের সংসার.. কে কতটা ভার তুলে নিতে এসেছিল সেই দিন? অথবা কিঞ্চিত দুটো পরিযায়ী মেঘ হয়ে সামান্য বৃষ্টির ছিঁটে দিয়েছিল নিদাঘ প্রান্তরে? যে ছিল সে আজও আছে পাশাপাশি হাত ধরে৷ তলিয়ে যেতাম, ঠিক সে সময় তুলে এনেছিল এক নারকীয় কূপ থেকে ফুলের বাগানে৷ প্রতিটি রাতের চোখে লেখা আছে তারই শুভনাম৷ ভালোবাসা বুকে নিয়ে তার'ই কথা লিখতে এলাম...                                                             — প্রভাত ঘোষ

অনুবাদ

   অলঙ্কার রিক্ত হলে বাঁশি ভেঙে ছড়ায় বিদ্যুৎ... আফশোষ নেই, শুধু নিত্যদিন ভাঙার যন্ত্রণা৷ জরুরি ছিল না, জরুরি ছিল না৷ অসমাপ্ত সন্ধ্যা পূর্ণ হয়ে যাবে আজ নয় কাল, কোনো কোনো হাত ভালোবাসলে মন ভুলে যায় বিরহী খেয়াল, শাপিত জামানা... জরুরি ছিল না, খুব জরুরি ছিল না৷        হৃদয়ের উপন্যাসে অনাহুত জটিলতা ভীড় করে আসে বলে অনুবাদ ছোট হওয়া ভালো৷ তিলে তিলে গড়ে ওঠা মেঘপূঞ্জ ভেঙে পড়লে নেমে আসে জল, এসব চলিত কথা কার'ই বা অজানা... তবু জরুরি ছিলনা, এত জরুরি ছিল না৷ ছুঁড়ে ফেললে রাগ আর ভাঙলে আবেগ, ভিতরি জুবান থেকে টেনে আনে নিরাশার খেদ৷ দূরের আগুন দেখে অন্ধকার ভেবে নেয় ভালবাসা, নয়তো প্রেমিক নদীর পাশাপাশি বসে দু-হাতে মিলন হলে একসাথে জীবনসঙ্গম করা যায়৷ আলিঙ্গন করলে কত পুড়তে হয় মধুবনে— সে রূপ চেনেনি বলে পেলো বিশ্বাসের নজরানা৷ জরুরি ছিল না, বোধহয় জরুরি ছিল না৷       ক্ষোভের'ও আয়না হয়, প্রতিদিন মেলে ধরলে ধীরে ধীরে জ্বলে যায় সবুজ দ্বীপের মহাদেশ, ঈশ্বরের প্রেমাংশ হনন করেও চেহারায় কিছু অনুতাপ— টুকরো'ও ছিল না৷ চাঁদের'ও বিচার হয়, নিভে যায় সময়ের ফের-এ৷ বিচার জরুরি, তবু এমন নির্মম কোপ! জরুরি ছিল না, খুব জরুর

জার্নি

আশ্বিনের হঠাৎ বৃষ্টির পর রামধনু রঙের মতোই আমার আকাশ জুড়ে এলে, তারপর আর কোনো রং দেখতে পাই না কোথাও৷ প্রথম মৃত্যুর পরে উদ্বাস্তু আনন্দ কতো কতো পথ একা হাঁপিয়ে মরেছে...  যতটা আদর পেলে চিতা ছেড়ে উঠে বসে শব.. সে সব সোহাগি ছোঁয়া, ভালোবাসা বেপরোয়া লিখে রাখে বেহায়া সড়ক৷ এটুকুও ফাঁক নেই, বাতাস পেরিয়ে যাবে.. আলগা তুমি করোনি বাঁধন৷ তৃষ্ণার্ত পিঠের আশা পূর্ণ করে অতৃপ্ত স্তন৷ ছুঁয়ে যাওয়া মাথা, ভালোবাসাগাথা, আস্তে আস্তে ফিকে হওয়া রোদ.. শীতের বাতাসে কত শিহরণ জমে থাকে মন ভরে দেখে জি.টি রোড৷ অনর্গল খোশগল্প বহুকাল শোনে নি বাইক৷ এসো হে বিলম্ব প্রেম, ঢেলে দাও যত অনুভব.. স্বপ্নের ভেতর থেকে তুলে আনো রঙিন বাস্তব৷ ©প্রভাত ঘোষ

