Posts

ফাল্গুনী অধ্যায়

যেমন স্বপ্নে রঙিন দেখা  জীবন গাছের মত একা ফুলের গন্ধ পেলে অনেক পাখিই আসে নিচে খসলে রঙের পাহাড় ক্লান্তি জোড়ের জলে ধোয়া বাতাস জীবন যোগায় বাঁচার বিশ্বাসে ছিল পায়ের কাছেই খরা চেনায় ভুল করেছি করাত ধার দিয়েছিলাম এড়িয়ে গেলেও হতো পাখি আমার মতই ডাকে একটু স্বাধীনতার ফাঁকে ফুলের মায়াও যেন জড়াতে উদ্যত আমার প্রতিটি ফাল্গুনে শাস্তি মুকুব করে খুনের পলাশ জানে নিজেই নিজের কাছে দায়ী আবার কলম চালাই ক্ষতে জীবন দেখেছি ফুরসতে দেখি রঙিন - কালো সবার অধ্যায়ই © প্রভাত ঘোষ 

কথা

ওপারের মৃত্যুপুরী, সামনে বসে বিচারক ; মুখোমুখী তুমি আর আমি। ততদিনে শুকিয়েছে সমস্ত ঘোলাটে পুকুর, হয়তো বা ফেলে আসা বছর পঞ্চাশের পর। গোনা হচ্ছে প্রতিটি দিনের হিসেব লেখা কুণ্ডলীর পুরোন  হালখাতা। মুখের স্মিত হাসিতে হয়তো গোপন হবে কিছু। কিছু দোল, কিছু গান, কিছু কালো অন্ধকার রাত তখনও স্মৃতির ভিড়ে হেঁটে আনবো বাজি ও বিজয়া।  ততদিনে পাল্টে যাবে পাশে থাকা বাড়িটির রং। কেউ হয়তো আগে কেউ পরে , অপেক্ষা সবার ঘরে টেনে আনবে ঘুমের সময়। নির্দিষ্ট সময় শেষে ক্ষয়। একবার , আরো একবার যদি এভাবেই মুখোমুখী আবার সেখানে দেখা হয়...  কারো মুখে সংকোচ, কারো চোখে অনিচ্ছার ভান। তবুও হয়তো কথা হবে বুকে রেখে ঠাকুরের বাণী... আরো এক চৌকাঠ ডিঙানো— "তুমি অধম বলিয়া আমি উত্তম হইবো না কেন" ©প্রভাত ঘোষ

কলঙ্কিত

চশমা দিয়ে আড়াল করে রাখো নিজের জরা দেখছে না, কেউ দেখছে না এই ভ্রমের বাটখারা চলতি হাওয়ার শব্দে ভাসে কলঙ্কিত গান কোরাসে আলিঙ্গনে ক্ষমা প্রভুর, থাপ্পড়ে মশকরা ৷

পক্ষপাত

ঠুনকো আওয়াজ ঝড়ের গলায়, ঘোড়লাগাম ছুটছে, বালি ছিটিয়ে ভাবে পক্ষীরাজ থামতে হতো ডঙ্কাওয়াজে, পেণ্ডুলাম দেখিয়ে দেবে শেষ সময়ের সিংহদ্বার ওই যে দূরে মাঠের শেষে খড়ের ঘর সেইখানে কে বীণ বাজালো মূর্ছণায় তলব তোমায় শিখিয়ে দেবে দ্বিপ্রহর কাঠের গলা শুকিয়ে এলে কষ্ট হয় কোনখানে শিরদাঁড়ার পয়েন্ট সব জেনেও গোপন পকেট সূঁচ ফোটালেই পক্ষাঘাত বাঁচিয়ে রাখার শর্তে শুধু দেখছে কেউ মেঘের মাথায় সূর্য এলেই বজ্রপাত হঠাৎ আলো তীব্র এলেই অবাক হয় অন্ধকারে ধুঁকতে থাকা চাষআবাদ খুড়ছে কবর অহংকারের শেষ সময় পথের কাছেই চিনতে এলাম পক্ষপাত৷ © প্রভাত ঘোষ

ছায়া

নিজের ছায়ার কাছে বসে আছি রবিবার, দুপুরের ছাদে দেখছি কিভাবে সূর্য নড়ে গেলে সরে যায় ছায়া আমাদের মায়া দূরে ঝাঁক পায়রার দল সারি বেঁধে উড়ে যাচ্ছে ঘুরপাক খেয়ে ফের ফিরে আসছে বাড়ি আমরা তার কতটুকু পারি বড়দিন, জন্মদিন সব ফিকে হয়ে আসে সময়ের পথে তবু কেউ ধরে থাকে, ব্যতিরেকে সমস্ত লাঞ্ছন আলো জ্বালে, বলে কর্নেল আউট হয়ে কত দিন বেঁচে থাকে বর্ডারের ফাঁক সময়ে ফারাক আর মায়ায় বাঁধন পাহাড়ে দিনের পর রাত নয় মৃত্যু নেমে আসে যেটুকু দিনের আলো - চেখে নাও, দেখে নাও, বেঁচে নাও প্রকৃতির ঋণে যেটুকু জীবন আছে দিনে আমরা সব সন্ধানী ডুবুরি মৃত্যু আসছে জেনেও আমরা উজ্জাপন করি। © প্রভাত ঘোষ 

