Posts

আশ্চর্য ওষুধ

     আমরা কতদিন ভালভাবে গল্প করিনি৷ পাশাপাশি বসে শরতের মেঘ দেখে কোনো এক কল্পনার ডিঙি চড়ে চলে যাওয়া হয়নি এই বাস্তবের থেকে বহু দূরে৷ প্রত্যন্ত গ্রামের মাঠে গোধূলির হাত ধরে যেভাবে সন্ধে নেমে আসে, আস্তে আস্তে জোনাকির আলো যেন উড়ে আসে দূর ওই আকাশের থেকে, উড়ন্ত তারার মতন৷ তার পর দীর্ঘশ্বাসগুলি বের করে হালকা বাতাস থেকে বুকভরা শ্বাস টেনে অপলক দৃষ্টিতে মায়া ভরা চাঁদটির দিকে তাকানো হয়নি বহুদিন৷ দোটানা জীবন তার একদিকে কাজ আর একপাশে বিদ্বেষের ভার৷ কল্পনা এক আশ্চর্য ওষুধ, সঞ্জিবনীর মতো কীভাবে যেন মৃতপ্রায় মন থেকে আবিষ্কার করে ফেলে মানুষের ডানা৷ ©প্রভাত ঘোষ

পাষাণে তুষার

অনন্ত যৌবন এক পাষাণের ক্ষুণ্ণ হয়েছিল দ্বিধা-দ্বন্দ্বে, জীবনের তুমুল মশকরায়৷ অনুকূল আবহাওয়া, যার কোনো ফিরবার তাড়াও ছিল না— তেমনই আয়েশ করে বিকেলের বৃষ্টির পরে শীত শীত বাতাসের মতো এসে জড়িয়ে ধরেছ যেন কতদিন ধরে অপেক্ষায় ছিলে৷ ক্ষয়ের হারানো জ্বালা প্রতিদিন ভরে দেয় আলগোছে ঠোঁটের ছোঁয়ায়৷  বিমনা বিকেল তুমি থেকে যাও আরও কিছুক্ষণ, না বলা বারণ বুঝে আরও শীতে কাবু করে দাও৷ চোখের প্রতিটি কোণে গুড়িগুড়ি বরফের প্রেম, হাত ছোঁয়া আলতো পশম সুদূর পাহাড়ি কোনো বরফের গলে যাওয়া নদী উপত্যকা প্রাণ ভরে স্বাগত জানায়— এসো আজ মিশে যাও, ভালোবেসে পা ভেজাও, দু-জন দু-জনা থেকে চেয়ে নাও পূর্ণতার ফুল৷ পাপড়ির খাশ গন্ধে, অচেনা রঙের ছন্দে জীবনে আসুক কুহুতান৷ এ গান আমার, এ গান তোমার, আমাদের মধ্যবর্তী লয়-এ চূর্ণ হোক সমগ্র পাষাণ৷ ©প্রভাত ঘোষ

শুভ নববর্ষ

❤️ শুভ নববর্ষ ❤️ ৭) প্রতিদিন নতুন রকম, আকারে বাড়ছে সিকি সীমাহীন উদ্যমতাও আমাদের প্রাত্যহিকি বাজারের হাজার ভিড়ের মাঝে মন ভুলিয়ে থাকা কত কাজ বেকার রাখা বেকারের নিয়ম নীতি জমায়েত নতুন মানুষ, কত প্রেম নতুন ঢেউয়ে পেছনের পথ বলে দেয় পথিকের ব্রাত্য কে কে কত গান ছড়িয়ে থাকা সুরে কোন নদীর মেজাজ প্রতিদিন নতুন রেওয়াজ যেন এক স্বপ্ন লেখে দ্বিধাহীন রাত্রি আঁকে হৃদয়ের স্বপ্নবিলাস কিছু ফুল নতুন ফুটুক, ক'টা দিন হলুদ পলাশ সে জানে কোন ঘ্রাণে কার শরীরের স্পর্শ মেশে এ নদীর নতুন দেশে যে প্রেমের পান্থনিবাস ঝরা দিন কুড়িয়ে রেখে কে বাঁচে আজ অবধি ক'টা দিন নিয়মহীনায়, ক'টা দিন নিজের প্রতি— অনাদিকালের স্রোতে জীবনের নতুন পাওয়া এ ভালোবাসার হাওয়ায় দুটো দিন কাটাই যদি © প্রভাত ঘোষ