সৎকার

দাহ - সৎকার করে এলাম বিভিষিকা নামক এক সম্পর্কের অধ্যায়৷ অহরহ পোড়াতে পোড়াতে বিগত পৈশাচিক সময় চমৎকার বুঝিয়ে দিয়ে বলল.. যেখানে সততা নেই, সবার প্রথমে তাকে পূন্য আগুনের মাঝে সৎকার করে আসতে হয়৷  অমাবস্যার অধ্যায়ের শেষ পৃষ্ঠায় হস্তাক্ষর করতে গিয়ে মনে এল... উপন্যাস এখনও অনেকখানি বাকি৷ কতখানি নির্মমের আঘাত লুকিয়ে ছিল... এতদিনে মুখোশ সরালে৷ ক্ষমাহীন হইনি তবুও৷ সমাপ্তির অগ্নিকাণ্ড এখনো নেভেনি, কিছু অঙ্গারের জ্বালা নেভে না কখনো৷ আজীবন পুড়তে থাকে অপেক্ষায়, সময়ের দান দেখবে বলে৷  প্রেতাত্মা উন্মাদ হয়ে ঘুরে মরলেও তাকে হাত তুলে ভাত দেয়না কেউ'ই৷ আরও একটা মৃত্যু দেখতে চাই এ জীবনে৷ রক্তগলা দিন থেকে আস্তে আস্তে ক্ষয় হওয়া জীবাষ্মের শেষ দিন পর্যন্ত... এতটুকু বেঁচে থেকে নিজেকে নিভিয়ে ফেলা যেন এক মহাজাগতিক আহ্লাদের শেষ স্বপ্ন... সমস্ত জ্বালার ব্যথা, যন্ত্রণার ইতিকথা সেদিন শোনাবে, সেদিন জুড়াবে৷   তারপর কোনো অধ্যায়ের নব চরিত্রের মাঝখানে নিজেকে ছড়িয়ে ফেলব, নিজেকে মিশিয়ে নেব অন্য নতুন কোনো শরীরের ঘ্রাণে... কিছুটা ঘুমিয়ে নেব আমাকে বাঁচানো সেই নৌকাটির হৃদয়ের ঠিক মাঝখানে৷ © প্রভাত ঘোষ

সঞ্জিবনী

এ ঘর ও ঘর করে খুঁজে গেছি এতদিন, ভ্রান্তির শিবিরে বসে আগুনের আঁচে কত যে বিনিদ্র রাত চিতা হয়ে জ্বলে গেছে হিসেব রাখিনি৷ এতগুলো বছরের নিটোল তপস্যা বুঝি পূর্ণ হল আজ! তোমাকে সন্তুর বলি অথবা সাগর থেকে ছুটে আসা হৃদয়ের ঢেউ, প্রতিটা জখম এসে ধুয়ে দাও, মুছে দাও পুরোনো অঙ্গার৷ ভালোবাসা সোহাগের প্রলেপ লাগালে বুঝি কঙ্কালের বুক থেকে বের হয়ে আসে দীপ্ত হীরে! তুমি তো হীরের চেয়ে কম নও প্রিয় ভালোবাসা৷ এ দেশে আঘাত এলে ওপারের আয়নায় ভেসে ওঠে যন্ত্রণার সুর৷ এমন জড়িয়ে ধরি না পাওয়ার ঘরে, ঘন অন্ধকারে.. না ধরে পারি না যে—  পূজার থালাকে আমি কী দিয়ে সাজাই? কী প্রসাদে ঈশ্বরীকে পাই?  প্রতি রাত শব্দ শোনে, স্বপ্ন দেখে, কানে আসে রাজকন্যার অশ্বারোহী ক্ষুর...  সংসার সাজাবো বলে ইন্দ্রের প্রাসাদ থেকে এনেছি সিঁদূর৷ ©প্রভাত ঘোষ

তোমাকেই চাই

তোমাকেই চাই.. শুধু তোমাকেই চাই... সমুদ্রের পাড়ে বসে বৃষ্টির সন্ধ্যায়.. তোমাকেই চাই, শুধু তোমাকেই চাই... নির্জন পাহাড় ঘেরা সবুজ জ্যোৎস্নায়... তোমাকেই চাই, শুধু তোমাকেই চাই... যে সময় সূর্য এসে জানাবে বিদায়.. তোমায় জড়িয়ে ধরে হেঁটে যাব গুটি গুটি পা'য়... গোধূলীর ঢেউ আর প্রেমের হাওয়ায়... তোমাকেই চাই, ওগো তোমাকেই চাই.... তোমাকেই চাই, শুধু তোমাকেই চাই.... ©প্রভাত ঘোষ

মৃত্যু

     এমন মৃত্যু দেখিনি কোনোদিন, শরতের শীত দিয়ে শুরু হয়ে বসন্তকে আরও রঙিন হতে দেখেছি... তবু এমন মৃত্যু দেখিনি যেখানে অমাবস্যা হত্যে দিয়ে বসে থাকে সংসারকে ছিঁড়ে খাবে বলে.. সত্যি বলছি, এমন মৃত্যু আর দেখিনি কখনো৷ টুকরো টুকরো নাভিমূল, ফুটো হওয়া হৃদয়কে একসাথে কবরে ও শ্মশানে দেখেছি৷      শুয়েছিল কলজে থেকে খসে পড়া ভালবাসার ভগ্নাবশেষ.. দেখে গেছি, ছিঁড়ে গেছি, নিংড়ে গেছি নিজের ভিতর৷ উহ টুকু করতে পারিনি... বন্ধ দরজার শেষে হাউহাউ কেঁদে গেছে স্বপ্ন ভেঙে অন্ধ হওয়া চোখ, কেউ তাকে চিনতে পারেনি৷      এমন মৃত্যু আর দেখিনি কখনো যাকে গোপনে পুড়িয়ে দিতে হয়.. সেই ঘর এখনো সাজানো আছে নির্লিপ্ত পাহাড়ের মতো৷ গোলাপি দেওয়াল, জানালায় ফুল ফুল পরদাগুলো বাতাসে পাখনা মেলে উড়ে এসে এখনো আদর করে... শুধু এক না পাওয়ার হাহাকার, হারাবার চিৎকার উন্মত্ত করে তোলে বারবার ভস্মভরা ঘরে৷      এখন এমন কেউ নেই... আলতো করে ছুঁয়ে দেবে ঠোঁটের শয্যায়, হঠাৎ জড়িয়ে নেবে নীল নীল আলো জ্বলা রাতে... এখন শুধুই রাত জেগে থাকে একা মনস্তাপে৷