রক্তাক্ত ঘুঙুর

ঘুঙুর ভেঙেছে যার, রক্ত ঝরা জমিনে ছয়লাপ বিধবার কাপড়ে ছিটিয়ে— ধুয়ে ফেললে জ্যোৎস্না আর নিংড়ে নিলেই পাপ ভুলে যায় ক্ষমাও সংলাপ শব্দের প্রকৃতি এসে জনান্তিকে দিয়ে যাও আলো চড়া রোদে দৃষ্টি দিলে কালো ফুটোয় চাঁদের আলো, চালা ঘর তবুও রঙিন ভাঙা লবঙ্গের ঝাঁঝে প্যার বিচূর্ণ লঙ্কার বুকে গোপনে লুকিয়ে থাকে মারণের বিষেলা ক্যান্সার কোথায় ধুলোর ঝড়, যেখানে ধুলোর মুঠি চোখে নিজ হাত, নিজের বিচার— ঘাড়ের উদ্দেশ্যে নিজে কুঠার ওঠাবে না কি হাত ধুয়ে সাজাবে বিহার...

ঝালরের শোক

(১) একদিন মহাকাশ নড়ে যাবে, ভূকম্পের আড়ে যে লুকিয়ে রাখা উষ্ণ প্রস্রবণ  পুড়িয়ে দিচ্ছে চামড়ায় ঢাকা জীবন্ত ঝালর— প্রাণবন্ত পাখিটির ঘর ঢুঁ মেরে লণ্ঠণের বাতি ঠেলে জ্বলে উঠল চাতালের খড় মুখোশে লুকিয়ে থাকা মিথ্যের বহর৷ শোনো শোনো ওইখানে চিৎকার দাউদাউ স্বার্থের আগুন প্রতিরোধ, প্রতিবাদ নিবারনে ধেয়ে আসে খুন৷

অন্ধকার পথে (১১)

১১) কোথায় চলেছ — যেন মনখোয়া ডিঙির নাবিক উজাড় প্রান্তর যেন ধোঁয়ার প্রতীক হয়ে ভ্রমে ভ্রমে ভুলিয়েছে দিক কাজ আছে আজ নেই, কাল আর কাল-এ ঘেরা জাল ঝুনঝুনি বাজে ওই— ওপারে দাঁড়িয়ে মহাকাল৷ পরিণত ফল হয়ে যদি কোনো চারা দিতে পারো আগামী সূর্যের মতো নাম জ্বলে উঠবে তোমারও ©প্রভাত ঘোষ

কুসুম কানন

আরও একটা গান আমি লিখব জীবনে৷ ডুবতে ডুবতে জীবনের সমস্ত হারিয়ে ফেলা নিশ্বাসের বিশ্বাসকে টেনে ধরার গান৷ অনন্তকালের সব কুয়াশার ডানা ছেঁটে ভালবাসার তীক্ষ্ণ আলোয় নিজেকে ফিরে পাবার গান৷ স্বপ্নহীন বাঁচতে চাইনি কখনোই, অন্ধকার মৃত্যুর ঢেউ এমন আছাড় মারে— জীবনের চোখ দিয়ে আঁকা যতো ক্যানভাসের রং সব পুড়ে যেতো হয়তো আগুনে৷ তখন'ই কবিতা থেকে উঠে আসে আর্তনাদী হাওয়া৷ সে হাওয়ার বুকে হাত রেখে সে'ই বলেছিল ভালোবাসি, সত্যি ভালোবাসি৷ আঘাতে আঘাতে মৃতপ্রায় এক উন্মাদের ছিন্নভিন্ন ঘর আগলে ধরে বলেছিল— এ জীবনে আরও একবার বিশ্বাসের হাত ধরে ফিরে এসো সুবিশাল মুক্ত ধরাতলে, এখন'ই জন্ম নেওয়া বনটিয়া সোনাঝুরি ডালে... তার সুরে সুরে— আধভাঙা মনে... ভালোবাসা মুক্তি পাক বসন্তের কুসুম কাননে৷  ©প্রভাত ঘোষ

অন্ধকার পথে (১)

১) দুটো পাখি জড়াজড়ি দুধ উল্টে পড়ে আছে মেনি কিছু পাতা, ঝরা ফুল, ওরা আসছে— ফাঁকা রান্নাঘর তখনো শুনিনি কার পথমধ্যে লুকানো কবর মেনি আর উঠে এসে ভেজা নাক ঘষে না জামায় পাশে প্রভু অচেতন,  অসহায়, মৃত্যু বুঝি বিভেদ করে না দ্বেষ, ঘৃণা আর প্রার্থনায়! © প্রভাত ঘোষ