ঘুমন্ত প্রদীপ

১) বিচার ঘুমিয়ে থাকে বিশ্বাসের ঘরে তলে তলে গিলে ফেলে বাগান, বসত বাড়ি অগোচরে অবিশ্বাসী নদী ঘুমের ভেতর আমি-তুমি তুমি-আমি সন্ধি করে স্বপ্ন দেখি রোজ মাঝে মধ্যে খোঁটা দেয় জ্বলন্ত কাগজ ঘুম-স্বপ্নে সুখ, আর সুখস্বপ্নে ঘুম বিশ্বাস এমনই এক নেশাপূর্ণ তূণ— আমাদের সন্ধি ভাঙে নেশার দরুন

খণ্ডচিত্র

স্নান সেরে বসিনি এখনো৷ জমায়েত টানে না আমায়৷ যেন এক খণ্ডচিত্র মেঘ যার কোনো রাস্তাই নেই, বাতাসের সঙ্গী হয়ে এখানে ওখানে ওড়ে৷ স্থায়ী কোনো বারান্দাও নেই যেখানে উজাড় মনে বিষণ্ণতা উগরে দিয়ে আসে৷ শীতল জলধী তাপে ছেঁকা পেলে হঠাৎ বাষ্পের মতো ছতিছন্ন হয় চারিদিকে৷  কে আমি, কী ধাতু যার মাটির বাঁধন মানে টান৷ বাতাসের ঠুংরি তুমি দিওনা কক্ষণো৷ উদাসী পালক আজও নিজেকে চেনে না৷ মৌনস্বর নাভি থেকে বুকে উঠে এলে সমস্ত বাতাস যেন একপলকায় স্তব্ধ হয়ে যায়৷

কাঁটা দেওয়া আরাম কেদারা

বাইরে মসৃণ পথ, রাস্তার দু-পাশ জুড়ে সারি দিয়ে বহুতল ফ্ল্যাট৷ সারি সারি কৃষ্ণচূড়া গাছ, আর তার মাঝখানে চলে যাওয়া চমৎকার রাস্তা ধরে যে সকল রঙচঙে চারচাকা মিড়িয়াম স্পিড ধরে চলে তার ভেতরেও চলে পুরোনো সঙ্গীত৷   নতুন চালের সাথে মানিয়ে নিতেও ঘোড়া অনেকটা পাহাড় পেরোয়৷  যারা শুধু আয়নায় মুখ দেখে অবয়বে চুমু ছুঁড়ে দেয়— অথবা কিঞ্চিত হিংসে মনে পুষে রেখে বলে গাড়ির ভেতর থেকে অসুখের ওরা কী বা বোঝে... তারা কেউ জানে না কিভাবে লাইফ জ্যাকেট পরে অন্ধকার উত্তাল সমুদ্র কাঁপতে কাঁপতে পাড়ি দিয়ে ভাঙা জাহাজের পাটাতন মেরামত করে ফের হাসিমুখে কফিতে চুমুক দিয়ে বলা যায়— এই, ভালো আছি৷ চকমকি আলো যে গহ্বর থেকে বেরিয়ে এসেছে কেউ তার ভেতরে ঢোকেনা৷ প্রাণঘাতী মিথেনকে ফাঁকি দিয়ে বেঁচে ওঠে যারা... হয়তো তারা সাইকেল চড়ে না, খালি পায়ে নগ্ন পিচে ভর-দুপুরে হাটে না কখনো, পাথর ভাঙার ঘাম কাকে বলে সে জানে না আজও৷  তবে যে গহ্বরে বোমা ফাটে বাইরে তার কতটা আওয়াজ পাওয়া যায়? ভাঙা ভাঙা কাঁচে যারা নিজেকে সহজ করে আকাশে উড়েছে... ডানা তুলে দেখো কত দাগ৷ এ দাগের সফরও সহজ নয় খুব৷ দেখতে বড়ো ভালো লাগে এটুকুই উপরি পাওনা৷ নাছোড়বান্দার মতো ভাঙা কাঠ ধরে যারা প

মেয়াদ

সহিষ্ণুতার পাথর  যখন ভাঙছে জলের নিচে সেদিন কাঁদলো রাত্রি প্রহর ঝরণা নামলো অতর্কিতে জলের ভীষণ রকম মেজাজ মনের নিজস্বতার তেজে আমায় ওড়ালো গন্ধরাজ বিশেষ ভালোবাসার ক্ষেতে কবে— নামতে চেয়ে ছিলাম ভীষন শূন্য ছিল যখন আদর ঝেঁটিয়ে দিল বিলাপ বুকের মাঝখানে মরিয়ম ক্ষণিক অন্ধকারের খেয়াল হঠাৎ ঝাঁপিয়ে এলে ঝোঁকে প্রেমের আকাশ সম মেয়াদ আবার ডাকছে অরণ্যকে © প্রভাত ঘোষ

চোখ

Image
যাওয়া শুধু যাওয়া নয়, ডানা হারানোর মত ক্ষোভ অসীম বিয়োগ ভেলাহীন মেঘ তুমি কিভাবে ভাসাও যত ছুঁই ততবার একটি নতুন চোখ দাও এমন'ই জগত যার প্রতি কোণে হৃদয়ের নিটোল তর্জমা তোমাকে জীবন ভেবে প্রতিবার অন্ধকারে  আঘাতকে করে গেছি ক্ষমা বারিষ যেদিন নামে  তারই মাঝে নৃত্য করে ঝেড়ে ফেলা নিশ্বাসের শোক মুছে যাওয়া হৃদয়কুহক যতই পুরোনো হও নতুন তোমার কাছে ম্লান কে যেন গোপন ঘরে ঝরণার শব্দ শোনান... © প্রভাত ঘোষ

ছাপ

এবার মরলে বেকার হব ভাতার নামে ভিক্ষা নেব বছর পাঁচেক চাকরি-বাজার লকডাউন রেশন হাতে ইঞ্জিনিয়ার এত টুকুই তার এক্তিয়ার মন্দাকালীন ভাতের ওপর অল্প নুন কলেজ শেষে ডিগ্রিধারি আন্দোলনের পাল্লা ভারি কণ্ঠ আবার হাতিয়ে নেবে কালশিটে চাষির ঘরে বউ মেলে না কাঁধের ওপর মস্ত দেনা চপের আকার আঁকবে বসে আর্কিটেক্ট যুদ্ধ পেটে ছাড়বে মাটি চাকরি সোনার পাথর বাটি বিপ্লবীদের হাজার কলম ফেসবুকে বাঁধিয়ে নেবে রাজনীতিতে বোমার ওপর শক্ত ফিতে ছাপ পড়েছে বিষাক্ত এক বস্তুতে © প্রভাত ঘোষ

যেতে যেতে

কোথাও কখনো যদি চলে যেতে চাই নীল ঘর, বারান্দা হলুদ হাড়ির ভেতরে শেষ বেঁচে থাকা দু-টুকরো খুদ যেতে যদি না দাও তখন তবু বলব শোন্ তবে শোন্  ওপাশের দীঘি বেয়ে রাত নেমে আসবে যখন পদ্মের দুলুনি এসে ঘাড় নেড়ে বলে যাবে— সে'ই ছিল এক অনাদায়ী ঋণ নিশীথ মসৃন— কখনো চাঁদের কাছে ধার নিত প্রেমের ঠিকানা কামিনীর গন্ধ শুঁকে চলে যেত জলের ভেতর সে এক সুরাহা ছিল সুরা ঢেলে দিত রাতে, মন তাকে ভেবে নিত ঘর৷ © প্রভাত ঘোষ